বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে? জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা 

False International

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশ জুড়ে উথাল পাথাল করেছে বিক্ষোভকারিরা। দখল নিয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন ও দেশের সংসদভবন। বাংলাদেশের এই উত্তপ্ত পরিবেশের মাঝে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন হবে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। রাস্তা পাট পরিষ্কার করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে হাত জুগাচ্ছে বিক্ষোভকারির ছাত্ররাই। প্রতিবেশী দেশের এই প্রসঙ্গে একটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ভাস্কর্যকে নড়া চড়া করতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন ব্যাক্তিকে এবং অন্য এক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে রবি ঠাকুরের ভাস্কর্যের মুখে নীল রঙের টেপ বাঁধানো রয়েছে এবং হাতে থাকা গীতাঞ্জলীতে রয়েছে পেরেক বাঁধা যা থেকে ঝরছে লাল রঙের রক্ত। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ান দিবসে তার ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হল বাংলাদেশে। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”আজ 22 শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে আজ ওনার মূর্তি ভূলুণ্ঠিত বাংলাদেশে,,,,,,,, এরা নাকি আবার ছাত্রছাত্রী, মেধাবী কোটা বিরোধী আন্দোলনের মুখ সব । ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জা বাঙালি । লজ্জা ধিক্কার বাংলাদেশ,,,,,,।।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিকই বলেছিলো মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়, এখন প্রমাণ পাচ্ছি আমরা 🥹🙏 বাংলা ভাষায় কথা বললেই সবাই বাঙ্গালী হয়ে যায় না! পৃথিবীর একমাত্র মনিষী যিনি দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন। কেবলমাত্র জাতিসত্তায় সনাতনী হওয়ায় আজ তাঁর এই পরিনতি। #ছিঃ ছিঃ ধিক্কার বাংলাদেশ,,,,,লজ্জা।। “,,,,,,,,,,,কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি,,,,,,,,” একদম কথাটা আজ সত্য প্রমাণিত হচ্ছে,,,,।। #rabindranaththakur✅#ধিক্কারবাংলাদেশ✅ #বাংলাদেশ✅#ঢাকা✅#লজ্জাবাংলাদেশ✅ ।“ 

একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,”বাংলা ভাষায় কথা বললেই সবাই বাঙ্গালী হয়ে যায় না! পৃথিবীর একমাত্র মনিষী যিনি দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন। কেবলমাত্র জাতিসত্তায় সনাতনী হওয়ায় আজ তাঁর এই পরিণতি!” 

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি সম্প্রতির নয় বরং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। দেশে মুক্তচিন্তা,সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর সেন্সরশিপ এবং সব ধরনের নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ভাস্কর্য স্থাপন করেছিলেন। 

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি। দেখতে পাই, ভিডিওতে বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’র ওয়াটারমার্ক রয়েছে। এটিকে সূত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, ভাইরাল ভিডিওকে ঘিরে প্রতিবেদনটি পেয়ে যায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি,২০২৩, তারিখের এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে,”গুম হয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।“    

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সেন্সরশিপ এবং সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। বাঁশ, থার্মোকল ও বইয়ের কাগজ দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটির উচ্চতা ছিল ১৯ ফুট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)–সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাশে বসানো হয়েছিল এই ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যটি সেখানে পর আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছিল। এর প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।

একটি ভাস্কর্যের পাশে আলোচনা-অনুমোদন ছাড়া অন্য একটি ভাস্কর্য বসিয়ে দেওয়াটা শোভনীয় নয়। সেই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকেই সরানো হয়েছিল মূর্তি বলে জানিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। 

ভাস্কর্য সরানো নিয়ে প্রতিবাদ তীব্র হয়ে গেলে সেখানে আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বসানো হয়েছিল। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে বাংলাদেশে মুক্তকণ্ঠ রোধ-এর প্রতিবাদ হিসেবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুখে টেপ এবং পেরেক বিদ্ধ গীতাঞ্জলী হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যের ছবিকে বাংলাদেশে অশান্তিকর পরিবেশের আবহে শেয়ার করা হচ্ছে। 

Avatar

Title:বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে? জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *