মহিলা সেনাবাহিনী দ্বারা তাঁবু থেকে উদ্ধার করা নারীরা বাংলাদেশি বা ভারতীয় হিন্দু নারী নয়। জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা

False Social

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে একটি ভিডিও ’দি কেরালা স্টোরি’র মুভির সাথে জুড়ে শেয়ার করে দাবি হচ্ছে যে, সেনাবাহিনীর একটি দল সিরিয়ায় ISIS এর তাঁবুতে হামলা করে এবং সেখান থেকে ভারত ও বাংলাদেশের ৩৮ জন  হিন্দু যৌনদাসী নারীকে উদ্ধার করেছে। পোস্টের ৫৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন মহিলা একটি তাঁবুতে প্রবেশ করে যেখানে তারা দুই মেয়েকে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেয়েদের শিকল থেকে মুক্ত করে। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” সেনাবাহিনী সিরিয়ায় ISIS এর তাঁবুতে হামলা করেছে…, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া 38 জন যৌনদাসী হিন্দু নারীকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। যারা বিশ্বাস করেন না তাদের জন্য #𝗧𝗵𝗲𝗞𝗲𝗿𝗮𝗹𝗮𝗦𝘁𝗼𝗿𝘆 ফিল্ম এটা তার প্রমান…. মেয়েদেরকে যেভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে দেখুন….👇 “ 

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওটি ২০২২ সালের। উত্তর সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবির ’আল-হোল’ থেকে উদ্ধার করা এই নারীরা ইয়াজিদি ছিল, ভারতীয় বা বাংলাদেশি নয়।

https://www.facebook.com/100023004700971/videos/713413074127835

আর্কাইভ 

তথ্য যাচাইঃ 

পোস্টের দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কিফ্রেমে ভাগ করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, SDF PRESS নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি পেয়ে যায়। ভিডিওটি ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওর ক্যাপশনটি লেখা হয়েছে আরবি ভাষায় যার বঙ্গানুবাদ হল- YPJ আল-হোল ক্যাম্পে বন্দী চার নারীকে মুক্ত করার ভিডিও। ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওর প্রথম ২১ সেকেন্ডের পর থেকেই ভাইরাল ভিডিওর অংশটুকু দেখা যাবে। 

’দি কুর্দিশ প্রজেক্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, YPJ হল একটি ‘নারী সুরক্ষা ইউনিট’। এটি সিরিয়ার কুর্দিস্তান অঞ্চলের সশস্ত্র বাহিনীর একটি মহিলা ব্রিগেড যা আইএসআইএস থেকে তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্তে কোবানির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

আল-হোল হল উত্তর সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবির যা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের পরে ইরাকি-সিরিয়ান সীমান্তে পুনরায় চালু করা হয়েছিল। ক্যাম্পটি মূলত মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (SDF) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শিবিরের জনসংখ্যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। 

YPJ এর অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও ভাইরাল ভিডিও ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণ শেয়ার করা হয়েছে এবং ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এই ভিডিওতে আপনি দেখতে পাবেন কিভাবে YPJ বাহিনী আল-হোল ক্যাম্পে ISIS সেলের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে নারীদের মুক্ত করে। এতে ৩ জন নারীকে দেখানো হয়েছে যেখানে একটি তাঁবুতে পাওয়া গেছে যেখানে আইএসআইএস নারীরা তাদের পা বেঁধে রেখেছিল। তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।“ 

এই টুইটার চেইনের একটি টুইটে স্পষ্ট বলা হয়েছে মহিলারা শেঙ্গল শহরের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের, যা প্রধানত উত্তর ইরাক, দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, উত্তর সিরিয়া, ককেশাস অঞ্চল এবং ইরানের কিছু অংশে পাওয়া যায়।  আল-হোল ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে YPJ বাহিনী মোট ৪ জন মহিলাকে মুক্ত করেছিল। বন্দী নারিদের অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিল। উদ্ধারের পর তাকে মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওটি ২০২২ সালের। উত্তর সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবির ’আল-হোল’ থেকে উদ্ধার করা এই নারীরা ইয়াজিদি ছিল, ভারতীয় বা বাংলাদেশি নয়

Avatar

Title:মহিলা সেনাবাহিনী দ্বারা তাঁবু থেকে উদ্ধার করা নারীরা বাংলাদেশি বা ভারতীয় হিন্দু নারী নয়। জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা

Written By: Nasim Akhtar 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *