হিন্দু যুবকের মুসলিম মেয়েকে অপহরণকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার দাবিটি মিথ্যা

Communal False

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও যা একটি সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজের দৃশ্য যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি জোর করে এক মেয়েকে গাড়িতে তুলছে। সেই সময় এক পথচারী ছুটে এসে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, মেয়েটিকে অপহরণ করছিল দুই মুসলিম যুবক, আফরোজ ও ইমরান, আর তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক হিন্দু যুবক, হর্ষবর্ধন, যিনি মেয়েটিকে চিনতেন না কিন্তু সাহস দেখিয়ে তাকে রক্ষা করেন। 

ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”এটাই চিরন্তন হিন্দুর ঐতিহ্য সে একজন সত্যিকারের নায়ক…🚩💪 আফরোজ এবং ইমরান আয়েশা নামের একটি মেয়েকে অপহরণ করছিল। “হর্ষবর্ধন” নামে একটি ছেলে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই মেয়েটিকে রক্ষা করলো যাকে সে চিনতো না  🔥❤️ হর্ষবর্ধন আহত হলেও বিপদমুক্ত স্যালুট হিন্দু সিংহ 🫡।“ 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওটি চলতি বছরের জানুয়ার মাসের শ্রীলঙ্কার একটি ঘটনা। ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে কিশোরীকে অপহরণ করা হচ্ছিল।যিনি মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি হর্ষবর্ধন নন বরং ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসাদিন আরশাদ আহমেদ। 

ফেসবুক পোস্ট 

তথ্য যাচাইঃ 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, এই ভিডিওটি শ্রীলঙ্কার সংবাদ মাধ্যমে কলম্বিয়া গ্যাজেট’-এর এক্স হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। ১২ জানুয়ারি,২০২৫, তারিখের এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”শনিবার শ্রীলঙ্কার গেলিওয়া শহরে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর থেকে এক কিশোরীকে অপহরণ করা হয়, এবং সেই অপহরণের দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।“ 

এই তথ্যকে মাথায় রেখে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভাইরাল এই ভিডিও কেন্দ্রিক অনেক প্রতিবেদন পেয়ে যায়। asianmirror-এর ১৩ জানুয়ারির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে- শ্রীলঙ্কার গেলিওয়া শহরে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর থেকে এক কিশোরীকে অপহরণ করা হয় এবং সেই অপহরণের দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ভুক্তভোগী কিশোরী ও আরেক স্কুলছাত্রী রাস্তায় হাঁটছিল তখন একটি কালো ভ্যান এসে দাঁড়ায়। ভ্যানে থাকা একজন জোর করে কিশোরীকে গাড়িতে তোলে। এক পথচারী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও ভ্যানটি দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাটি পারিবারিক বিরোধের সঙ্গে জড়িত। কিশোরীর বাবা-মা তাকে এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন কিন্তু পরে সেই বাগদান বাতিল হয়ে যায়। ক্ষোভের বশে ওই চাচাতো ভাই কিশোরীকে অপহরণ করে। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

অন্য এক ভিডিও উপস্থাপন অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি ক্যান্ডির দাউলাগালা এলাকা থেকে ১৮ বছরের এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করার অভিযোগে গাম্পোলার কাহতাপিটিয়ার ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।  

শ্রীলঙ্কা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম News Wire-এর ইন্সটাগ্রাম পোস্টে অপহরণের সময় বাধাদানকারী যুবককে মহম্মদ ইজাদিন আরশাদ আহমেদ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ক্যাপশনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে- দাউলাগালায় এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য শ্রীলঙ্কা পুলিশ ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসাদিন আরশাদ আহমেদকে তার সাহসিকতার জন্য প্র

শংসা করেছে। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভিডিওর সাথে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার একটি পারিবারিক বিরোধের কারণে এক কিশোরীর অপহরণের ঘটনা। ভিডিওতে যিনি মেয়েটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন তিনি হর্ষবর্ধন নন, বরং ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসাদিন আরশাদ আহমেদ। 

Avatar

Title:হিন্দু যুবকের মুসলিম মেয়েকে অপহরণকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার দাবিটি মিথ্যা

Fact Check By: Nasim Akhtar  

Result: False

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *