
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন বিশ্বভারতী সফরে গিয়েছিলেন তখন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল হারে ভাইরাল হয়েছিল। ছবিতে দেখা গিয়েছিল অমিত শাহ একটি কেদারায় বসে আছেন। দাবি করা হয়েছিল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সেসময়ই এই দাবির তথ্য যাচাই (এখানে পড়ুন) করে আমাদের পাঠকদের কাছে এর সত্যতা প্রকাশ করে।
সম্প্রতি লোকসভায় রবীন্দ্রনাথ এবং চেয়ারের বিষয়ে অমিত শাহর বক্তব্যের পর পুনরায় এই দাবি জিইয়ে উঠেছে করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসেনি বসে জানানো হয়েছে বিশ্ব ভারতী কতৃপক্ষের তরফে।
উলেখ্য, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর অভিযোগ করেছিলেন, জানুয়ারিতে বীরভূম সফরে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত চেয়ারে বসে নোবেলজয়ীকে অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়েই অমিত যার জবাবে বলেন, অধীরের অভিযোগ ‘ভুল’। কংগ্রেস সাংসদকে বিঁধে অমিতের মন্তব্য, “উনি সঠিক তথ্য জানেন না। আমার কাছে সঠিক তথ্য রয়েছে। সত্যিটা হল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওই চেয়ারে বসেছিলেন। আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী তাঁর সোফায় বসে চা-ও পান করেছিলেন।“
তথ্য যাচাই
তথ্য যাচাইয়ের শুরুতে আমরা পোস্টের ছবিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে অমিত শাহর টুইটার অ্যাকাউন্টে এই ছবিটি দেখতে পাই। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বরের এই টুইটের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে ভারতের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুদেবের অবদান চিরকালের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাঁর চিন্তাধারা আমাদের প্রজন্মকে আগামীতে অনুপ্রাণিত করবে।“
এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘আউটলুক’র একটি প্রতিবেদনে এই ছবিটিকে দেখতে পাই। এর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবন সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দর্শনার্থী ভিজিটার্স বুকে সাক্ষর করেছেন।“
এরপর গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে জানার চেষ্টা করি যে আমিত শাহই কি প্রথম এই কেদারায় বসেছেন নাকি অতীতেও কেউ বসেছিল। ফলাফলে pmindia.gov.in এর ওয়েবসাইটে একটি ছবি দেখতে পাই যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়।
এরপর শান্তিনিকেতনের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে এই ছবিটি দেখতে পাওয়া যায়। এই টুইটের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী এবং আচার্য মোদী বিশ্বভারতীর ভিজিটার্স বুকে স্বাক্ষর করছেন।“
এরপর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতোর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, “ছবিতে যে চেয়ার দেখা যাচ্ছে সেটি হল ভিজিটার্স বুকে স্বাক্ষর করার জায়গা। যখনি কোনও ভিআইপি শান্তিনিকেতনের রবিন্দ্রভবনে আসে, তখন এই বইয়ে তার সফরের অভিজ্ঞতা লেখেন এবং স্বাক্ষর করে যান। অমিত শাহর আগেও অনেক গনমান্য ব্যক্তিত্ব এই কেদারায় বসে নিজের অভিজ্ঞিতা লিখেছেন এবং স্বাক্ষর করে গেছেন।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসেনি বসে জানানো হয়েছে বিশ্ব ভারতী কতৃপক্ষের তরফে।