আত্মহত্যার ঘটনাকে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক খুন দাবি করে ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে

False Political

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মালদার মোথাবাড়ি এলাকায় দুজন বিজেপি কর্মীকে হত্যা করেছে তৃণমূলের সমর্থকরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি দড়িতে দুজন ছেলের গলায় ফাঁস লাগানো রয়েছে। দুজনেই মৃত। আশেপাশে বেশ কিছু লোক দাড়িয়ে রয়েছে। পোস্টটিকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করা হয়েছে এবং এর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “নির্বাচন-পরবর্তী সন্ত্রাস হার মানিয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে।মোথাবাড়ির ৫২ নং বিধানসভার অন্তর্গত উত্তর লক্ষীপুর জিপি, কালাচাঁদ টোলা গ্রামে মনোজ মন্ডল (২১) ও চৈতন্য মন্ডলকে (১৯) হত্যা করল তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী। বাংলার দিকে দিকে শোনা যাচ্ছে শুধুই অসহায় মায়ের বুক ফাটা ক্রন্দন।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো। আত্মহত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক রং চড়িয়ে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

ফেসবুক আর্কাইভ

উল্লেখ্য, ২ মে বাংলার বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর শোনা যাচ্ছে। কোথাও বোমাবাজি, কোথাও দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া আবার কোথাও বা ধর্ষণ করে খুন, এজাতীয় দাবির সাথে পোস্ট, ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যার মধ্যে কিছু সত্য কিন্তু বেশিরভাগই ভুয়ো। এর আগে রাজ্য থেকে জাতীয় বিজেপি নেতারা একটি অপ্রাসঙ্গিক ছবি শেয়ার করে দাবি করে, বিজেপি সমর্থক হওয়ায় বীরভূমে একজন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। আমরা বীরভূমের পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে প্রমাণ করি ওই দাবি ভুয়ো। পড়ুন আমাদের তথ্য যাচাই।  

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলাফলে যথাযথ কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। এরপর আমরা মালদা সাইবার ক্রাইম বিভাগের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের তরফে জানানো হয় এই দাবি ভুয়ো। এটি আত্মহত্যার ঘটনা, সাথে রাজনৈতিক খুনের কোনও যোগ নেই। পুলিশ জানায়, মালদা সাইবার ক্রাইমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট করে স্পষ্ট করা হয়েছে এই দাবি ভুয়ো। 

সাইবার ক্রাইম বিভাকের ওই ফেসবুক পোস্ট আমরা খুঁজে পাই। পোস্টের ক্যাপশনে ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে, “এই পোস্টটিকে নির্বাচনের পরের সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে যা একেবারেই সত্য নয়। মোথাবাড়ির বাসিন্দা এই দুই মৃতের পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, গত কয়েকমাস ধরে এই দুজন এক অনলাইন গেমের নেশায় আসক্ত ছিল। বাড়ির অভিভাবকরা এই বিষয়ে বকাবকি এবং সতর্ক করে। এরপরেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই ঘটনার সাথে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ বা কোনও সাম্প্রদায়িক দিকে নেই। যদি কাউকে এই জাতীয় পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায় তবে করা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“  

আর্কাইভ

এরপর আমরা মোথাবাড়ি থানার সাথে যোগাযোগ করে। পুলিশের তরফে আমাদের জানানো হয়, “সোশ্যাল মিডিয়ার দাবি একেবারেই ভুয়ো। মৃত ওই দুজন ছেলের বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে জনাতে পারি আগের দিন বিকেলে এক দোকান থেকে গিয়ে দড়ি কিনে নিয়ে আসে ওই দুই যুবক। পুলিশ ওই দোকানদারের সাথে কথা বলে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হ্যাঁ ওই দুজন আগের দিন বিকেলে দড়ি কিনে নিয়ে গিয়েছিল। দেহ দুটিকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। হাতে রিপোর্ট আসতে একদিন সময় লাগবে কিন্তু ডাক্তার ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। এটি হত্যা নয় এবং এর সাথে কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও যোগ নেই। আত্মহত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগিয়ে সব ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে।“ 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। আত্মহত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক রং চড়িয়ে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:আত্মহত্যার ঘটনাকে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক খুন দাবি করে ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে

Fact Check By: Rahul A 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *