
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি সেটিকে রামপুরহাট কাণ্ডের দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি জায়গায় আহত কয়েকজনকে রাখা রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে, “যারা কাশ্মীর দেখেনি তারা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে। তৃণমূল নেতার হত্যার পর রামপুরহাটের ১২টি ঘরবাড়ি তালা বন্ধ করে জালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। ২০২০ সালের ওড়িশার একটি বাস দুর্ঘটনার দৃশ্যকে রামপুরহাট কাণ্ড দাবি করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ বীরভূম জেলার বাগটুই গ্রামের একটি অগ্নিকাণ্ডে ৬ জন মহিলা এবং দুজন শিশুর মৃত্যু হয়। ওই এলাকায় তৃণমূল উপ-প্রধানের হত্যার পর এই ঘটনাটি ঘটে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানে ৭টি দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে আমরা ভাইরাল ভিডিওটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। ভিডিওতে মাটিতে রাখা আহতদের পাশে একটি বাস দেখতে পাই। বাসের ওপর লেখা রয়েছে ‘https://www.djgaddi.in/’।

এরপর এই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করে ‘DJ Gaddi’ বাস সার্ভিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুঁজে পাই। জানতে পারি, এটি ওড়িশা রাজ্যের একটি বাস সার্ভিস যারা ডিজিটাল ওড়িশা গড়ার পথে কাজ করছে। ওয়েবসাইটে ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে, “আমাদের পরিষেবা শুধুমাত্র ওড়িশা রাজ্যেই উপলব্ধ এবং আমরা কথা দিচ্ছি যত দিন সূর্য ও চাঁদ রয়েছে ততদিন সর্বনিম্ন মূল্যে সবচেয়ে ভালো পরিষেবা প্রদান করব।”
এই ওয়েবসাইট থেকে সূত্র নিয়ে ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলাফলে ওড়িয়া সংবাদমাধ্যম ‘কনক নিউজ’-এর ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত একটি উপস্থাপনায় এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওর শীর্ষকে লেখা রয়েছে, “বেরহামপুরে 11KV তারের সংস্পর্শে বাসে আগুন ধরে যায়।”
সংবাদমাধ্যম ‘ওড়িশা টিভি’-এর ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি নিউজ রিপোর্ট থেকেও একই খবর জানা যায়। এই ভিডিও অনুযায়ী, গঞ্জাম বাস দুরঘত্নায় ৫ জনের মৃত্যু হয় এবং কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়।
সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় 11KV বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩৫ জন আহত হয়।”
এই ঘটনায় পুলিশ জানায়, “জঙ্গলপাড়ু থেকে চিকারদাগামী বাসটি 11KV পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের সংস্পর্শে আসে। এরপর তাতে আগুন ধরে যায় যার ফলে যাত্রীদের মৃত্যু এবং অনেকে আহত হয়।”
এই ঘটনায় আহতদের বেরহামপুরের এমকেসিজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংবাদ সংস্থা ‘এএনআই’ এই একই ঘটনা কেন্দ্রিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, “গঞ্জাম জেলায় 11KV লাইভ বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসার একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনায় অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৪০ জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের বেরহামপুরের এমকেসিজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০২০ সালের ওড়িশার একটি বাস দুর্ঘটনার দৃশ্যকে রামপুরহাট কাণ্ড দাবি করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।

Title:ওড়িশার বাস দুর্ঘটনার ভিডিওকে রামপুরহাট হিংসা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার
Fact Check By: Nasim AResult: False