সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে রাজস্থানের কিছু যুবক কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে সেখানে পাকিস্তানের সমর্থনে ও ভারত মুর্দাবাদ স্লোগান দেওয়াই ভারতীয় জওয়ানরা তাদেরকে মারধর করছে এবং ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত ’জন গন মন’ গাইতে বাধ্য করছেন। পোস্টের ভিডিওতে গুরুতরভাবে আহত পাঁচজন যুবককে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে এবং পুলিশ কর্মীরা তাদেরকে বন্দে মাতরম ও জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করছেন।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “রাজস্থানী কিছু লোক কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে, পাকিস্তানি জয়ধ্বনি আর ভারতবর্ষের নামে মুর্দাবাদ বলছিল। ভারতবর্ষের আর্মির হাতে ধরা পড়ে, কিছু উদ্যোগ-মধ্যম খেয়ে ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত গাইছে দেখুন সবাই।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওটি ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা সময়ের।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কি ফ্রেমে ভাগ করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করতেই মুখ্যধারার বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভাইরাল এই ভিডিও কেন্দ্রিক প্রতিবেদন পেয়ে যায়। ’মুম্বাই মিরর’-এর ২৯ ফেব্রুয়ারি,২০২০, তারিখের প্রতিবেদনে মারধরের এই ঘটনাটিকে দিল্লি দাঙ্গার সময়ের বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনামে লেখা হয়েছে,” দিল্লি দাঙ্গা ২০২০: দিল্লি পুলিশ কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করা যুবক রক্তাক্ত হয়ে মারা যায়।“

প্রতিবেদন আর্কাইভ

একই তথ্য সহ ’টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র একটি টুইটও পাওয়া যায়। মারধরের এই ঘটনাটি ঘটেছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, তারিখের বিকেল ৫:৪৫ মিনিটে শাহদারার কর্দম পুরী লোকালয়ের কৃষ্ণ মার্গ বাস স্টপের কাছে।

মারধরের শিকার পাঁচজন যুবকের মধ্যে তিনজনের নাম হল- ফাইজান, কাউশার আলি ও রাফিক। মারধরের এই ঘটনার পর ফাইজান নামের যুবককে দুই দিনের জন্য থানায় রেখেছিল দিল্লি পুলিশ। এই আহত অবস্থাতেও তার কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি পুলিশ বলে অভিযোগ ফাইজানের পরিবারের। পরে তাকে তার পরিবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একদিন পর তার মৃত্যু হয়েছিল। তার মা কিসমাতুন অভিযোগ করেছেন যে দিল্লি পুলিশের নির্মম মারধরের পরে চিকিৎসা না পাওয়ায় ফাইজানের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যান্য সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

আরও বিস্তারিত জানতে নীচের ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুনঃ

পাকিস্তানপন্থী ও ভারত ভারত বিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং তা ঘিরে মারধর, সম্প্রতি কাশ্মীরে এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে কি ?

গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনেই সম্প্রতি এরকম কোনো ঘটনার উল্লেখ পাইনি। এই থেকে আমরা উপনিত হই যে, সম্প্রতি কাশ্মীরে পাকিস্তানপন্থী ও ভারত বিরোধী স্লোগান ঘিরে কোন ঘটনা ঘটেনি।

তথ্য ও প্রমানের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক কালের নয় বরং ৩ বছর পুরনো। ২০২০ দিল্লি দাঙ্গার সময়ে পুলিশ কর্তৃক পাঁচ যুবকে নির্মমভাবে মারধর এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। ২০২০ দিল্লি দাঙ্গার সময়ে পুলিশ কর্তৃক পাঁচ যুবকে নির্মমভাবে মারধর এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Avatar

Title:পাকিস্তানপন্থী ও ভারত বিরোধী স্লোগান দেওয়াই যুবকদের মারধর করছে পুলিশ ? জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা

Written By: Nasim Akhtar

Result: False