সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ঢাকার আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার পদত্যাগ করোনার জন্য শিক্ষিকাকে রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। পোস্টের এই ভিডিওতে একটি স্থির চিত্র রয়েছে যেখানে একজন মেয়েকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রেখে তাকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো মেয়ে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে মিউজিক।

ভাইরাল এই ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”ঢাকার আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার পদত্যাগ করানোর জন্য শিক্ষিকাকে রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ । একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে তাকে ছাত্রীদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য-গীতাঞ্জলির বাবা প্রফেসর রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের পালি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিল।ওনার মা প্রফেসর সুনন্দা বড়ুয়া শিক্ষিকা ছিলেন। কেউ বেঁচে নেই পৃথিবীতে ওনার মা বাবা,ওনিও বৃদ্ধ বয়স্ক অবস্থায়। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি!! ২০২৪ সালের স্বাধীনতা উপভোগ করছি।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি দাবিটি বিভ্রান্তিকর। গাছের সাথে বেঁধে রাখা মহিলা আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়া নয়।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, আজকের পত্রিকার সংবাদ উপস্থাপন থেকে জানতে পারি, আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ দুইজন শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবি করে অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সেই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাব্যস্ত করতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। তখন আন্দোলনরত ছাত্রীরা একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন।

দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়া এবং আরও কয়েকজন কর্মচারীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ উপস্থাপন বা প্রতিবেদনগুলোর কোথাও গাছে বেঁধে রাখা মহিলাকে আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বলে জানায়নি, বরং তাকে বহিরাগত প্রাক্তনী বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া, বেঁধে রাখা মহিলার ছবি ও অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার ছবির তুলনামূলক ফ্রেম থেকে স্পষ্ট লক্ষ্যনিয় যে তিনি গীতাঞ্জলি বড়ুয়া নন।

অন্য এক সংবাদ উপস্থাপনে বহিরাগত মহিলারা নিজেদেরকে সেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তা খণ্ডন করেন এবং ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের দাবিটিকে মিথ্যা বলে স্পষ্ট করেছেন যে, গাছে বেঁধে রাখা মহিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলী বড়ুয়া নয়। ফেসবুক পোস্টের দাবিকে খণ্ডন করে আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানানো হয়েছে,”কিছু মানুষ স্কুলের নামে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। শুধু তাই না কেউ কেউ তো হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,গাছের সাথে বেঁধে রাখা মানুষটা গীতাঞ্জলি বড়ুয়া না। স্কুলের কোনো শিক্ষক ও না। উনি নিজেকে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়(এইটার কোনো প্রমান ও পাওয়া যায় নি)। তখন উত্তেজিত ছাত্রীরা ওনাকে বেঁধে রাখে।(আমরা কোনো মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে রাখাও সমর্থন করছি না) ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। সবাইকে অনুরোধ করবো গুজব ছড়াবেন না। প্রতিটা শিক্ষক আমাদের জন্য সমান। ওনাদের অসম্মান কখনোই আমাদের কাম্য না।“

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলী বড়ুয়াকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ছবিতে দেখতে পাওয়া গাছের সাথে বেঁধে রাখা মহিলা গীতাঞ্জলী বড়ুয়া নন।

Avatar

Title:গাছে বেঁধে রাখা মহিলা অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়া নন

Written By: Nasim A

Result: False