
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে বহু শ্রমিককে আটক করার ঘটনা বর্তমানে বেশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি, ২২৭ জন বাঙালি শ্রমিককে ভুলভাবে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করার পর, কলকাতা হাই কোর্ট ওডিশা সরকারকে একটি হলফনামা (অ্যাফিডেভিট) দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে। দিল্লি পুলিশ ১৩ দিনব্যাপী বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করে। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের ৮ মে আসাম পুলিশের কাচার জেলার জালালপুর এলাকায় স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নারী ও শিশুসহ একটি দলকে আটক করা হয়।
এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে, একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে, যাতে দাবি করা হয়েছে এটি আসামে আটক বাংলাদেশিদের দৃশ্য। ২৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি একটি সিলিং থেকে এক ব্যক্তিকে আরেক ব্যক্তি নিচে নামিয়ে আনছেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” আসাম পুলিশ ঘরের ভিতর বাঁশের তৈরি সিলিং এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করছে। ভারতের উচিত এই কাংলুদের মাঝ সমুদ্রে নিক্ষেপ করা।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি মিথ্যা। মুম্বাই পুলিশের একটি অভিযানে আসামের মোরিগাঁওয়ে সাইবার অপরাধীদের গ্রেফতারের একটি ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, হুবহু এই ভিডিওটি ‘NKTV’-এর ফেসবুক পেজে পেয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল,২০২৫ তারিখে করা এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”পুলিশকে এড়াতে ছাদে লুকিয়ে ছিল তারা। তবে রাতের অভিযানে ছাদ থেকে মাথা নিচু করে একে একে ৫ জন সাইবার অপরাধীকে আটক করা হয়। মুম্বাই সিটি সাইবার সেল মরিগাঁও পুলিশের সহায়তায় এই অভিযান পরিচালনা করে।“
https://www.facebook.com/reel/675709045435888
‘Northeast Live’ নামক সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুক পেজ থেকেও এই ভিডিওটি ১৭ এপ্রিলে পোস্ট করা মিলে। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”কি লুকানোর ঠাই! সাইবার অপরাধীর ছাদের আস্তানা ধরে ফেলল পুলিশ।“
উপরোক্ত তথ্য থেকে ধারনা হয় যে, ভিডিওর ব্যক্তি সাইবার অপরাধী। মুম্বাই পুলিশ পরিচালিত এই অভিযান চালানো হয়েছিল আসামের মরিগাঁও জেলায়। এই তথ্যকে মাথায় রেখে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই ভিডিওকে ‘ইন্ডিয়া টুডে’র একটি সংবাদ সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ১৭ এপ্রিল,২০২৫, তারিখের এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে,”মুম্বাই পুলিশ আসামের মোরিগাঁওয়ে সাইবার অপরাধ দমনে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।“
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল, আসামের মোরিগাঁও জেলার লাহোরীগড় এলাকায় মুম্বাই পুলিশের সাইবার সেল এবং মোরিগাঁও জেলা পুলিশের যৌথ রাতভর অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে মুম্বাই সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের পাঁচ সদস্যের বিশেষ টিম, মোরিগাঁও জেলার পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি সন্দেহভাজন সাইবার অপরাধ চক্রকে টার্গেট করা হয়। অভিযানে পাঁচজন সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের চোখ এড়াতে ছাদের আস্তানায় লুকানোর চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে যায়।
গ্রেফতার হওয়ার পাঁচ অপরাধীদের নাম হল- মোহেব্বুর রহমান, আজারুল ইসলাম, ইলিয়াস আহমেদ, আবু বকর সিদ্দিক ও মোহিমুদ্দিন আহমেদ। হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে এই পাঁচ অপরাধী আসামের বাসিন্দা। আরও পড়ুন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদন,
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আসামে আটক বাংলাদেশিদের বলে শেয়ার করা ভিডিওর দাবিটি মিথ্যা। আসলে এই ভিডিওটি মুম্বাই পুলিশের একটি অভিযানের অংশ যেখানে তারা আসামের মোরিগাঁওয়ে সাইবার অপরাধীদের গ্রেফতার করেছিল।

Title:আসামের মোরিগাঁওয়ে সাইবার অপরাধীকে আটকের পুরনো ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False