
বাংলাদেশে চলমান ধর্মীয় উত্তেজনাকে ঘিরে তৈরি পরিস্থিতির মাঝে সম্প্রতি যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওতে মুসলিম ব্যাক্তিরা হিন্দু নারীদের উপর নির্যাতন করছেন। ভিডিওতে দুইজন মধ্য বয়স্ক ব্যাক্তিকে দুই তিনজন মহিলাকে বাঁশ দিয়ে মারতে দেখা যাচ্ছে। এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি। এক পর্যায়ে মহিলা মাটিতে লুটিয়ে পরলেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। বাঁশের আঘাতে ভুক্তভোগীদের হাত পায়ে চোটের নিশান দেখানো হয়েছে স্পষ্ট ভাবে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে হিন্দু নারীদের হত্যার চেষ্টা করছে!!Radical fundamentalists of Bangladesh are openly trying to kill Hindu women!!”
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা ভাইরাল দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে পেয়েছি। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে নারী নির্যাতনের পুরনো ভিডিওকে ধর্মীয় আবরনের জড়িয়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
https://archive.org/details/women-assaulted-in-bangladesh
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটিকে পর্যবেক্ষণ করি। ভিডিওর প্রথমেই ‘প্রথম আলো’ এবং ভিডিওর মাঝে ‘ড়াকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতন’ এবং ‘বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’ জাতীয় লেখা থেকে অনুমান হয় যে এটি বাংলাদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র ভিডিও উপস্থাপন।
উপরোক্ত তথ্য মাথায় রেখে ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ আমাদের ‘প্রথম আলো’র চ্যানেলের একটি ভিডিওর কাছে নিয়ে যায়। ৩ জুন,২০২২, তারিখে আপলোড করা এই ভিডিওর শিরোনামে লেখা হয়েছে,”জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের অভিযোগ | Women Abuse।“ এবং বিবরণীতে লেখা হয়েছে,”সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ। ভুক্তভোগী নারীরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।“
গণমাধ্যম ‘সংবাদ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলাকারীরা হলেন তৌহিদুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন। তারা এলাকার প্রভাবশালী আমিনুল হকের ছেলে। অপরদিকে ভুক্তভোগী তিন নারী হলেন- যোগেন্দ্র দাসের স্ত্রী রানী দাস (৩০), মিলন চন্দ্র দাসের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দাস (৩২) ও কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের স্ত্রী রিমা রানী দাস (২৭)। তৌহিদুল ইসলাম (৩২), আলমগীর হোসেন (৩৫) ও আমিনুল হকের (৫৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন রিমা রানী দাস।
অনেকদিন থেকেই হামলাকারীরা ক্ষতিগ্রস্তদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ২ জুন পুরুষদের অনুপস্থিতিতে, তৌহিদুল এবং আলমগীর আবার জমি দখলের চেষ্টা করে, যার ফলে ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো ঘটনাটি ঘটে।
প্রতিবেদন | আর্কাইভ |
ঢাকা ট্রিবিউন, khoborbangla24 সহ অন্যান্য প্রতিবেদনেও জানানো হয়েছে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নারী নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটেছিলো।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ভিডিওতে প্রদর্শিত নারী নির্যাতনের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক কোণ নেই। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে দুই জন পুরুষ কর্তৃক তিনজন নারীকে অমানুষিক মারধরের পুরনো ভিডিওকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:বাংলাদেশে জমি বিবাদের জেরে নারী নির্যাতনের পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রদায়িক রঙে শেয়ার
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False