আরজেডি সুপ্রিমোর পরিবার নিয়ে করা রেখা গুপ্তার ভাষণের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার

Altered Political

দিল্লী মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার ভাষণের একটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিশাল ভাইরাল হচ্ছে। ভাষণে তিনি বলছেন,”আরে, যে নিজের পরিবারও সামলাতে পারে না সে কীভাবে বিহার সামলাবে? নিজের পরিবার সামলাতে পারল না, সামলাতে পারবে না, তাই বিহারের দায়িত্ব শক্তিশালী হাতে দেওয়া উচিত।“  ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে রেখা গুপ্তার এই মন্তব্যটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশ্যে। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”যে নিজের পরিবারকে সামলাতে পারলো না সে বিহারকে কিভাবে সামলাবেন? বক্তা দিল্লির মুর্খমন্ত্রী Rekha Gupta এই কথা শুনে আমাদের সাহেব মানে Narendra Modiকে কতটা খারাপ লেগেছে 🤣🤣।“

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি রেখা গুপ্তার ভাষণটি প্রধানমন্ত্রী মোদী বা তার পরিবারকে নিয়ে নয়, লালু পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। 

ফেসবুক পোস্ট 

তথ্য যাচাইঃ 

ভিডিওতে থাকা ‘নবভারত টাইমস’-এর লোগোকে সুত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ এবং কি ফ্রেম সার্চ করি। পুরো ভাষণের ভিডিওটি নবভারত টাইমসের ইউটিউব চ্যানেলে ১৫ অক্টোবর ২০২৫-এ আপলোড করা হয়েছে। তিনি বিহার শরীফে ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। 

৩;২৭;৩৭ সেকেন্ডের এই দীর্ঘ ভিডিওর ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের পর্যন্ত রেখা গুপ্তা বিহারে এনডিএ সরকারের করা উন্নয়নমূলক কাজের বর্ণনা দেন। রেখা গুপ্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বলেন,“নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিহারকে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে। মোদীজির কত বড় কাজ হয়েছে। বিহার যা দীর্ঘদিন অন্ধকারে ছিল, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বিশৃঙ্খলা ও অপরাধের মধ্যে আটকে, ভীত ও দমনাত্মক ছিল, সেটিকে মোদীজি হাত ধরে বাইরে এনেছেন। নীতিশজি সহায়তা করেছেন। আজ বিহারের যুবক, বিহারের মহিলা, আমার বিহারের ভাই শক্তিশালী অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।“ 

এনডিএ-এর সমর্থনে রেখা গুপ্তা আরও বলেন,”এটাই সেই দল, সেই মানুষরা যারা দুর্নীতি করে না, নিজের উপর মন দেয় না, নিজের পরিবার নিয়ে চিন্তা করে না। তারা কেবল জনতার চিন্তা করে। দরিদ্র মানুষের কাজ করে। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ায়।“ 

এরপর, ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটে ভাইরাল ভিডিওর অংশটি আসে, যেখানে রেখা গুপ্তা বলেন,“আরে, যে নিজের পরিবারও সামলাতে পারে না, সে কীভাবে বিহার সামলাবে? নিজের পরিবার সামলাতে পারল না, সামলাতে পারবে না, তাই বিহারের দায়িত্ব শক্তিশালী হাতে দেওয়া উচিত, সেই শক্তিশালী হাতে যারা বহু বছর ধরে আপনার খেয়াল রেখেছে এবং বহু বছর ধরে আপনার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।“ 

এখান থেকে সহজেই বোঝা যায় যে রেখা গুপ্তার ভাষণে পরিবার সামলানোর উদাহরণটি রাজনৈতিক আক্রমণ হিসেবে লালু পরিবারের উদ্দেশ্যে ছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য নয়। 

একইভাবে, আমরা এএনআই-এর ইউটিউব চ্যানেলে সমাবেশের দীর্ঘ ভিডিওটি পাওয়া যায়। যা ১৫ অক্টোবর ২০২৫-এ লাইভ করা হয়। ভিডিওটির ২৯:৫৯ মিনিট থেকে ৩৬:৫০ মিনিট পর্যন্ত অংশটি শুনলে স্পষ্ট হয় যে রেখা গুপ্তা তার ভাষণে লালু প্রসাদ যাদবের দল রাজদকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করছেন। 

লালু পরিবারের মধ্যে কলহঃ 

এইবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লালু পরিবারের মধ্যে চলা কলহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তোলপাড় করছে। মে ২০২৫-এ আরজেডি সভাপতি লালু প্রসাদ যাদব তাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবকে একটি ফেসবুক পোস্টের পর ৬ বছরের জন্য পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর রাজদে নেতৃত্ব ও সঞ্জয় যাদবের বাড়তে থাকা প্রভাবকে নিয়ে লালুর মেয়ে রোহিণী আচার্যও তার অসন্তোষ ও অমত প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, তেজ প্রতাপ তার পার্টি জনশক্তি জনতা দল তৈরি করে বিহারের নির্বাচনী মাঠে নামেন। তেজ প্রতাপ বৈশালী জেলার মহুয়া সীট থেকে প্রার্থী হিসেবে নাম দাখিল করলে, তেজস্বী ভাইয়ের প্রতি আগ্রহ না দেখিয়ে সেই সীট থেকে রাজদর প্রার্থী মুকেশ কুমার রোশনকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামান। এছাড়াও, তেজ প্রতাপের বিদ্রোহের মধ্যে তেজস্বী বড় কৌশল খেলেন তেজ প্রতাপের চাচের বোন ডঃ করিশ্মা রায়কে পারসা বিধানসভা সীট থেকে টিকিট দেন, যা লালু পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা লালু পরিবারের ভেতরের মতবিরোধকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ চালাচ্ছে। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, রেখা গুপ্তার ভাইরাল ভিডিও যেখানে তিনি “যে নিজের পরিবার সামলাতে পারে না, সে কীভাবে বিহার সামলাবে” বলছেন, তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য নয় বরং লালু পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। 

Avatar

Title:আরজেডি সুপ্রিমোর পরিবার নিয়ে করা রেখা গুপ্তার ভাষণের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: Altered

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *