
সম্প্রতি ১ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ধর্মীয় রঙে শেয়ার করা হচ্ছে যেখানে এক ব্যাক্তি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা বাইকের সিট কভার কাটছে এবং একটু পরেই এক চার চাকা গাড়ির হাওয়া ফেলছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওটি দেরাদুনের এবং ভিডিওর ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ জুনায়েদ। নিজের দোকানের বিক্রি বাড়াতে দোকানের থেকে একটু দুরেই দাড়িয়ে থাকা গাড়ির নাজেহাল অবস্থা করছে সে।
ভিদিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”শান্তির ছেলের নিঞ্জা টেকনিক… দেরাদুনে রাস্তার ধারে পার্ক করা গাড়িগুলোর সিট কভার ও সিট ব্লেড ছিঁড়ে দেয় মোহাম্মদ জুনায়েদ। কারণ কিছু দূর এগিয়ে জুনায়েদের সিট কভারের দোকান, নিজের দোকানের বিক্রি বাড়াতে এই নতুন উপায় বের করেছিল।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি ভিডিওটি দেরাদুনের ঠিকই কিন্তু ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ জুনায়েদ নয় বরং তার নাম ধীরাজ আগারওয়াল যিনি তার কোচিং সেন্টারের সামনে গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি। ফলে, যে বাইক গুলোর সিট কভার কাটা হচ্ছে সেগুলোর নাম্বার প্লেটে ‘ইউকে’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। যা থেকে ধারনা হয় যে ভিডিওটি উত্তরখান্ডের।
ভিডিওতে ‘Uttarakhand Exclusive’-এর লোগো দেখা যায়।
তারপর আমরা একই রকমের লোগোযুক্ত ‘Uttarakhand Exclusive’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল পেয়ে যায়। এই প্রোফাইলে ফেসবুক পোস্টের এই ভিডিওটি পাওয়া যায়না। তারপর আমরা এই প্রোফাইল-এর অ্যাডমিন দেরাদুনে কর্মরত সাংবাদিক গৌরব বাসুদেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান- এই ভিডিওটি আমি ৬ আগস্ট, ২০২৪, তারিখে আমার পেজ থেকে আপলোড করেছিলাম এবং প্রায় ৫ দিন আগে এটি ডিলিট করেছি। ভাইরাল ভিডিওতে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক দাবির বিষয়টি গৌরব অস্বীকার করেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি হলেন ধীরাজ আগরওয়াল যিনি আসলে দেরাদুনের ডোভাবাল চক এলাকায় তার কোচিং সেন্টার চালান। কোচিং সেন্টারের সামনে পার্কিং সমস্যার কারণে তিনি শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন।
গৌরবের মাধ্যমে আমরা কোচিং পরিচালনাকারী ধীরাজ আগরওয়ালের নম্বর পেয়েছি এবং তার সাথে যোগাযোগ করেছি। ধীরাজ ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডোকে ভাইরাল দাবির খণ্ডন করে পুরো তথ্য সরবরাহ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ধীরজ আগরওয়াল একজন আইআইটিয়ান এবং তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তার কোচিং সেন্টারের নাম ‘ম্যাথস ওয়ালা’ যা দেরাদুনের ডোভাবাল নগরে অবস্থিত। এখানে ছাত্রছাত্রীরা আইআইটি-জেইই প্রস্তুতির জন্য আসে। ভাইরাল ভিডিওটি ৫ আগস্ট ২০২৪-এর যখন তিনি তার কোচিং সেন্টারের সামনে পার্কিং সমস্যার কারণে খুবই বিরক্ত ছিলেন।
তার মতে, তার কোচিংয়ে পড়তে আসা ছাত্রদের এই পার্কিং এর কারণে অসুবিধা হচ্ছিল। প্রথমে তিনি পার্কিং না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু যখন এতে কোনো সমাধান হয়নি তখন তিনি বাধ্য হয়ে শিক্ষামূলক পদক্ষেপ নেন। পরে তিনি জানান, এই সময়ে কেউ ভিডিওটি তৈরি করে ভাইরাল করে দেয়। তবে আমি পরের দিনই ওই সব গাড়ির সিট কভার লাগিয়ে দিয়েছিলাম। এই ঘটনার সময় পুলিশ আমাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এবং পরবর্তীতে আমাকে চ্যালান করে এমন কিছু আর না করার সতর্কতা দিয়েছিল।
ধীরাজোর মতে, এই ভিডিওটি আগেও ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু এখন কিছুদিন ধরে তার ভিডিওটি মোহাম্মদ জুনায়েদের নামে ভুয়া সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে ভাইরাল করা হচ্ছে। ধীরাজ আগরওয়াল এই ঘটনার জন্য ভুয়া আইডি ব্যবহার করে তার ভিডিওকে ভুলভাবে ভাইরাল করার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও করেছিলেন। এই বিষয়ে তিনি সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং উত্তরাখণ্ড পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
ধীরাজ ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডোকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন যেখানে তিনি পুরো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছেন।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো রাইপুর থানার সিও সদর অনিল জোশীর সঙ্গেও করে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,”এই ভিডিওটি অনেক পুরনো এবং ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি হলেন গণিত শিক্ষক ধীরাজ আগরওয়াল। তিনি নেহরুগ্রামে তার কোচিং সেন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর কারণে বিরক্ত হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ভিডিওটি ভুয়া সাম্প্রদায়িক রূপে ভাইরাল হয়েছে এবং এতে কোনো ধর্মীয় সংযোগ নেই।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তি মোহাম্মদ জুনায়েদ নয় বরং ধীরাজ আগরওয়াল। তিনি তার কোচিং সেন্টারের সামনে পার্কিং সমস্যার কারণে গাড়ির সিট কভার কেটে এবং টায়ার পাংচার করেছিলেন। তবে পরে তিনি সেই গাড়িগুলো মেরামতও করিয়েছিলেন। ধীরাজের সেই ভিডিওটিকেই ভুয়া সাম্প্রদায়িক দাবি দিয়ে ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:দেরাদুনের রাস্তায় ব্লেড দিয়ে বাইকের সিট কভার কাটার ভিডিওর ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ জুনায়েদ নয় বরং ধীরাজ আগারয়াল
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False