বাংলাদেশ পুলিশ দীপু চন্দ্র দাসকে জনতার হাতে তুলে দিচ্ছে? জানুন ভিডিওর সত্যতা 

False International

নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিমূলক মন্তব্যের গুজবকে কেন্দ্র করে দিপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে পিটিয়ে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ভারতসহ সারা বিশ্ব। এই অমানবিক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এরপর থেকেই সারা ভারতজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই প্রেক্ষিতেই এক যুবকের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির একটি ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে দিপু চন্দ্র দাসের শেষ ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই-তিনজন পুলিশকর্মী এক যুবককে ঘিরে নিয়ে যাচ্ছেন। আতঙ্কিত কণ্ঠে ওই যুবক ক্ষমা চাইছেন। একজন পুলিশ তাকে সেখানে আসার কারণ জানতে চাইলে যুবক ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”মৃত্যুর আগে দীপু চন্দ্র দাসের শেষ ভিডিওটি সামনে এসেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দীপু চন্দ্র দাসকে হাজার হাজার বর্বর ও নৃশংস মানুষের একটি ভিড়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন। দীপু চন্দ্র দাস কাঁদতে কাঁদতে বলছে যে সে কোনো ভুল করেনি এবং তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এরপর সে ক্ষমা চেয়ে বলে, “যদি কোনো ভুল করে থাকি, তবে আমাকে ক্ষমা করে দিন।” এতৎসত্ত্বেও পুলিশ অফিসার তাকে হিংস্র জনতার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, “এই নাও, একে নিয়ে মা_রো।”

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি ভিডিওটি দিপু চন্দ্র দাস হত্যা মামলার সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওর যুবকের নাম আব্দুল মোমিন। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে। 

ফেসবুক পোস্ট 

তথ্য যাচাইঃ 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, এই একই ভিডিওটি Bhorer Kagoj Live’- নামক ইউটিউব চ্যানেলে পেয়ে যায়। ভিডিওটি ১৮ নভেম্বর,২০২৫, তারিখে আপলোড করা হয়েছে এবং শিরোনামে লেখা হয়েছে,”কি হয়েছিলো ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থীর সাথে?।“ 

আমরা জানি যে, দিপু চন্দ্র দাস নামের হিন্দু যুবককে পিটিয়ে অগ্নিদহ করার ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ ডিসেম্বর,২০২৫, তারিখে। যা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভিডিওটি দিপু চন্দ্র দাস-এর ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয়। 

উপরোক্ত ভিডিওতে যুবকের গায়ে থাকা জার্সিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো এবং নাম ‘মোমিন’ লেখা রয়েছে। অন্য এক ভিডিওতে সেই যুবক সংবাদ মাধ্যমকে জানাচ্ছেন তার নাম আব্দুল মোমিন। সংবাদ উপস্থাপক জানাচ্ছেন সেই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং মনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম রিক্সায় উঠিয়ে দিচ্ছেন।  

https://www.facebook.com/reel/1587543338917266

প্রসঙ্গত, ১৭ নভেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিল ছাত্রদের একদল। সেখানেই বচসা বেধেছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র এবং পুলিশ কর্মীদের। সেই ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলেছিল।  

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে যে, ভিডিওটি দিপু চন্দ্র দাস হত্যা মামলার সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওর যুবকের নাম আব্দুল মোমিন। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Avatar

Title:বাংলাদেশ পুলিশ দীপু চন্দ্র দাসকে জনতার হাতে তুলে দিচ্ছে? জানুন ভিডিওর সত্যতা 

Fact Check By: Nasim A  

Result: False

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *