
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে যে, এতে দেখা যাচ্ছে কিভাবে উত্তর প্রদেশ পুলিশ সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি গাড়ির ডিক্কিতে একজন মানুষকে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করছেন। ঘটনায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উত্তেজিত জনতা পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্লজ্জতা দেশের সামনে। #BJPHataoDeshBachao #viralvideo #facebookreelsviral #highlight #followme।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের জেরে স্ত্রীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল স্বামী হরদেব সিং। পরে ক্ষুব্ধ ছেলে ও ভাই অভিযুক্তকে হাত-পা বেঁধে খন্দৌলি থানায় নিয়ে যায়।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, ভিডিও ভিত্তিক ইন্ডিয়া টুডের একটি উপস্থাপন পাওয়া যায়। ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে করা এই রিল পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”আগ্রায় একটি চমকে দেওয়া ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এক ব্যক্তিকে তাঁর স্ত্রীর ভাই ও ছেলেরা অপহরণ করেছে।
উপস্থাপন অনুযায়ী, আগ্রায় পারিবারিক বিবাদে এক কৃষককে হাত পা বেঁধে গাড়ির ডিক্কিতে ঢুকিয়ে দেয় তাঁর স্ত্রীর ভাই ও ছেলেরা। পরে স্বামী তথা অভিযুক্ত হরদেব সিংকে পুলিশ চৌকিতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তিন অভিযুক্তকে আটক করে গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ।
উপরোক্ত তথ্যকে মাথায় রেখে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভিডিও কেন্দ্রিক অনেক সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন গুলো অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার খন্দৌলি থানার অন্তর্গত গাঁও খেলডিয়ার বাসিন্দা হারদেব সিং নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীকে নির্মমভাবে মারধর করে। ঘটনার পরে লক্ষ্মী আহত হন ও থানা গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়ে লক্ষ্মীর ছেলে রাজস্থানের কোটায় থাকা নিখিল মায়ের সাথে হাসপাতালে দেখা করেন এবং সেখানেই রাত কাটান। পরবর্তীতে, নিখিল তার মামা রাজপালকে জানান বিষয়টি। তখন নিখিল এবং তিন মামা সহ অন্য দুজন হরদেবকে রাস্তা থেকে গাড়িতে উঠিয়ে তাকে মারধর করে এবং হাত পা বেঁধে বেঁধে গাড়ির ডিক্কিতে ঢুকিয়ে খন্দৌলি থানায় নিয়ে আসে। ভিডিওটি সেই সময়ের। পুলিশ অভিযুক্তদের (নিখিল, রাজপাল ও অন্যরা) হেফাজতে নিয়েছে। গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

এক এক্স পোস্টের রিপ্লাইয়ে আগ্রা পুলিশ কমিশনারেটের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে জানানো হয়েছে,”০৪/০৯/২০২৫ তারিখে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের জেরে স্বামী তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মারধর করেন, যার ফলে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মহিলার ছেলে ও ভাই অভিযুক্ত স্বামীকে ধরে তার হাত-পা বেঁধে নিজেরাই গাড়িতে করে পুলিশ চৌকিতে নিয়ে যান। খন্দৌলি থানার পুলিশ মারধরে আহত স্বামীকে চিকিৎসা ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠায়। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শেয়ার করা ভিডিওটি ভুয়ো। এটি আসলে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের ঘটনা। স্ত্রীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন স্বামী হরদেব সিং। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর ছেলে ও ভাই হরদেবকে হাত-পা বেঁধে খন্দৌলি থানায় নিয়ে যান। ভিডিওটি সেই সময়কার।

Title:ছেলে ও শ্যালকের দ্বারা অপহৃত ব্যক্তির ভিডিওটি উত্তর প্রদেশ পুলিশের নির্যাতনের দৃশ্য বলে দাবি করে শেয়ার
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False