
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এক পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, আসামে একটি গরু ও চিতাবাঘকে একসাথে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। পোস্টে মোট ৫টি ছবির একটি কোলাজ রয়েছে। সবকটি ছবিতেই দেখা যাচ্ছে একটি গরু এবং একটি বাঘ পাশাপাশি শুয়ে রয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ ঘটনাটি আসামের। একজন লোক গরুটিকে ক্রয় করে এনে তাঁর উঠুনে বেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকদিন গভীর রাতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুমাতে পারে না বাড়ির লোকজন। তাই তাঁরা মনে করলো এই লকডাউনের সময়ে হয়তো চোরের উৎপাত বেড়েছে। তাই তাঁরা সেখানে একটি সিসিটিভির ব্যবস্থা করলো। পরের দিন সিসিটিভি ফুটেজ দেখেতো সবাই হতবাক! গরুটির পাশে একটা চিতা ঘুর ঘুর করছে। পরে তাঁরা যার কাছ থেকে গরুটি ক্রয় করেছিলেন তাঁর দ্বারস্থ হন ব্যাপারটি জানার জন্য। তখন তাঁরা জানতে পারেন এই চিতাবাঘটির জন্মের ২০ দিন বয়সে তার মা চিতা বাঘিনী মারা যায়। এর পরে এই গরুটির দুগ্ধপান করে সে চিতাবাঘটি বাঁচে। তাই সে তাঁর ত্রাণকর্ত্রী দুধমাকে ভুলে যায়নি। প্রত্যেক রাত্রে দেখা করতে আসে। মাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। মাও আদর করে। চিরশত্রু প্রাণীরাও কৃতজ্ঞতার নিমিত্তে হিংস্র সম্পর্ক ভুলে গিয়ে মধুর করে তোলে। কিন্তু উন্নত জীব মানুষ চিরমধুর সম্পর্ক জলাঞ্জলি দিয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে। ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য বলে তৈরি করে। কালেক্টেড।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০০২ সালের গুজরাটের গরু ও চিতাবাঘের বন্ধুত্বের একটি ঘটনাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে আমরা ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ‘অনফরেস্ট’ (onforest) নামে পশু-পাখি কেন্দ্রিক একটি ওয়েবসাইটে ভাইরাল এই ছবিটির অনুসন্ধান পাওয়া যায়।
২০১৪ সালের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকৃতির কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে নেই, একমাত্র সর্বশক্তিমান জানেন। একটি গরু ও বন্য চিতাবাঘের পাশাপাশি শুয়ে থাকার এই ঘটনাটি সেরকমই একটি প্রাকৃতিক রহস্য। ঘটনাটি ২০০২ সালে গুজরাটের ভাদোদরা জেলার আন্টলি গ্রামে ঘটেছে। কারও মতে গরু ও চিতাবাঘ তারা তাদের পূর্বজন্মে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অতিবাহিত করেছে আবার কারো মতে ঘটনাটি একটি অতিপ্রাকৃত সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কেউ জানেনা এই অদ্ভুত রহস্যের আসল কারণ।

এরপর এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে মুখ্যধারার সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-এর একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ২৫ অক্টোবর, ২০২২, তারিখের এই প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানা যায়। ভাদোদরার তৎকালীন বনরক্ষক অফিসারের মতে, “কখনও কখনও প্রাণীর আচরণ পরিবর্তন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, সম্ভবত চিতাবাঘটি তার পূর্ব-প্রাপ্তবয়স্ক পার করেছে একটি গ্রামীণ এলাকায় কঠোর বন্য পরিবেশে নয়।”

উপরোক্ত তথ্য এবং প্রমাণ সাপেক্ষে স্পষ্ট বলা যায় এটি আসামের ঘটনা নয়। ২০০২ সালের গুজরাটের একটি ঘটনার ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০০২ সালের গুজরাটের গরু ও চিতাবাঘের বন্ধুত্বের একটি ঘটনাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:২০০২ সালের গুজরাটের গরু ও চিতাবাঘের বন্ধুত্বের একটি ঘটনাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context