
মড ফিলি নামে একজন আমেরিকান নির্বাক চলচিত্রের অভিনেত্রীর ছবিকে ফ্রান্সের ব্লাঞ্চ মনিয়েরর ঘটনার সাথে যুক্ত করে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে। একটি লম্বা ক্যাপশনের সাথে মড ফিলির দুটি ছবি সহ আরও অন্য একটি ছবি শেয়ার করে এই ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে। এই পোস্টের যা লেখা রয়েছে তার সারমর্ম হল এই,
ব্ল্যাঞ্চ মনিয়ের ছিলেন ফ্রান্সের একটি আভিজাত পরিবারের কন্যা। ২৫ বছর বয়সে সে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু তার পরিবারের লোক তাতে রাজি হয় না। ব্ল্যাঞ্চের মা তার পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চান কিন্তু ব্ল্যাঞ্চ কিছুতেই রাজি হয় না। অতঃপর, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে ব্ল্যাঞ্চকে একটি ঘরে প্রায় ২৫ বছর আলো, বাতাস বন্ধ করে আটকে রাখা হয়।

তথ্য যাচাই
প্রথমে গুগলে ব্ল্যাঞ্চ মনিয়েরের ব্যাপারে সার্চ করে কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি এই ঘটনাটি সঠিক। ডেইলি মেইল নামে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) অনুযায়ী,
১৯৭৬ সাল, ২৫ বছর বয়সী ব্ল্যাঞ্চ মনিয়ের একটি অভিজাত পরিবারের মেয়ে। সে তার একজং বয়সে বড় এবং গরিব আইনজীবীর প্রেমে পরে। তার মা এটি মেনে নিতে পারেন না। তারপরই হঠাৎ ব্লাঞ্চ মনিয়েরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ২৫ বছর পর জানা যায় ব্লাঞ্চ মনিয়েরের অন্তর্ধানের পেছনে অমানবিক রহস্য।
সময়টা ১৯০১, প্যারিসের এটর্নি জেনারেল একটি বেনামি চিঠি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। প্রেরকের কোন স্বাক্ষর বা ঠিকানা ছাড়া এ চিঠিকে গুরুত্ব দেওয়া ঠিক হবে কিনা এ নিয়ে বেশ কিছুটা দ্বিধান্বিত। তবে চিঠির ভেতরে যা লেখা তা রীতিমত ভয়াবহ। চিঠিতে দাবি করা হচ্ছে মাদাম মনিয়েরের বাসায় কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এটর্নি জেনারেলের অস্বস্তির মূল কারণ হলো যার নামে এ অভিযোগটি আনা হয়েছে সেই ভদ্র মহিলা, মাদাম মনিয়ের প্যারিসের একজন নাম করা ব্যক্তিত্ব। সম্ভ্রান্ত এ পরিবারটির পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনবিদিত। তার প্রয়াত স্বামী এমিলি মনিয়ের শহরের আর্ট ফ্যাকাল্টির ডিরেক্টর ছিলেন এবং তার ছেলে মারসেল মনিয়ের একজন স্বনামধন্য উকিল। অন্যদিকে মাদাম মনিয়ের নিজে একজন সম্মানীত মহিলা যিনি তার দানশীলতার জন্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পর্যন্তও পেয়েছেন। ফলে এমন একটি পরিবারের বিরুদ্ধে এই বেনামি চিঠিকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে কিনা সে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল ঠিক মনস্থির করে উঠতে পারছেন না। আবার একই সাথে চিঠিটিতে এমন কিছু রয়েছে যা তিনি ঠিক উপেক্ষাও করতে পারছেন না।“

অবশেষে এটর্নি জেনারেল বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য মনস্থির করেন এবং ২১ রিউ ডি ল্যা ভিজিটেশনের মাদাম মনিয়ের বাসায় অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশ দেন। স্থানীয় পুলিশ এটর্নি জেনারেলের নির্দেশ মোতাবেক মাদাম মনিয়ের বাসায় হাজির হলেন। ছোট্ট কুঠুরির কাঁচের জানাল ঢাকা পড়ে আছে পুরু পর্দায়। ঘর থেকে বের হওয়া বোটকা গন্ধ কিছু একটা অসঙ্গতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যান্য পুলিশ অফিসারগণ যখন কুঠুরির কাছে পৌঁছালেন তখন অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দানকারী অফিসারের নির্দেশে জানালার কাঁচ ভেঙে কুঠুরিতে প্রবেশ করা হয়। তবে কুঠুরির ভেতরে ঢুকে অফিসাররা যে দৃশ্য দেখলেন তার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।
সেদিন অফিসাররা চিলেকোঠার বদ্ধ কুঠুরিতে যেভাবে অবরুদ্ধ হতভাগ্য নারীকে দেখতে পেয়েছিলেন; একজন রুগ্ন, কঙ্কালসার মহিলা নগ্ন শরীরে চাদরবিহীন জীর্ন গদিতে শেকল পরা অবস্থায় শুয়ে আছেন। কুঠুরির মেঝেতে ছড়িয়ে আছে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার, টুকরো রুটি, মাছ-মাংস, ঘরময় মেঝে ছেঁয়ে আছে শত শত কীট আর ইঁদুর আর নোংরায়। ধুলিময় নোংরা অন্ধকার কুঠুরিটির দমবন্ধ করা গন্ধে অফিসারদের পক্ষে সে ঘরে বেশি সময় অবস্থান করা আর সম্ভব হলো না।
পত্রিকার পাতায় ব্ল্যাঞ্চ মনিয়ের উদ্ধার হবার সংবাদ।
অন্যদিকে, পোস্টের ছবিগুলিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারি তিনটির মধ্যে মাত্র একটি ছবি ব্ল্যাঞ্চ মনিয়েরের। বাকি দুটি ছবি ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।
১ম ছবিঃ

রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই, এটি মড ফিলি নামে একজন আমেরিকান অভিনেত্রীর ছবি।

অন্য দিক থেকে তোলা মড ফিরালির আরেকটি ছবি আমরা ইউকিমিডিয়াতে (আর্কাইভ) খুঁজে পাই যার সাথে পোস্টের ছবির মিল খুঁজে পাই। নিশ্চিত হই, পোস্টের ছবিটি এই অভিনেত্রীরই।

মড ফিলি, জন্ম ১৮৮৩ এবং মৃত্যু ১৯৭১। আমেরিকার নির্বাক চলচিত্রের তিনি একজন উজ্জ্বল তারকা ছিলেন। আরও জানতে এখানে (আর্কাইভ) পড়ুন।
২য় ছবিঃ

রিভার্স সার্চ করে আমরা ইউকিমিডিয়ার ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। এই ছবিটির শিরোনাম অনুযায়ী এটি ব্লাঞ্চ মনিয়েরের ছবি, সাল ১৯০১। এছাড়াও, এই ছবিটি ডেইলি মেইল পত্রিকার পত্রিকার প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়।

৩য় ছবিঃ

এই ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই এটিও মড ফিলি ছবি। ‘ফটোজ অফ সেলিব্রিটিজ’ নামে একটি ওয়েবসাইটে (আর্কাইভ) মড ফিলির আরও অন্যান্য ছবির সাথে এই ছবিটিকে পাওয়া যায়।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। আমেরিকান নির্বাক চলচিত্রের অভিনেত্রী মড ফিলির ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:ব্ল্যাঞ্চ মনিয়েরের কুখ্যাত ঘটনার সাথে জুড়ে ভুয়ো ছবি শেয়ার করা হচ্ছে
Fact Check By: Rahul AResult: False