
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের একটি পোস্টে বলা হচ্ছে, সংবাদ মাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ একটি প্রতিবেদনে লিখেছে নরেন্দ্র মোদীর কড়া জবাবের জন্য চিন তিব্বত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বুলেট ট্রেন চালাতে বাধ্য হল। শেয়ার করা পোস্টে দেখা যাচ্ছে, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’ পোর্টালের লোগো যুক্ত দুটি প্রতিবেদনের স্কিনশট কোলাজ করা হয়েছে।
প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি দোলনাই বসে রিয়েছেন। তার নিচে লেখা রয়েছে এর আগে কেউ পারেনি। এই ছবির নিচে লেখা রয়েছে, চিনকে পাল্টা লাল চোখ দেখিয়ে কড়া জবাব দিলেন মোদীজি।
দ্বিতীয় ছবিতে লক্ষ্যনিয় ওভার ব্রিজের উপর দিয়ে একটি ট্রেন চলছে এবং ছবিটির নিচে লেখা রয়েছে “ভয় পেয়ে অরুনাচল লাগোয়া তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বুলেট ট্রেন চালাল চিন”।
ভাইরাল এই পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “চিন ভয় পেয়েছে 😍। দেখ সেকু মাকুরা, আয় এসে দেখে যা মোদীজির ৫৬ইঞ্চি ছাতির ক্ষমতা 🚩🚩 #ModiHaiToMumkinHai 💪💪।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। ২০১৪ সালের মোদী ও শি জিনপিং-এর সাক্ষাৎকার এবং ২০২১ সালের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির শত বছর পূর্তিতে উদ্বোধন করা বৈদ্যুতিক বুলেট ট্রেনের ঘটনা দুটিকে যুক্ত করা বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে। এছাড়াও, সংবাদ মাধ্যমে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ এরকম কোনও প্রতিবেদনেই প্রকাশ করেনি।

তথ্য যাচাই
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবি দুটিকে ক্রপ করে পৃথক পৃথক ভাবে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।
ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর’র একটি প্রতিবেদনে প্রথম ছবির সন্ধান পাওয়া যায়। জানতে পারি, ২০১৪ সালে যখন চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং প্রথমবার ভারতে আসেন তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে দিল্লি না নিয়ে গিয়ে গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে নিজস্ব বাসভবনে নিয়ে যান। আমেদাবাদ শহরের শবরমতি নদীর তীরে একটি দোলনায় বসে থাকা অবস্থায় এই ছবিটি তোলা হয়।

তারপর এই সুত্র ধরে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’ পোর্টালে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা ভাইরাল ছবিটি খুঁজে পাই। ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর’র একটি প্রতিবেদনে এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদনও এটিকে আমেদাবাদের ছবি উল্লেখ করে একই কথা লেখা রয়েছে। আরও জানা যায়, আমদাবাদে পা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিনের সঙ্গে গুজরাতের তিনটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ গুজরাতে চিনের শিল্প পার্ক গড়ার চুক্তি। ওই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পাটেল বলেন, “সত্যিই আজকে একটা ঐতিহাসিক দিন”

দ্বিতীয় ছবিটিকে গুগলে রিভার্স সার্চ করাতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে ছবিটিকে দেখতে পাই। সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা ফ্রি প্রেস জার্নাল’র ২০২১ সালের ২৫ জুন’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিচুয়ান-তিব্বত রেলওয়ের ৪৩৫.৫ কিলোমিটার লাসা-নিনিচি অংশটি জুলাইয়ের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শতবর্ষ উদযাপনের আগে উদ্বোধন করা হয়েছে। সিচুয়ান-তিব্বত রেলপথ কিংহাই-তিব্বত রেলপথের পরে তিব্বতের দ্বিতীয় রেলপথ হবে। এটি পৃথিবীর অন্যতম ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চল। সিচুয়ান-তিব্বত রেলপথ সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেঙ্গদু থেকে শুরু হয়ে ইয়াহান হয়ে তিব্বতে প্রবেশ করে কমদো হয়ে চেঙ্গদু থেকে লাহাসায় যাত্রা ৪৮ ঘন্টা থেকে ১৩ ঘন্টা কমিয়ে দিয়েছে। নিনিচি হল মেডোগের প্রিফেকচার স্তরের শহর যা অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত সংলগ্ন।

বিভিন্ন রকম কিওয়ার্ড সার্চ করেও আনন্দবাজার পত্রিকায় এই ছবির কোনও অস্তিত্ব মেলেনি। এখান থেকে স্পষ্ট ভাবে বলা যায় ছবিটিকে সম্পাদিত করা আনন্দবাজার পত্রিকার নাম জুড়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৪ সালের মোদী ও শি জিনপিং-এর সাক্ষাৎকার এবং ২০২১ সালের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির শত বছর পূর্তিতে উদ্বোধন করা বৈদ্যুতিক বুলেট ট্রেনের ঘটনা দুটিকে যুক্ত করা বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে। এছাড়াও, সংবাদ মাধ্যমে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ এরকম কোনও প্রতিবেদনেই প্রকাশ করেনি।

Title:আনন্দবাজার পত্রিকার নাম ব্যবহার করে ভুয়ো খবর ছাড়ানো হচ্ছে
Fact Check By: Nasim AResult: False