
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কুম্ভমেলাতে এক সন্ন্যাসির আগুনে সমর্পিত হওয়ার ঘটনাকে ক্যামেরাবন্দি করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি নিউজ। ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত একজন লোক আগুনের মধ্যে শায়িত অবস্থায় রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আগুন থেকে অক্ষত অবস্থায় উঠে আসছেন।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “কুম্ভমেলায় রিপোর্টিং করতে আসা BBC NEWS টিম জানতে পারে এক সিদ্ধ সনাতনী সন্ন্যাসীর কথা, যিনি নিজেকে আগুনে সমর্পিত করার পরেও শরীরের একটিও লোম পুড়ে যায় না। এটা জানতে পেরে BBC NEWS সে সন্ন্যাসীকে নিয়ে শুট করতে থাকে। আগুনের তাপ এতোটাই ছিল তাদের দুর থেকে শুট করতে হচ্ছিল। কিন্তু সেই সন্ন্যাসীর কিছুই হয় না। এটাই হলো মহান সনাতন ধর্ম। এটাই হলো সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিকতা।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। ২০০৯ সালের কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তাত্রেয়া মন্দিরের একটি ঘটনাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কুম্ভমেলা হল হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান তীর্থযাত্রা এবং উৎসব। এটি প্রায় ১২ বছর পরিক্রমণে উদযাপিত হয়। ধর্মীয় শিক্ষা, সাধুদের দ্বারা ধর্মীয় বক্তৃতা, সন্ন্যাসী বা দরিদ্রদের ভোজন এবং বিনোদন দর্শন সহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মেলা সম্পন্ন করা হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে, এই সময় গঙ্গায় স্নান করলে অতীতের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হয় এবং সমস্ত পাপ মুছে যায়।
অপরপক্ষে, বিবিসি নিউজ চ্যানেল হল ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) একটি অপারেশনাল বিজনেস বিভাগ যা সংবাদ এবং তথ্য সংগ্রহ করে সম্প্রচার করে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম সম্প্রচারিত সংবাদ সংস্থা এবং প্রতিদিন প্রায় ১২০ ঘন্টা রেডিও এবং টেলিভিশন আউটপুট তৈরি করে। পাশাপাশি অনলাইন সংস্করণ তো রয়েইছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটিকে ‘ইনভিড উই ভেরিফাই’ টুলে কয়েকটি কি ফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে কোনও যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না।
তারপর গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে ফলাফলে মুখ্য ধারার হিন্দি সংবাদ মাধ্যম ‘আজ তাক’র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এই ভিডিওর সন্ধনা পাই। দেখতে পাই, ২০০৯ সালের ১৮ নভেম্বর এই ভাইরাল ভিডিওকে কেন্দ্র করে ‘আজ তাক’ বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদন গুলি থেকে জানতে পারি, গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত লোকটি হল তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর জেলার বাসিন্দা সাধু মহারাজা রামভাভু। কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তত্রেয়া মন্দিরে অলৌকিক শক্তির দাবি করে একটি অগ্নিযোগের মধ্যে নিজেকে সমর্পন করেন তিনি। আগুনের ওপর শুয়ে থাকার এই কাজটি গত ৩০ বছরে প্রায় ১০০০ বারের মত করেছেন।
সংবাদমাধ্যম আজ তাক প্রসঙ্গনীয় কয়েক ভিডিও নিচে দেওয়া হলঃ
এই সূত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করতেই আরও বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাই। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ৮০ বছর বয়সী এই সন্ন্যাসী শুধুমাত্র কলা ও জল খেয়ে জীবনযাপন করেন। তিনি যখন কর্ণাটকের গুলবার্গা জেলার ঘানাগাপুর গ্রামের দত্তত্রেয়া মন্দিরে ভ্রমন সূত্রে যান তখন তার ভক্তদের সুস্থতার কামনা করে আগুনে নিজেকে সমর্পণ করে ভগবান গনেশ-এর সাথে কথা বলেন।

সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর’র প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি।

এই সমস্ত খবরের ভিত্তিতে বলতে পারি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিও টি কুম্ভ মেলার নয়। আমরা বিভিন্ন রকম উপায়ে সন্ধান চালিয়ে ‘বিবিসি নিউজে’ এই ভিডিওটি দেখতে পাইনি।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০০৯ সালের কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তাত্রেয়া মন্দিরের একটি ঘটনাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার ভিডিওকে কুম্ভমেলার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context