
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ের একটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিতর্কের ছবি পুনরায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে। এই ভাইরাল পোস্টটিতে মোট তিনটি ছবির একটি কোলাজ দেখা যাচ্ছে এবং তার ওপরে লেখা রয়েছে, “কিছুক্ষণ আগেই বিহারে উদ্ধার হল ট্রাকভর্তি ইভিএম, কোন মিডিয়া দেখাবে না, তাই দায়িত্ব নিয়ে ছড়িয়ে দিন। ভোটের নামে প্রহসন চলছে”। এই ছবিগুলিতে একটি গাড়ির ওপরে অনেকগুলি ইভিএম দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিহার বিধানসভার ২৪৩টি আসনে ৩ দফায় বিহারের চলছে। প্রথম দফায় ২৮ অক্টোবর ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে ৩ নভেম্বর। আগামি ৭ নভেম্বর তৃতীয় দফায় ১৫ টি জেলায় ৭৮ টি নির্বাচনী ক্ষেত্র নিয়ে ভোট গ্রহণ হবে। এই ভুয়ো পোস্টটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি এই বিধানসভা নির্বাচনের ঘটনা।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। এটি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ের ঘটনা।


তথ্য যাচাই
পোস্টের তিনটি ছবি থেকে একটি ছবি ক্রপ করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘জনতা কা রিপোর্টার’ –এর একটি প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ২১ মে তারিখের এই প্রতিবেদনটি অনুযায়ী,
লোকসভার শেষ দফার ভোটের কয়েক ঘণ্টা পর বিহারের ‘রাষ্ট্রীয় জনতা দলের’ টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই তিনটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয় একটি ইভিমি ভর্তি ট্রাক লোকসভা নির্বাচন ক্ষেত্রের স্ট্রং রুমে ঢোকার পথে ধরা পরে। এই টুইটির পর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়।
প্রতিবেদনটিতেই উল্লেখিত টুইটটির লিঙ্ক পাওয়া যায়।
এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘দ্যা স্টেটসম্যান’-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ইভিএমএর এই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমস্ত দাবি করা হচ্ছে তা ভুয়ো। যে সমস্ত ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে সেগুলি রিজার্ভ এবং অব্যবহৃত ইভিএমের।

এই মর্মে নির্বাচনের কমিশনের তরফে সাফাই দিয়ে একটি প্রেস বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়,
“ভোটে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিনগুলি স্ট্রংরুমে সুরক্ষিত রয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। ভোট হওয়ার পর ইভিএম মেশিনগুলি পরিবর্তন করা হতে পারে বলে যে অভিযোগ উঠেছে এবং এ ধরনের কিছু খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে স্পষ্ট জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম মেশিনগুলি বদলানোর যে ছবি সংবাদমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়েছে, তার সঙ্গে ভোটে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিনগুলির কোন সম্পর্ক নেই।
নির্বাচনের পর সমস্ত সিল করা ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেশিনগুলি প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্ট্রংরুমে আনা হয়েছে। স্ট্রংরুমগুলিও সিল করার সময় ভিডিও করা হয়েছে এবং গণনা পর্যন্ত সিসিটিভি দ্বারা নজর রাখা হচ্ছে। স্ট্রংরুমগুলির নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এমনকি, প্রার্থী অথবা তাঁর প্রতিনিধি সেখানে ২৪ ঘন্টা উপস্থিত রয়েছেন।
গণনার দিন স্ট্রংরুমগুলি খোলা হবে প্রার্থী বা তাঁর প্রতিনিধি এবং নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে। এই গোটা প্রক্রিয়াটি ভিডিওগ্রাফি করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গণনা শুরু হওয়ার আগে প্রার্থী বা তাঁর প্রতিনিধিকে ইভিএম মেশিনের গায়ে লাগানো সিল, ট্যাগ, সিরিয়াল নম্বর দেখানো হবে।
নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে এই নিয়মকানুনগুলি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও সমস্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচনী আধিকারিক এবং জেলা নির্বাচনী আধিকারিকরা প্রার্থীদের গণনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
সমস্ত প্রশাসনিক নিয়ম, নিরাপত্তা কাঠামো এবং নির্দেশাবলী মেনে নির্বাচন কমিশন স্ট্রংরুমগুলিতে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটগুলির সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেছে।
সংবাদমাধ্যমে ইভিএম সরানোর যে ছবি দেখানো হয়েছে, সেই ইভিএম মেশিনগুলি ভোটে ব্যবহার করা হয়নি। এই ধরণের ছবি কিভাবে প্রকাশিত হল, তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কোন আধিকারিকের গাফিলতি থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম সম্পর্কিত কোন অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর নির্বাচন সদনের কন্ট্রোল রুমে ফোন করা যেতে পারে।“

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ইভিএমের ছবিকে সম্প্রতির দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:২০১৯ সালের নির্বাচনের ছবিকে সম্প্রতির বিহার নির্বাচনের ছবি দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Rahul AResult: False