
সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে প্রতাকদের একটি দল খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা সাধারণত +৬২, +৮৪, +২৫৪ দিয়ে শুরু মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা কলের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করে থাকে। তারা নিজেকে বড় কোন কোম্পানির প্রতিনিধি বা HR দাবি করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাবহারকারির সাথে কথা শুরু করে থাকে। এই ধরনের কোন ঘটনা আপনার সাথে ঘটে থাকলে আপনাকে জানিয়ে রাখি এই ঘটনার শিকার শুধু আপনি নন।
প্রতারক দলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর গুলি সাধারণত আন্তর্জাতিক হয়ে থাকে। যেমন, মালয়েশিয়ার নম্বর কোড- +৬০, ইন্দোনেশিয়ার- +৬২, ভিয়েতনামের +৮৪, কেনিয়ার- +২৫৪ এবং মালি দেশের- +২২৩। তাদের পাঠানো মেসেজ বা কলের উত্তর দিলে তারা আপনাকে ঘরে বসে থেকে সহজ কাজের অফার যার বিনিময়ে আপনাকে নির্ধারিত একটি বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করবেন। তাই এই কেলেঙ্কারী সম্পর্কে এবং এর শিকার হওয়া থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে জানা অপরিহার্য। আমরা এই প্রতিবেদনে আলোচনা করবো এই ধরনের প্রতারকের হাত থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়।

এই প্রতারনা কীভাবে কাজ করে ?
প্রতারকরা নিজেকে সাধারণত কোন বড় কোম্পানির প্রতিনিধি বা কর্মী বা HR ছদ্মবেশে কথা শুরু করে থাকে। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম বা মালির মতো দেশগুলির নম্বর কোড যুক্ত অজানা আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা কলের মারফত আপানার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকে তারা। প্রথমেই তারা ঘরে বসে হালকা কাজের বিনিময়ে টাকা উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে থাকে। হালকা কাজগুলি যেমন ইউটিউব ভিডিও লাইক বা শেয়ার করা বা কোন সমীক্ষা বা অন্যান্য অনলাইন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করে জড়িত থাকার কথা বলে হবে।
কাজ শেষ হওয়ার প্রমান দেওয়ার পর তারা নির্ধারিত হালকা পরিমান টাকা দিয়ে দেয়। এরকম ভাবে বেশ কিছু সময় ধরে নির্ধারিত কর্ম করতে থাকলে তারা আপনাকে নির্ধারিত হালকা পরিমান টাকা প্রদান করতে থাকবে। এরকমটা তারা আস্থা অর্জনের উদ্দ্যেশে করে থাকে। তারপর, মোটা অঙ্কের টাকা অর্জনের জন্য ভিন্ন কাজ করার অফার দিয়ে থাকে এবং এই কাজ করার জন্য ভুক্তভোগীর থেকে মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম আমানত হিসেবে চাওয়া হয়। ঠিক এই মুহূর্তেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাবহারকারি প্রতাকদের শিকার হয়। ভালো টাকা ফেরত পাওয়ার উদ্দ্যেশে টাকা পাঠিয়ে দিলেই তারা পালিয়ে যাবে বা আপনার মেসেজের উত্তর দিবে না।
’লাইক করার বিনিময়ে টাকা’ প্রতারনা কি ?
সম্প্রতি, একজন ৬৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা তার সমস্ত সঞ্চয় (১.১ কোটি টাকা) ’লাইকের জন্য টাকা’ কেলেঙ্কারীতে হারিয়েছেন। অনলাইনে ভিডিও লাইক করে অর্থ উপার্জনের প্রস্তাব নিয়ে তার কাছে যোগাযোগ করা হয়েছিল।
পুনে সাইবার ক্রাইম পুলিশের মতে- এই ধরনের প্রতারনায় প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সাথে মেসেজ বা কলের মাধ্যমে ঘরে বসে সহজে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে বার্তালাপ শুরু করে। কাজের বিবরণ হিসেবে বলা হয় যে, ভিডিওতে লাইক করতে হবে, পোস্টে মন্তব্য করতে হবে বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করতে হবে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জনের জন্য প্রতারকরা প্রাথমিকভাবে ছোট অর্থ প্রদান করে। ভবিষ্যতে মোটা অঙ্কের টাকা ফিরে পাওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর থেকে মোটা অঙ্কের কিছু টাকা অগ্রিম আমানত হিসেবে চাওয়া হয়। ভুক্তভোগী যত বেশি স্কিমে বিনিয়োগ করে, প্রতারকরা তখন বড় অঙ্কের টাকা চাইতে শুরু করে। কিছু সময়ে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করা অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য আরও বেশি অর্থ দাবি করে।

স্পুফিং কি ?
স্পুফিং হল একটি অজানা উৎস থেকে একটি পরিচিত বা বিশ্বস্ত উৎস থেকে যোগাযোগের ছদ্মবেশ ধারণ করা। স্পুফিং ইমেল, ফোন কল এবং ওয়েবসাইটগুলিতে প্রযোজ্য হতে পারে বা আরও প্রযুক্তিগত হতে পারে যেমন কম্পিউটার একটি আইপি ঠিকানা, ঠিকানা রেজোলিউশন প্রোটোকল (ARP) বা ডোমেন নেম সিস্টেম (DNS) সার্ভার প্রযোজ্য করা যায়।
প্রতারকরা স্পুফিংয়ের মতো কৌশলও ব্যবহার করতে পারে যেখানে তারা কলার আইডি জাল করার জন্য সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে যাতে মনে হয় যে কলটি একটি বৈধ উৎস থেকে আসছে। একজন প্রতারক ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হওয়ার ভান করে আপনাকে কল করতে পারে এবং ক্রেডিট কার্ডের বিবরণের মতো সংবেদনশীল তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসা করতে পারে। তারা ক্রেডিট কার্ড নম্বর, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং নিরাপত্তা কোড সহ তাদের অ্যাকাউন্টের বিবরণ যাচাই করতে বলবে। প্রতারক আপনাকে তাড়াহুড়ো করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করতে পারে। যেমন বলতে পারে যে আপনার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বা যদি অবিলম্বে তথ্য প্রদান না করে তবে আপনাকে একটি ফি নেওয়া হবে। এই সমস্ত তথ্য তাদের হাতে চলে গেলে আপনার আকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যাবে। ফলে আপনার আকাউন্ট থেকে আপনার টাকা উধাও করে দিতে পারে বা আপনার সেই আকাউন্টটি অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে পারে।
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বৈধ ব্যাঙ্কগুলি আপনার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য কখনই ফোনে চাইবে না। তাই আপনি যদি এই ধরনের ফোন কলের সম্মুখীন হন তাহলে কলটি তৎক্ষণাৎ শেষ করা এবং ফোন কলটি বৈধ ছিল কিনা তা যাচাই করার জন্য সরাসরি আপনার ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করাটাই শ্রেয়।
হোয়াটসঅ্যাপ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
হোয়াটসঅ্যাপে ’ব্লক’ নামের একটি অন্তর্নির্মিত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নির্দিষ্ট কোন / কিছুসংখ্যক ব্যবহারকারী থেকে মেসেজ বা কল বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সমস্যাযুক্ত বিষয়বস্তু হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্টও করতে পারেন।
আপনি যদি একটি সন্দেহজনক অজানা নম্বর থেকে একটি অযাচিত মেসেজ বা কল পান তবে আপনার প্রেরকের সাথে কথা বার্তায় জড়িত হওয়া বা কোনো তথ্য প্রদান করা উচিত নয়। পরিবর্তে, আপনার অবিলম্বে নম্বরটি ব্লক করা উচিত এবং তা হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্ট করা উচিত।
এই সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবহারকারীরা এই ধরনের প্রতারকের শিকার হওয়া থেকে নিজেদের এবং নিজের আর্থিক তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা এবং প্রতারণামূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশল, যেমন স্পুফিং, ছদ্মবেশ, এবং ফিশিং ব্যবহার করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং আর্থিক বিবরণ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে প্রতারিত করতে। অপরিচিত নম্বর বা সন্দেহজনক উৎস থেকে কল বা মেসেজ গ্রহণ করার সময় সতর্ক থাকা অপরিহার্য।

Title:হোয়াটসঅ্যাপ প্রতারনাঃ অযাচিত আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে মেসেজ এবং কল
By: Nasim AkhtarResult: Explainer