হিজাব মামলায় পিটিশন করায় আইনজীবীর প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট? জানুন সত্যতা

Communal False

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবই করা হচ্ছে, হিজাব মামলার পিটিশনটি খারিজ করার পুনরায় আবেদন করায় আইনজীবীর ওকালতি করা নিষিদ্ধ করল কর্ণাটক হাইকোর্ট। ৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে এই দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি কোর্টের অন্দরমহলে মুখে মাস্ক পরে ২ জন বিচারক বসে রয়েছেন এবং তার সামনে কয়কজন উকিল বসে রয়েছেন। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “*কর্ণাটক হাইকোর্ট দ্বারা হিজাব মামলার পিটিশনটি খারিজ করার পর বোরকা আইনজীবী আবার আবেদনটি দাখিল করেন।প্রধান বিচারপতি সঙ্গে সঙ্গে আবেদনটি খারিজ করে দেন এবং বোরকা আইনজীবীকে রীতিমত ধমক দিয়ে তার কালো গাউন টি খুলে ফেলতে বলেন এবং তার সাথে সাথে এও বলেন যে তিনি দেশের কোন আদালতে আর প্র্যাকটিস করতে পারবেন না*।” 

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবই ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। ভাইরাল এই ভিডিওর হিজাব বিতর্কের রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। 

ফেসবুক পোস্টফেসবুক পোস্টফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলাফলে একটি ইউটিউব ভিডিওতে এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। কর্ণাটক হাইকোর্টের অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে এই ভিডিওটি চলতি বছরের ৩ মার্চ তারিখে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। 

২ ঘন্টা ৪৯ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওর ১.০৪.২৩ মিনিটের ঠিক আগের অংশে ভাইরাল ভিডিওটু দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এটি ৩ মার্চ তারিখে ১০.৩০ মিনিটে শুরু হওয়া হাইকোর্টের শুনানির লাইভ সম্প্রচার।

এই ভিডিও দেখে জানতে পারি এটি একটি জমি জায়গা সম্পর্কিত মামলার শুনানির ঘটনা। 

হিজাব বিবাদের মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমরা গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। জানতে পারি কর্ণাটক হাইকোর্টে তিন জন বিচারকের একটি বেঞ্চ এই মামলার রায় দেবেন। এই তিনজন বিচারপতি হলে প্রধান বিচারপতি ঋতু রাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত এবং জেএম খাজি। 

কর্ণাটক হাইকোর্ট ১৫ মার্চ এই মামলার রায় দেন। তিন জন বিচারকের এই বেঞ্চ তাদের রায়ে কর্ণাটকের স্কুলে হিজাব ব্যানের চ্যালেঞ্জকে খারিজ করে জানাম, “হিজাব ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়।” এছাড়া রায়ে আরও বলা হয়, স্কুলে ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক থাকা উচিত এবং পড়ুয়ারা এর বিরোধিতা করতে পারবে না। আদালত আরও জানায়, মাথার স্কার্ফ স্কুল ইউনিফর্মের অংশ নয়। 

উল্লেখ্য, হিজাব মামলায় কর্ণাটক হাইকোর্টের এই রায়ের বিরোধিতায় মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। উদুপির ছয়জন মুসলিম পড়ুয়া সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছে। 

আরও লক্ষ্য করা যায় ভাইরাল ভিডিওর শুনানিতে ২ জন বিচারক রয়েছেন যেখানে হিজাব মামলার বেঞ্চে ৩ জন বিচারপতি ছিলেন। অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওর ৩ মার্চ তারিখের একটি শুনানির দৃশ্য এবং হিজাব মামলার শুনানি ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের পর ১৫ মার্চ হয়েছিল। স্পষ্ট হয়ে যায় দুটি ভিন্ন মামলার শুনানির ভিডিও।  

এই বিষয়ে আরও বিষদ জানতে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বেঙ্গালুরু শহরের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সদাশিব রেড্ডি ওয়াইআর-এর সাথে যোগাযোগ করে। আমার তাকে ভাইরাল এই ভিডিওর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি আমাদের বলেন, “ভাইরাল ভিডিওর শুনানির সময় আমি কোর্টে উপস্থিত ছিলাম। এটি হিজাব মামলার শুনানির ঘটনা নয়, এটি আসলে অন্য একটি মামালর শুনানির ভিডিও। এখানে যেই মামলা বিষয়ে চর্চা হচ্ছিল ঠিক একইরকমের একটি মামলাকে যোগ্যতার ভিত্তিতে খারিজ করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত আইনজীবী একই মামলায় পিটিশন দায়ের করায় প্রধান বিচারপতি তাকে বকা দেন। বার কাউন্সিলের সভাপতিকে তলব করে ওই আইনজীবীর প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এর পরের দিনই আইনজীবী ক্ষমার আবেদন করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।”

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ভাইরাল এই ভিডিওর হিজাব বিতর্কের রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য একটি মামলার ভিডিওকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:হিজাব মামলায় পিটিশন করায় আইনজীবীর প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট? জানুন সত্যতা

Fact Check By: Nasim A 

Result: False

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *