
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে বরিষ্ঠ বিজেপি নেতাবৃন্দ রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানাতে গিয়েছিলেন। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে থাকা লাইন এর মাঝখানে দাড়িয়ে আছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, তার বাম পাশে দাড়িয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলিপ ঘোষ এবং ডান পাশে আছেন বিজেপি সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “#BreakingNews….. পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের রং অবিশ্বাস্য ভাবে পরিবর্তনের পথে..!! তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক ভোটের ফলাফল পরবর্তী নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে মমতা ব্যানার্জির সরকারের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতের ১৪৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি জরুরীভাবে ব্যবস্থা না নিলে বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের যে গৌরবজনক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে, তা আর রক্ষা করা সম্ভব হবেনা, স্বামী বিবেকানন্দ, অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পশ্চিমবঙ্গকে আমরা দ্রুত হারিয়ে ফেলবো”। ১৪৬ জন বিশিষ্ট ভারতের নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন, ১৭ জন প্রাক্তন বিচারপতি, ৬৩ জন সাবেক আমলা, ১০ জন সাবেক রাষ্ট্রদূত, ৫৬ জন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। পশ্চিমবঙ্গে শান্তি ফেরাতে হলে রাষ্ট্রপতি শাসনের আর কোন বিকল্প নাই, ভোটের ফলাফল পরবর্তী গত ২০/২২ দিনের নানা নাটকীয় পরিস্থিতি এটাই বলে দিচ্ছে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পথেই হাঁটছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। আমরা পরিবর্তনের প্রত্যাশায় রইলাম। জয় শ্রী রাম…….. ছবিতে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এর সাথে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি শ্রদ্ধেয় দিলীপ ঘোষ দাদা, কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রাজ্য বিজেপির অন্যান্য নেত্রী বৃন্দ।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি, ১৪৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের পর রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু ভাইরাল এই ছবিটির সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। ২০২০ সালের একটি ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিংসা, মারামারি, বোমাবাজি এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর উঠে আসে। একরকমের শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা জড়িত বিভিন্ন পোস্ট সত্য হলেও তার সাথে ভুয়ো পোস্টেরও বন্যা নেমেছিল। সম্প্রতি ফের সেই ঘটনার সাথে জড়িত ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে আমরা ছবিটিকে “প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া” এর অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল সহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এই ছবিটি দেখতে পাই। ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, এটি আপলোড করা হয়েছিল।
সংবাদ মাধ্যম ‘এই সময়’-এর ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারীর একটি প্রতিবেদনে এই ছবির উল্লেখ পাই। জানতে পারি গঙ্গারামপুরে একজন শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনার বিষয়ে নালিশ জানাতে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেন দিলীপ ঘোষ সহ বিশিষ্ঠ বিজেপি নেতারা।
৩১ জানুয়ারির দক্ষিণ দিনাজপুরের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাইয় জোর করে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদ করার পরে হাঁটুতে দড়ি দিয়ে বেঁধে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত নেতার নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতী টেনে হিঁচড়ে এক শিক্ষিকাকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ, শিক্ষিকার বোন প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে গেলে তাঁর উপরও একই অত্যাচার চলে। মহিলার অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত কর্তৃক রাস্তা নির্মাণের জন্য জোর করে তাদের জমি দখলের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।
এবিপি আনন্দ সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে পাই যেখানে ভাইরাল ছবিটিকেও দেখতে পাওয়া যায়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০২০ সালের ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:না, রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে বিজেপি নেতারা রামানাথ কোভিন্দের সাথে দেখা করেনি
Fact Check By: Nasim AResult: Misleading