
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কর্ণাটক হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকান জিন্স পরে রয়েছে। পোস্টে দুটি ছবির একটি কোলাজ রয়েছে যার মধ্যে একটিতে একজন যুবতি হিজাব রয়েছে এবং দ্বিতীয় ছবিতে ওই তরুণীই হিজাব ছাড়া সাধারণ জিন্স পরে দাড়িয়ে রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে: স্কুল কলেজ গেলে… বোরখা….. আর বেড়াতে গেলে হট জামা কাপড়…. বলি ঝাঁটা চেনো।
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। দুটি অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে কর্ণাটক হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকান দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে। ভাইরাল পোস্টের কোনোটিই মুসকান নয়।

উল্লেখ্য, কয়েকদিন কর্ণাটকে উদুপির একটি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে আসা ছাত্রীদের কলেজ চত্বরের বাইরে চলে যেতে বলা হয়। এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় হিজাব-বিতর্ক। দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি হিজাব পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসার বিরোধিতা করতে শুরু করে। কর্ণাটকের ম্যান্ডার পিইএস কলেজে একজন ছাত্রী কলেজে আসার পথ তাকে হেনস্থা করতে শুরু করে দক্ষিণপন্থী ছাত্রের একটি দল। মেয়েটিকে দেখে তারা ‘জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম’ চিৎকার করতে থাকে। উত্তরে মেয়েটি ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তোলে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর হিজাব-বিতর্কের মুখ হয়ে যায় মুসকান হিজাব পরিহিত এই কলেজ ছাত্রী। বিস্তারিত…।
তথ্য যাচাই
পোষ্টের দ্বিতীয় ছবিটি দেখে আমদের সন্দেহ হয় কারণ মুখের সাথে শরীরের অসঙ্গতি রয়েছে। দেখেই মনে হচ্ছে সম্পাদিত করে বসানো হয়েছে।
প্রথম ছবি
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে নাজমা নাজির চিক্কানেরালে নামের এক ফেসবুক আকাউন্টের প্রোফাইলে এর অনুসন্ধান পাই। ভাইরাল পোস্টের বাঁদিকের ছবিটি নাজমা নাজির নামে এই সমাজকর্মীরা ছবিটি। প্রোফাইলের বায়ো থেকে জানা যায় নাজমা নাজির “জনতা দল সেকুলার”-এর একজন সদস্য।

এই বিষয়ে স্পষ্টতা পেতে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো নাজমা নাজিরের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, “সম্প্রতি কর্ণাটকের ম্যান্ডার পিইএস কলেজে বোরখা পরায় যাকে হেনস্থা করা হয় আমি সেই মুসকান নই। আমার নাম নাজমা নাজির। আমি একজন সমাজকর্মী এবং জনতা দল সেকুলার (জেডিএস)-এর একজন সদস্য। আমি এর আগেও এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছি। এবারেও কর্ণাটকের হিজাব বিবাদে আমি প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমার ছবিকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে আমরা সম্মানের পাশাপাশি আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে নিয়ে যে সমস্ত দাবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে সবকটিই ভিত্তিহীন।”
এর আগেও তার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হয়। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বাংলা তার সত্যতা যাচাই করে সেটিকে ভুয়ো প্রমাণ করে। ফ্যাক্ট চেকটি পড়ুন এখানে।
দ্বিতীয় ছবিঃ
এই ছবির সত্যতা যাচায় করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইঞ্জিনে সার্চ করি। জানতে পারি এটি মুসকান নন, এটি নাজমা নজিরও নন। টুইটার থেকে জানতে পারি এই মেয়েটির নাম “তানিয়া জেনা”। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এই ছবিটি তানয়া জেনা ইন্সতাগ্রাম আকাউন্ট থেকে এই ছবিটি শেয়ার করা হয়। অর্থাৎ তানিয়া জেনা নামের একটি মেয়ের ছবিকে সম্পাদিত করে তার জায়গায় নাজমা নাজিরের মুখ বসিয়ে তাকে মুসকান বলে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছিল।
নিচে আসল সম্পাদিত ছবির এবং ভাইরাল ছবির তুলনা দেওয়া হল।

তথ্যের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় ভাইরাল ছবি দুটো হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকানের নয়। দুটি অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। দুটি অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে কর্ণাটক হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকান দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:দুটি অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকান দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: False