
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লার দুর্গা পুজা মণ্ডপে কোরআন রেখে আসার জন্য দক্ষিণ শিবিরের সভাপতি সহ চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পোস্টে দুটি একই দাবিযুক্ত ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট রয়েছে। ওই পোস্ট গুলিতে মোট তিনটি ছবি দেখা যাচ্ছে যার মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ একজন লোককে নিয়ে যাচ্ছে। ওই পোস্টগুলির পোস্টের ক্যাপশনে দেখা যাচ্ছে, “কুমিল্লায় পুজা মন্ডপে কোরান শরীফ রেখে আসার ঘটনায় প্রমাণসহ গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ এর শিবির সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ চার শিবির নেতা।(পূর্বেও চিটাগাং থেকে গ্রেফতার হয়েছিল। ছবিটা সে সময়ের) মূলত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর লক্ষ্যেই পুরো বিষয়টি সাজিয়েছিলো জামাত-শিবির। (কামাল পাশা, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ)।“
মূল পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “অন্যায়টা আমাদের ছিল না???? আরে ভাই সামান্য একটা বইয়ের পাতা ও যদি আমাদের পায়ের নিচে পড়ে আমরা দশবার সেটা কে প্রণাম করি। আমরা নিজের ধর্মকে এবং অন্য ধর্মালম্বীদের কে সম্মান করতে জানি। কষ্ট হয় প্রচুর কষ্ট হয় যখন আমরা কোন অন্যায় না করেও শাস্তিটা ভোগ করতে হয়। এখন আপনারা কি বলবেন ❓❓❓”
তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পুরনো ঘটনার ছবিকে সম্প্রতির দাবি করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রতিটা ছবিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে খুব সহজেই অনুসন্ধান পাওয়া যায়।
প্রথম ছবি
সংবাদ মাধ্যম ‘সারা বাংলা’-এর ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে পোস্টের প্রথম ছবিকে দেখতে পাই। ঈদ পুর্নমিলনী সভার নামে রাষ্ট্রবিরোধী কাজকর্ম এবং সন্ত্রাসের পরিকল্পনার অভিযোগে চট্টগ্রামের মোটেল সৈকত থেকে জামাত-শিবিরের ২০১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, “চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজম ওবায়দুল্লাহ, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল হাসান, সেক্রেটারি ইমরানুল হক, অফিস সেক্রেটারি গাজী সাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ হাসনাত এবং বায়তুল মাল সম্পাদকসহ ২১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।“

দ্বিতীয় ছবি
‘বিডিনিউজ ২৪’-এর একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাই। সেখানে এই কথা বর্ণনা করা হয়। এই প্রতিবেদনে দ্বিতীয় ছবির অনুসন্ধান পাওয়া যায়।

তৃতীয় ছবি
‘বিডিনিউজ ২৪’-এর ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনে এই ছবির অনুসন্ধান পাওয়া যায়। জানতে পারি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের গোপন বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে, হিন্দুদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার মণ্ডপে কোরআন পাওয়া ঘিরে শুরু হয়ে দেশজুড়ে অশান্তি। পুজোমণ্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগুনের পর দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় এপর্যন্ত ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
কুমিল্লার নানুয়া কোতোয়ালী থানার ওসি বলেন, এখনো তদন্ত পর্যায়ে তাই কোরআন রাখার ঘটনায় কারা জড়িত তা এখন প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে পুরনো কিছু ছবিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। বিভিন্ন পুরনো ঘটনার ছবিকে সম্প্রতির দাবি করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে।

Title:পুরনো ছবিকে বাংলাদেশের সম্প্রতির ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে
Fact Check By: Rahul AResult: Partly False