সম্প্রতি একজন পাঠক আমাদের তথ্য যাচাই হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার +919049053770-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওটির সাথে লেখা হয়েছে, দলিত মেয়েটির অপরাধ সে স্নান করায় উত্তরপ্রদেশের এই নদী অপবিত্র হয়েছে। তাই হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে সামান্য প্রতিবাদ। মেরা ভারত মহান। এই একই ভিডিওর কেন্দ্রিক পোস্ট ফেসবুকেও একই দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। পারিবারিক বিবাদের কারণে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা যুবতিকে মারধরের মধ্যপ্রদেশের পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক রং লাগিয়ে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাই

ভাইরাল এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের শুরু করি। ফলে, সংবাদমাধ্যম দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওর উল্লেখ পাওয়া যায়। ২০২১ সালের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুবতিকে মারধরের এই ভিডিওটি মধ্যপ্রদেশের ধার জেলার ডাণ্ডা থানার পিপালওয়া গ্রামের। মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল তৎকালীন বছরের ২২ জুন তারিখে।

মেয়েটিকে মারধর কেন করা হচ্ছে ?

মারধরের শিকার হওয়া মেয়েটি সহ তার কাকার মেয়ে তাদের এক মামার ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলত। এই কথা পরিবারের লোকজন জানতে পারলে পরিবারের লোকজন সেই মেয়ে দুজনকে লাঠি-ডাণ্ডা দিয়ে নির্দয় ভাবে মারধর করেছিল। এই মামলায় ২৬ জুন, ২০২১, তারিখে এফআইআর নথিভুক্ত করে পরিবারের ৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

দৈনিক ভাস্কর প্রতিবেদন আর্কাইভ

এই সুত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক সার্চ করতেই মুখ্যধারার বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভাইরাল এই ভিডিও কেন্দ্রিক প্রতিবেদন পেয়ে যায়। সমস্ত প্রতিবেদনই একই কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মারধরের ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের এবং ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২১ সালের ২২ জুন তারিখে। মারধরের এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার কোন অ্যাঙ্গেলর উল্লেখ কোন প্রতিবেদনেই পাওয়া যায়নি।

এনডি টিভি প্রতিবেদন

আরও পড়ুন এখানে

ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো টান্ডা থানার ইনচার্জ বিজয় ভাস্কলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, “এটি ২০২১ সালের জুন মাসের ঘটনা। এই ভিডিওটি এর আগেও দলিত সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের নামে ভাইরাল হয়েছিল। এই মামলাটি আসলে দলিতদের উপর অত্যাচারের নয়, তবে এই মেয়েরা তাদের মামার ছেলের সাথে কথা বলার কারণে তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা মারধর করা হয়েছিল। এটি একই পরিবারের পারস্পরিক কলহের ঘটনা। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কারাগারে পাঠালেও পরে তারা জামিন পেয়ে গেছিলো।“

ভাইরাল এই ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের দলিত মেয়ের উপর অত্যাচার দাবি করে পোস্ট করা এক টুইটের প্রতিউত্তরে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “এই ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং ২০২১ সালের, থানা টান্ডা, জেলা ধার, মধ্যপ্রদেশের সাথে সম্পর্কিত। বিভ্রান্তিকর টুইট করার জন্য আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।“

তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের দলিত মহিলার উপর অত্যাচারের নয় বরং মধ্যপ্রধেশের এবং মারধরের এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার কোন সম্পর্ক নেই।

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। পারিবারিক বিবাদের কারণে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা যুবতিকে মারধরের মধ্যপ্রদেশের পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক রং লাগিয়ে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

Avatar

Title:মধ্যপ্রদেশে পারিবারিক কলহের দরুন যুবতিকে মারধরের পুরনো ভিডিও সাম্প্রদায়িক রঙে উত্তরপ্রদেশের দাবিতে ভাইরাল

Fact Check By: Nasim A

Result: False