
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, একজন উইঘুর মুসলিমকে তার ধর্মের জন্য নির্যাতন করছে চিনা প্রশাসন। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একজন লোককে একটি চেয়ারে হাত বন্দী অবস্থায় বসে রয়েছেন এবং সেই চেয়ারটিরও একটি ছবি দেওয়া রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “চাইনিজ প্রশাসনের কাছে বন্দি উইঘুর মুসলিম ভাইটি যে চেয়ারে বসে আছেন সেটার নাম টাইগার। লোকটি কয়েক সপ্তাহ ধরে এভাবে চেয়ারে বসে আছে কোন রকম নড়াচড়া ছাড়া। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারে। এই চেয়ারেই তাকে ঘুমাতে এবং খেতে হবে। এভাবে তাকে চেয়ারে বেঁধে রাখার কারণ হল ইসলাম থেকে দূরে রাখা, ইসলাম পালন করতে না দেয়া। এটাকে চাইনিজরা বলছে রিহ্যাবিটেশন (পুনর্বাসন)। আমার ভাই এবং বোনেরা দয়া করে আপনাদের দুয়ায় কারাবন্দী উইঘুর মুসলিমদের বিশেষভাবে স্মরণ করুন। আল্লাহ যেন তাদের মুক্তি দান করেন!!আমিন।🤲 (সংগ্রহীত)” ।
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি এই দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিনা পুলিশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার ধৃত একটি পুরনো ঘটনার ছবিকে ভিত্তিহীন দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে বসবাসকারি উইঘুর মুসলমানের সংখ্যা প্রায় এক কোটি দশ লাখ। আত্মপরিচয়ের বেলায় তারা নিজেদেরকে সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে মধ্য এশিয়ার লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন। তাদের ভাষা অনেকটা তুর্কী ভাষার মতো।
উইঘুর মুসলমানদের প্রতি চিন প্রশাসনের ব্যাবহার সম্পর্কে সবাই অবগত। ২০১৬ সালের শেষ দিকে চিনা প্রশাসন উইঘুরদের তিনটি মসজিদ ভেঙে। ২০১৮ সালেও একটি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রশাসন। এছাড়া, ২০১৯ খবর উঠে এসেছিল উইঘুর মুসলিমদের কিভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করা হয়েছিল। সূত্র অনুযায়ী, এই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে এখনও উইঘুরদের আটকে রাখা হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে ছবিটিকে আমরা ‘রি ক্লেইম দি নেট’নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই। এই প্রতিবেদনে দেওয়া রয়েছে ব্যাক্তি সম্পর্কিত একটি ভিডিও। সেখান থেকে জানতে পারি লোকটির নাম ‘লুহুয়া’। প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি লুহুয়া নামের এই ব্যাক্তি চিনা সোশ্যাল মিডিয়া ‘কিউকিউ’ এবং ‘উই চ্যাটে’ দেশের পুলিশদের সমালোচনা করে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। তারপরেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং হাত বন্দী অবস্থায় ওই লোহার চেয়ারে বসানো হয়।

‘জি প্রিন্ট’ নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনেও এই ছবির উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিও ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন এবং এখানেও বলা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া চিনা পুলিশের বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করা লুহুয়া নামে এই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ মাধ্যম ‘সামিট নিউজ’-এর ২০১৯ সালের ২রা ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনেও এই ঘটনার পাওয়া যায়। এরপর আরও কিওয়ার্ড সার্চ করে আরও দেখতে পাই ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর এই ঘটনার একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করা হয়েছিল। ভিডিওতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করে তার নাম কি? সে উত্তর দেয় ‘লুহুয়া’। তার পড়ে ধৃত ব্যক্তিটি বলে ‘আমাকে ক্ষমা করে দিন আমার নেশার বসে ভুল মন্তব্য করেছিলাম।” ভিডিওতে আরও কথোপকথন শোনা যায়।
ইউটিউবেও এই ভিডিওটি পাওয়া যায়। ‘লিউটেনান্ট লফট’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। অন্যদিকে, এই একই ভিডিও ২০১৮ সালের ৪ অগস্ট একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে। অর্থাৎ, এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এটি বেশ পুরনো ভিডিও।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিনা পুলিশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার ধৃত একটি পুরনো ঘটনার ছবিকে ভিত্তিহীন দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:চিনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন দাবি করে পুরনো ঘটনার ছবি ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: False