
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সংবাদ মাধ্যম পূর্বের কলমের প্রথম পাতার একটি ছবি শেয়ার করে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারত এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য ওরিও বিস্কুট হারাম খাবার। পোস্টের এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে, ওরিও বিস্কুটে শূকরের চর্বি, বিতর্ক মুসলিম বিশ্বে। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিস্কুটে শূকরের চর্বি ও মদ নেই: কোম্পানি।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ALERT⚠️ OREOকোম্পানির মালিকের বক্তব্য শুধু আরব দেশগুলোর জন্য,উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য এবং পাকিস্তানের জন্য যে বিস্কুটগুলা কারখানাতে তৈরি করা হয় তাতে শুয়োরের চর্বি ও মদ মেশানো থাকে না। তার মানে এটাই বোঝা যাচ্ছে আমরা যারা ভারতীয় মুসলিম,বাংলাদেশের মুসলিম এরা শুয়োরের চর্বি ও মদ যুক্ত OREO বিস্কুট খায়।”
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। মুম্বাইয়ে অবস্থিত মন্ডেলেজ ইন্ডিয়া ফুডস প্রাইভেট কোম্পানি দ্বারা প্রস্তুত ওরিও বিস্কুটগুলি নিরামিষ এবং এতে শুকরের চর্বি থাকে না।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা পোস্টের এই প্রতিবেদনটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই প্রতিবেদনের হেডলাইনে এটিকে ৮ জানুয়ারি তারিখের বলে প্রতিবেদন বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়তে গিয়েই নজরে পড়ে সেখানে আবার ৭ জানুয়ারি তারিখ দেওয়া রয়েছে।
এর পর আমরা খুঁজে দেখি ’ওরিও বিস্কুটে শূয়রের চর্বি’ কেন্দ্রিক কোন প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যম প্রথম কলমের পক্ষ্য থেকে প্রকাশিত করা হয়েছে কি না। ফলে, দেখতে পাই ৭ জানুয়ারি তারিখের প্রতিবেদনে ’ওরিও বিস্কুটে শুকরের চর্বি’ কেন্দ্রিক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে, ’ওরিও বিস্কুট হালাল না হারাম, বিতর্ক আরব দুনিয়াতে’। যা পোস্টের ভাইরাল পোস্টের প্রতিবেদনের শিরোনাম থেকে আলাদা। কিন্তু প্রতিবেদনের বাকি অংশগুলো হুবহু মিলে যায়। এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে ভাইরাল পোস্টের প্রতিবেদনের শিরনামটি সম্পাদিত।
তুলনামূলক ফ্রেমটি দেখুন-

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাইরাল দাবিটি আরব দেশ সহ বিশ্বের বাকি দেশগুলিতে বিতর্কের ঝড় নিয়ে এসছিল। ফলে, ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে আরবে প্রচলিত আমেরিকান ভিত্তিক মন্ডেলেজ ইন্ডিয়া ফুডস প্রাইভেট কোম্পানি দ্বারা উৎপাদিত ওরিও বিস্কুটে এরকম কোন প্রমান পাওয়া যায়নি যেখান থেকে প্রমানিত হয় যে তাতে শুকরের চর্বি বা হারাম পন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। আমাদের কোম্পানিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির জন্য, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির জন্য এবং পাকিস্তানের জন্য যেসব বিস্কুট তৈরি হয় সেগুলিতে মদ বা শুকরের চর্বি নেই। আমরা হালাল সার্টিফিকেট নিয়ে থাকি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সউদি আরব এবং বাহারাইনে আমাদের বিস্কুট তৈরির কারখানা রয়েছে। ওরিও কোম্পানির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে এই বিস্কুট বিশ্বের বাজারে চলছে। তবে আমরা বাজার অনুযায়ী বিস্কুট তৈরির সময় সেখানকার মানুষদের ধর্ম, মনোভাব ইত্যাদি ফ্যাক্টর অবশ্যই বিচার করে থাকি। নির্দিষ্ট বাজারে আমরা হালাল খাদ্য অবশ্যই সরবরাহ করে থাকি। তবে আরব আমিরাতের বক্তব্য অনুযায়ী, আরব দেশের জন্য এই বিস্কুট মদ ও পর্ক মুক্ত হলেও আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশের জন্য হালাল সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।”
এখানে বলে রাখা ভালো, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হল- মাগরেব, সুদান, জিবুতি, সোমালিয়া, কোমোরোস, আফগানিস্তান। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো হল- আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, মিশর, লিবিয়া, সুদান।

পূর্বের কলম প্রতিবেদন | আর্কাইভ |
আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানা যায়। প্রতিবেদন গুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে
ওরিও কোম্পানির ওয়েবসাইটের সচরাচর জিজ্ঞাস্য সেকশনে ভাইরাল দাবির উত্তর দিয়ে জানিয়েছেন, ইউরোপে উৎপাদিত ওরিও বিস্কুট হালাল প্রত্যয়িত নয় কিন্তু তাদের গঠন বা উৎপাদন প্রক্রিয়া মুসলিম খাদ্যের জন্য অনুপযুক্ত করে না। এর ব্যতিক্রম হল, ওরিও স্ট্রবেরি চিজকেক, ওরিও চকো ব্রাউনি, ওরিও এনরবড মিল্ক অ্যান্ড হোয়াইট, ওরিও ক্যাডবেরি কোটেড, ওরিও ক্রাঞ্চি বাইটস ডিপ্স।

ওরিও-এর অফিসিয়াল টুইটার প্রোফাইল থেকে করা এক টুইটে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “হালাল সার্টিফিকেশন নির্ভর করবে আপনি যে দেশে থাকেন তার উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ওরিও কুকি হালাল সার্টিফাইড নয়। আপনার খাদ্যের উপযুক্ততা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সবসময় উপাদান এবং লেবেল পরীক্ষা করার পরামর্শ দিই।”
Embed: https://twitter.com/Shaziak97/status/1613959864941936640
ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো মন্ডেলেজ ইন্ডিয়া ফুডস প্রাইভেট কোম্পানি মুখপাত্র রাকেশ বানশাল-এর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, “ভারতে মন্ডেলেজ ইন্ডিয়া ফুডস প্রাইভেট কোম্পানির দ্বারা উৎপাদিত সমস্ত পন্য নিরামিষ। মোড়কের সবুজ বিন্দু এটি নিশ্চিত করে।”
ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI)-এর নিয়ম অনুযায়ী, কোন পন্য আমিষ না নিরামিষ, বা তাতে ডিম রয়েছে কি না তা বোঝাতে নির্দিষ্ট রঙের বিন্দুর ব্যবহার করা বাধ্যতামুলক। নিয়ম অনুযায়ী, নিরামিষ রঙের খাবারের প্যাকেটে সবুজ রঙের বিন্দু ব্যবহার করতে হবে।

ওরিও বিস্কুটের প্যাকেটে ব্যবহৃত সবুজ রঙের বিন্দু খাবারটির নিরামিষ হওয়ার প্রামান্যতা প্রদান করে।

নিষ্কর্ষঃ
তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। মুম্বাইয়ে অবস্থিত মন্ডেলেজ ইন্ডিয়া ফুডস প্রাইভেট কোম্পানি দ্বারা উৎপাদিত ওরিও বিস্কুটগুলি নিরামিষ এবং এতে শুকরের চর্বি থাকে না।

Title:ওরিও বিস্কুটগুলি নিরামিষ এবং এতে শুকরের চর্বি থাকে না। তথ্য যাচায় পড়ুন
Fact Check By: Nasim AResult: False