সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে এক মধ্যবয়স্ক ব্যাক্তির ছবি শেয়ার করে লম্বাচওড়া ক্যাপশনের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ছবির ব্যাক্তির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস যিনি পেশায় মৎস্যজীবী। ৮দিন আগে রবীন্দ্রনাথ সহ ৫জন মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবি হয় যার ফলে তার সঙ্গিরা গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যায় কিন্তু রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ পাঁচদিন একটি বাঁশকে আশ্রয় করে ভাসতে থাকে সমুদ্রের বুকে। পাচদিনের মাথায় পৌঁছায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম তটে এবং সেখানে বাংলাদেশি নাবিকেরা তাকে উদ্ধার করে।

ভাইরাল এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” লোকটির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস। বাড়ি দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলায়। পেশায় একজন মৎস্যজীবী। গত ৮ দিন আগে হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছিল সে ও তার ১৫ জন সাথী। হটাত প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। একসময় ট্রলার উল্টে যায়। প্রচন্ড ঢেউয়ে একেকজন একেক দিকে ভেসে যায়। রবীন্দ্রনাথও ভেসে যায়। পেশায় জেলে হওয়ায় জলের প্রতি ভয় ছিল তার কম, আর মনে ছিল প্রচন্ড সাহস। তাই গভীর সমুদ্রে ভেসে গেলেও বেঁচে থাকার সাহস হারান নি। ভাসতে থাকেন। ভাসতে থাকেন। উপরে আকাশ আর নিচে জল। রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন। ১ ঘন্টা ২ ঘন্টা করতে করতে ১ দিন থেকে ২ দিন হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের শরীর দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু বাঁচার কোন অবলম্বন খুঁজে পায় না। খাবার বলতে কেবল যখন বৃষ্টি নামে তখন সেই বৃষ্টির জল। কারণ সমুদ্রের লোনা জল পান করাও যায় না। তবুও রবীন্দ্রনাথ হার মানে নি। ভাসতে থাকে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে ৫ দিন পার হয়ে যায়। ৫ দিন পর প্রায় ৬০০ কি.মি. ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় এসে পৌছে। তখন বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি জাওয়াদের’ ক্যাপ্টেন অনেক দূর থেকে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে তার দিকে লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে মারে। কিন্তু সে ধরতে পারে না। তলিয়ে যায়। কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন জাত পাত, ধর্মীয় ভেদাভেদ, সীমানার কাঁটাতার ভুলে তার পিছনে ছুটতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে আবার তাকে দেখা যায়। ক্যপ্টেন তাৎক্ষনিক জাহাজ সেদিকে ঘুড়িয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে দেয়। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লাইফ জ্যাকেট ধরতে পারে। এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে আসতে থাকে। জাহাজের কাছাকাছি আসলে ক্রেন ফেলে তাকে জাহাজের উপর তোলা হয়। তাকে জাহাজে তোলার দৃশ্যটি জাহাজের একজন নাবিক ভিডিওতে ধারণ করেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথকে যখন সফল ভাবে জাহাজে তোলা সম্ভব হয় তখন জাহাজের সকল নাবিকেরা খুশিতে চিৎকার করে উঠে। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যায়। একজন মৃত্যু মুখের যাত্রীকে জীবন ফিরে দেয়ার যে উত্তেজনা ভিডিওটি দেখলে আপনিও ফিল করতে পারবেন। ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদের ক্যপ্টেনকে। ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদে উপস্থিত সকল নাবিককে। একজন মানব সন্তানকে জীবন ফিরিয়ে দিয়ে মানবতার যেই উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা পৃথিবীবাসীকে আরো বেশি মানবিক হতে শেখাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলতে শেখাবে। মানুষ হতে শেখাবে।“

তথ্য যাচাই করে পেয়েছি যে, মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ দাসের এই খবরটি পাঁচ বছরের পুরনো। পুরনো ঘটনাকে সম্প্রতির দাবি করে শেয়ার করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ সহ ‘আজতাক হিন্দি’র প্রতিবেদনে এই ছবির উল্লেখ পাই। ১৫ জুলাই,২০১৯, তারিখের প্রতিবেদনগুলো অনুযায়ী, রবীন্দ্রনাথ দাস নামের এই মৎস্যজীবীর বাড়ি দক্ষিণ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের নারায়ানপুরে। রবীন্দ্রনাথ ও তার ১৪জন সাথি মিলে ৪ জুলাই তারিখে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেই সময় আবহাওয়ার প্রকোপে তাদের ট্রলার মুচড়ে পরে এবং প্রান বাঁচাতে জলেই ঝাপ দেই। যাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথই শুধু বেঁচে ফিরে। রবীন্দ্রনাথ জ্বালানীর ড্রাম ও একটি বাঁশকে আশ্রয় করে ভেসেছিলেন দীর্ঘ ৫ দিন। ভাসতে ভাসতে পৌঁছায় বাংলাদেশের চট্টগ্রামের তটে যেখানে বাংলাদেশি নাবিকের জাহাজ ১০ জুলাইয়ে তাকে উদ্ধার করে।

প্রতিবেদন আর্কাইভ
আজতক প্রতিবেদন আর্কাইভ

উদ্ধারের পর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বিমানে করে ঢাকা থেকে কলকাতা পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথ দাসকে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, দীর্ঘ পাঁচ দিন সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকার পর মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ দাসের উদ্ধারের খবরটি সম্প্রতির নয় বরং ২০১৯ সালের।

Avatar

Title:মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ দাসের উদ্ধারের খবরটি সম্প্রতির নয়, ২০১৯ সালের

Fact Check By: Nasim Akhtar

Result: Missing Context