
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ব্যাঙ্কঋণ শোধ না করতে পারায় মাত্র ৪ মাসের জেল ও ২০০০ টাকা জরিমানার মাধ্যমে রেহাই পেলেন বিজয় মাল্য।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “যদি এই দেশভক্তের এতো বড়ো শাস্তি দয়া করে ক্ষমা করে দেন সুপ্রিম কোর্ট তাহলে আমরা ভারতীয়রা সুপ্রিম কোর্টের উপর চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। যে বিজয় মালিয়া ৯ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়ে রঙ্গলিলায় ফুর্তি করে ভক্তদের মন জিতে নিয়েছেন সেই মহাপুরুষকে দীর্ঘ ৪ মাসের জেল আর অসামান্য (যেটা উনার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব) ২০০০ (দুই হাজার) টাকা জরিমানা, এটা কোনো ভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছিনা। আমরা চাই উনার শাস্তি ক্ষমা করে দিয়ে দেশের নাম আরো উজ্জ্বল করা হোক।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। আদালত অবমাননার মামলায় বিজয় মাল্যকে ৪ মাসের কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা সাজা দেওয়ার খবরকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে আনন্দবাজার পত্রিকায় সংবাদ মাধ্যমের তরফ থেকে এরকম কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। শিরোনাম সার্চ করতেই প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়ে যাই। ১১ জুলাই তারিখে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্যগোপন ও ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করার জন্য আদালত বিজয় মাল্যকে ৪ মাসের কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা সাজা ঘোষণা করে। এই আদেশ অমান্য করলে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে আদালতের তরফে।

সংবাদমাধ্যম ‘আজতক বাংলা’-এর ১১ জুলাই তারিখের একটি প্রতবেদনেও এই খবরটি দেখতে পাই। সেখানেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে আদালত অবমাননার জন্য বিজয় মাল্যকে ৪ মাসের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা সাজা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এআনআই)-এর একটি টুইটেও এই খবরটি দেখতে পাওয়া যায়। এই সাজা বিজয় মাল্যর বিরুদ্ধে চলা ঋণখেলাপি মামলার রায় নয়। তথ্যগোপন ও আদালতের অবমাননার কারণে ২০১৭ সালে পলাতক ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। এই মামলায় রায়ে বিজয় মাল্যকে ৪ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পর শোধ না করেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর বিরুদ্ধে। মোট ৯,০০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে। স্টেট ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া সহ একাধিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেন তিনি।
ঋণখেলাপির মামলা চলাকালীন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের তরফে একটি মামলা দায়ের করে অভিযোগ করা হয় যে বিজয় মাল্য আদালতের আদেশের ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ করছে এবং ব্রিটিশ ফার্ম ডিয়াজিও থেকে প্রাপ্ত ৪০ মিলিয়ন ডলার তার সন্তানদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালত অবমাননার এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট মাল্যকে দোষী সাবস্ত্য করে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এরপর চলতি বছরের ১১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালের এই আদালত অবমাননা মামলার সাজা হিসেবে ৪ মাসের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়।
অতএব, উপরোক্ত প্রমাণ এবং তথ্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় বিজয় মাল্যকে দেওয়া ৪ মাসের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা সাজার সাথে ৯,০০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলার কোনও সম্পর্ক নেই।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিস্যান্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। আদালত অবমাননার মামলায় বিজয় মাল্যকে ৪ মাসের কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা সাজা দেওয়ার খবরকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:ঋণখেলাপি মামলায় মাত্র ৪ মাসে কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানার সাজা দেওয়া হল বিজয় মাল্যকে? জানুন সত্যতা
Fact Check By: Rahul AResult: Missing Context