
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মঞ্চস্থ ভারত মাতার বেশে থাকা মেয়েটিকে জবরদস্তি নামাজ পড়ানো হল। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক মঞ্চের ওপর একটি মেয়েকে ভারত মাতার বেশে সাজানো আছে এবং ৪ জন শিশু এসে মেয়েটির মাথায় পর্দা পরিয়ে হাঁটু গেঁড়ে নামাজের অবস্থায় বসিয়ে দিচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “* এই দেখুন, এই জিহাদিদের খেলা এখন স্কুলেও শুরু হয়েছে, ১৫ই আগষ্টে স্কুলের অনুষ্ঠানে ভারত মাতার যে সেজেছিল তার মাথা থেকে মুকুট সরিয়ে নাওজি চাদর পরিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীত প্রার্থনা বদলে নামাজ শেখানো হচ্ছে, এই সবই কি স্কুলগুলির যোগসাজেশ!!“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লখনউ এর এক স্কুলে ভারত মাতার চরিত্রে অভিনয় করা মেয়েটিকে সমস্ত ধর্ম পালনের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা যুক্ত ভিডিওর কয়েক সেকেন্ডের অংশকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে কি ফ্রেমে ভাগ করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, খুব সহজেই এই ভিডিওর আসল উৎস পেয়ে যায়। সংবাদ মাধ্যম আজতাক এর ১৫ আগস্ট তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের বাজার খালা থানার অন্তর্গত ’শিশু ভারতীয় বিদ্যালয়ে’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা “চার ছেলে” নামের একটি নাটক পরিবেশন করেছিল যেখানে ভারত মাতার চরিত্রে থাকা মেয়েটি সব ধর্মের রীতি নিয়ম পালন করে দেখিয়েছিল এবং সব ধর্মের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিল।

তারপর, ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো বাজার খালা থানার ডি এস পি সুনিল কুমার শর্মার সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন “সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি অসম্পূর্ণ। কেউ মূল ভিডিওর একটি ছোট ক্লিপ শেয়ার করেছেন। এই ভিডিও দিয়ে মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে। আমরা আমাদের টুইটার হ্যান্ডেলে বিষয়টি স্পষ্ট করেছি।“
লখনউ পুলিশ কমিশনারের টুইটার হান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি পাওয়া যায়। এখানে দেখা যাচ্ছে, মঞ্চে থাকা বাচ্চারা প্রথমে হিন্দু ধর্ম অনুসারে পুজা করলো, তারপর মুসলিম বেশে নামাজ আদায় করলো এবং পরে শিখ ও খ্রিস্টান ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করলো।
এই টুইটের রিপ্লাইয়ে পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে লেখা হয়েছে “সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যাতে একটি মেয়েকে তার মাথা থেকে ভারত মাতার মুকুট সরিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ভিডিওটি বাজার খালার অন্তর্গত শিশু ভারতীয় বিদ্যালয়ের। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পুরো ভিডিওটি দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিশুদের দ্বারা একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে, যাতে শিশুরা ধর্মের নামে ঝগড়া না করার এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দেয়। টুইটকারী অর্ধ-অসম্পূর্ণ অংশ টুইট করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে আগাম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। “
নীচে ভাইরাল ভিডিও ও আসল ভিডিওর তুলনামূলক ফ্রেমটি দেখুনঃ
তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় কয়েক সেকেন্ডের এই ভাইরাল ক্লিপটি সম্পাদিত। মুল ভিডিওতে ভারত মাতার চরিত্রে মেয়েটিকে সব ধর্মের রীতি পালনের মাধ্যমে সামজিক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিস্যান্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লখনউ এর এক স্কুলে ভারত মাতার চরিত্রে অভিনয় করা মেয়েটিকে সমস্ত ধর্ম পালনের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা যুক্ত ভিডিওর কয়েক সেকেন্ডের অংশকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে

Title:স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মঞ্চস্থ ভারত মাতার বেশে থাকা মেয়েটিকে জবরদস্তি নামাজ পড়ানোর দাবিটি মিথ্যে
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context