
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার জলের তলায় খুঁজে পাওয়া প্রস্তর খন্ডের কয়েকটি ছবিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলি গুজরাটের পশ্চিম উপকূলের উপদ্বীপ কাথিয়াবাড়ে সমুদ্রের ভিতর খুঁজে পাওয়া প্রাচীন দ্বারকা নগরীর ধ্বংসাবশেষ। পোস্টটিতে মোট সাতটি ছবি রয়েছে এবং সবগুলি ছবি জলের নিজের ধ্বংসাবশেষের। উদাহরণ স্বরূপ, একটি ছবি একটি সিংকে দেখা যাচ্ছে, অন্য একটি ছবিতে সিঁড়ি রয়েছে এবং তার পাশে কয়েকটি ভেঙে যাওয়া স্তম্ভ দেখা যাচ্ছে।
পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “কয়েক বছর আগে National institute of oceanography গুজরাটের পশ্চিম উপকূলের উপদ্বীপ কাথিয়াবাড়ে সমুদ্রের ভিতর প্রাচীন দ্বারকা নগরীর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। অনেক দরজা থাকার জন্য এই নগরের নাম হয়েছিল দ্বারকা। এই নগরীর চতুর্দিকে অনেক উঁচু উঁচু দেওয়াল ছিল তাতে অনেক দরজা ছিল।এই গুলোর ধ্বংসাবশেষ আজ ও সমুদ্র গর্ভে আছে। জয় শ্রীকৃষ্ণ।হরে কৃষ্ণ।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। এগুলি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে পাওয়া জলের নিচের ধ্বংসাবশেষের ছবি।
তথ্য যাচাই
এই ছবিগুলির অনুসন্ধান পেতে আমরা প্রত্যেকটি ছবিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।
১ম ছবি
কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্টস কিড়া’র একটি প্রতিবেদনে এই ছবিটিকে দেখতে পাই। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিলের এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি এটি আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের ‘নেপচুন মেমরিয়াল রিফ’ নামে একটি জলের নিচের কবরস্থানের ছবি।
২য় ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট সাটারস্টকে এই ছবিটিক দেখতে পাই। ছবিটির ক্যাপশনে ডেনিশ ভাষায় লেখা রয়েছে। ক্যাপশনটিকে গুগলে ট্রান্সলেট করে জানতে পারি তাতে লেখা রয়েছে, “ডুবে যাওয়া আটলান্টিস সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের থ্রিডি রেন্ডারিং বা প্রতিকৃতি।“
৩য় ছবি
এই ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে দেখতে পাই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দাবি করা হচ্ছে এটিও ডুবে যাওয়া আটলান্টিসের থ্রিডি রেন্ডারিং। যদিও এটি ঠিক কোথাকার ছবি সেই বিষয়ে আমরা প্রত্যক্ষ কিছু খুঁজে পাইনি।
৪র্থ ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই, বেশ কয়েকটি ভ্রমন ওয়েবসাইট অনুযায়ী এটি ভূমিকম্পে তলিয়র যাওয়া শহর পোর্ট রয়্যালের ছবি। এটি জ্যামাইকাতে অবস্থিত। ১৬৯২ সালে এক ভয়াবহ ভুমিকম্পের পর এই শহরটি তলিয়ে যায়।
৫ম ছবি
ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পেই, কয়েকটি ওয়েবসাইট দাবি করছে এটি কিউবাতে খুঁজে পাওয়া জলের নিচের ধ্বংসাবশেষের ছবি। অনেকেরই মত এটি তলিয়ে যাওয়া আটলান্টিস শহর যদি প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি এটি জলে তরিয়ে যাওয়া সাধারণ অংশ। এই ছবিটিরও সঠিক অনুসন্ধান আমরা খুঁজে পাইনি কিন্তু এটি যে ভারতের গুজরাটের ছবি নয় তা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত।
৬ষ্ঠ ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই কোথাও দাবি করা হচ্ছে এটি গুজরাটের দ্বারকা দ্বীপের ছবি। আবার কোথাও দাবি করা হচ্ছে এটি গ্রিসের ডুবে যাওয়া এলোন্ডা দ্বীপের ছবি। এছাড়াও এটি যে থ্রীডী প্রতিকৃতি নেই সেই সম্ভাবনাকেও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।
৭ম ছবি
গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই সমস্ত ফলাফলে এটিকে চিনের লায়ন সিটি বলে দাবি করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেল-এর একটি প্রতিবেদনেও এই ছবিটিকে দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা সাতটির মধ্যে চারটি ছবির সঠিক অনুসন্ধান করতে পেরেছি এবং তিনটি ছবির ঠিক কোথাকার তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। যদিও এগুলি যে গুজরাটের দ্বারকা দ্বীপের ছবি এরকম কোনও প্রমান বা তথ্যও পাওয়া যায়নি।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি বিভ্রান্তিকর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জলের নিচে খুঁজে পাওয়া ধ্বংসাবশেষের ছবি।