সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করে সেটিকে ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি ভবনে আগুন লেগেছে এবং দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। জ্বলন্ত এই ভবনের সামনে অনেকগুলি লোক দাড়িয়ে রয়েছে।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ত্রিপুরা মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন সবাই ! ভারতের একটি ছোট্ট অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬ টি মসজিদে আগুন এবং অনেক ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের উপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে। মুসলিমদের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পা চাটা মোদী মিডিয়া আর ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কথা বাদ দিলাম। মুসলিম রাজনৈতিক নেতারাও ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড় দেন কিন্ত ছেড়ে দেন না ! #TripuraMuslimsUnderAttack #TripuraViolence #SaveTripuraMuslims #SaveTripura #StandwithTripuraMuslims #SaveTripura #savemasjid #saveQuran।“

তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। ২০১২ সালের শ্রীনগরের একটি মাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্টআর্কাইভ

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে দুর্গা প্রতিমার পায়ে ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর আসের ওই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই আক্রমনের বিরুদ্ধে ভারতের অনেক জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়। ২১ অক্টোবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-এর নেতৃত্বে ত্রিপুরার গোমতী জেলায় এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মিছিল হিংসাত্মক রুপ ধারন করে যার জেরে বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ও মসজিদে হামলা করা হয়। এরপর ২৬ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর নেতৃত্বে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় এবং সেখানেও বিক্ষোভকারীদের কিছুসংখ্যক লোক রোয়া বাজারে কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে এবমহ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে আক্রমণ করে। ৩০ অক্টোবর লক্ষিপুর এবং কালিয়াশহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভাইরাল ছবিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে সংবাদমাধ্যম ‘কাশ্মীর লাইফ’র একটি প্রতিবেদনে এই ছবিকে দেখতে পাই। এই খবর অনুযায়ী, এটি ২০১২ সালের শ্রীনগরের দাস্তাগির সাহিব মাজারে আগুন লাগার ছবি।

প্রতিবেদন আর্কাইভ

সংবাদ মাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-এর ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০ বছর পুরনো এই মাজারে আগুন লাগার ঘটনায় ২ ডজন লক আহত হয়। শর্ট সার্কিটের কারণে এদিন সকাল ৬.৩০ টায় কাঠের গম্বুজে আগুন লাগে এবং পড়ে তা সম্পূর্ণ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদটি পড়ুন এখানে

এছাড়া, সংবাদ মাধ্যম ‘এবিপি নিউজ’-এর ইউটিউব চ্যানেলে এই ঘটনার একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১২ সালের শ্রীনগরের একটি মাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বলে ভুয়ো দাবি করে ২০১২ সালের ছবি ভাইরাল

Fact Check By: Rahul A

Result: False