
সম্প্রতি সামজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার সেটিকে সম্প্রতি পরলোক গমনকারী ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আফ্রিকানদের খাবার ছুঁড়ে দেওয়ার ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে, । পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাদা কালো ছবির একটি ভিডিও যেখানে রাজকীয় বেশে দুই মহিলা বাচ্চা ছেলে মেয়েকে লক্ষ্য করে কিছু ছুঁড়ে দিচ্ছে এবং ছেলে মেয়েগুলো তা কুড়োচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে “খাবার দিচ্ছেন মারা যাওয়া যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলি*জাবেথ…. আর যারা খাবার কুড়িয়ে নিচ্ছে তারা হচ্ছে আফ্রিকার মানুষরা…. এই তথাকথিত সভ্য মানুষ গুলো কতটা নিকৃষ্ট ছিল তার একটা উদাহরণ। ভিডিওটিএকজন আফ্রিকান নাগরিক এর টাইমলাইন থেকে সংগ্রহ করা।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। রাজকীয় বেশে দেখতে পাওয়া মহিলা ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ নয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সাত বছর রাজত্ব করে দীর্ঘতম রাজত্বকারী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ছাপ রেখে ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে পরলোক গমন করলেন ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সম্প্রতি তাকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের সত্য, মিথ্যা পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কি ফ্রেমে ভাগ করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। অস্ট্রেলিয়ান শিল্প সংস্থার ওয়েবসাইট thesubstation.org.au অনুযায়ী ইহা ফ্রান্সের চলচিত্রের দৃশ্য। ’গ্যাব্রিয়েল ভেইর’ পরিচলিত এই চলচিত্রের নাম ’এনফ্যান্টস অ্যানামাইটস রামাসান্ট ডেস সাপেকস ডেভেন্ট লা প্যাগোড ডেস ডেমস’।
তাছাড়াও আমার একটি ফ্রান্স ওয়েবসাইট পাই যেখানে এই ভিডিও কেন্দ্রিক বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। catalogue lumiere নামের এই সাইটে লুমিয়ের কোম্পানি দ্বারা তৈরি আর্কাইভ করা চলচ্চিত্রগুলির সম্পূর্ণ ক্যাটালগ প্রদান করে।
এখানেও ভাইরাল ভিডিওটিকে ’গ্যাব্রিয়েল ভেইর’ পরিচলিত চলচিত্রের’এনফ্যান্টস অ্যানামাইটস রামাসান্ট ডেস সাপেকস ডেভেন্ট লা প্যাগোড ডেস ডেমস’-এর দৃশ্য বলে জানানো হয়েছে। এই চলচিত্রটি ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ফরাসি ইন্দোচিনা (বর্তমান ভিয়েতনাম) আন্নামের ( ১৯৪৫ সাল অবধি ভিয়েতনামের নাম) ফরাসি উপনিবেশে কামেরাবন্দি করা হয়েছিল। ১৯০১ সালের ২০ জানুয়ারি তারিখে এই চলচিত্র ফ্রান্সের লিওনে “Indo-Chine: Annamese children picking up cash in front of the ladies’ pagoda(বাংলা অনুবাদ-নারীদের সামনে টাকা তুলে নিচ্ছে আন্নামী শিশুরা)” নামে প্রদর্শন করা হয়েছিল।
এখানে বলে রাখা ভালো, sapeques হল ১৯ শতকের শেষদিকে ফ্রান্স দ্বারা জারি করা ইন্দোচীনে অর্থাৎ ভিয়েতনামে ব্যাবহৃত মুদ্রা।
ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মহিলা দুই জন হল পল ডুমারের স্ত্রী মাদাম পল ডুমার এবং তার মেয়ে। এই পল ডুমার তৎকালীন সময়ে ইন্দোচীনের গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল এবং পরে সে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
উপরিউক্ত তথ্য থেকে বুঝতে পারি, ভিডিওতে মহিলাদ্বয় কোন খাদ্য নয় বরং মুদ্রা ছুঁড়ছে।

এই চলচিত্র ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে এবং রানি এলিজাবেথ জন্মগ্রহন করেছিল ২১ এপ্রিল ১৯২৬ তারিখে। তাহলে স্পষ্ট হয়ে যায়, চলচিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল রানির জন্মগ্রহনের আগেই। এক কথায়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মহিলা রানি এলিজাবেথ নয়।
ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে লুমিয়ের কোম্পানির চলচিত্র সংগ্রহের একটি চ্যানেল পাই। ভিডিওটি দেখুন নীচেঃ
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিস্যান্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। রাজকীয় বেশে দেখতে পাওয়া মহিলা ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ নয়

Title:না, ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আফ্রিকানদের খাবার ছুঁড়ে দিচ্ছেন না
Fact Check By: Nasim AResult: False