মণিপুরে চলমান সহিংসতার মধ্যে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে শেয়ার করে সেটিকে মণিপুরে মহিলার উপর আক্রমনের ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টের এই ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে আর্মিদের মত পোশাক পরিহিত কয়েকজনের দল একজন মেয়েকে মাঝ রাস্তায় নিষ্ঠুর ভাবে আক্রমন করছে। ভিডিওর উপরে লেখা হয়েছে, ‘মণিপুরে বেটি বাঁচাও।’

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি মণিপুরে চলমান হিংসার সাথে সম্পর্কিত নয়।

ফেসবুক পোস্ট

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ মে তারিখ থেকে শুরু হয়েছে মণিপুরে হিংসা এবং এখনও চলমান। যার দরুন প্রান হারিয়েছে ১৪০ জনেরও বেশি এবং আহত হয়েছে ৩১০ জনের বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে মণিপুর রাজ্য সরকার ইন্টারনেট ব্যান করেছিল। এর মাঝেই একটি ভিডিও ভিডিও মণিপুর থেকে উঠে আসে যেখানে দুইজন নারীকে নগ্ন করে জনগণের একটি ভিড় প্রকাশ্য রাস্তায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত বর্গের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, রাগ প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া সহ রাস্তায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার বার্তা দিয়েছেন দেশবাসীকে।

তথ্য যাচাইঃ

ভাইরাল এই ভিডিওর আসল উৎস খুঁজতে ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কিফ্রেমে ভাগ করি। ফলে, ভাইরাল ভিডিও কেন্দ্রিক বেশ কিছু প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ‘clickforpdf’ নামের এক পোর্টালের ৬ দিসেম্বর,২০২২, তারিখের প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে,”এনইউজি জানিয়েছে যে তামুতে একজন মহিলাকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনাটি সামরিক আচরণবিধির লঙ্ঘন এবং এটি গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় ঐক্য সরকারের সশস্ত্র শাখা People's Defence Force () কর্তৃক এই মেয়েটিকে মারধর এবং হত্যা করা হয়েছিল।

এনইউজি (NUG) মানে হল National Unity Government of Myanmar অর্থাৎ মায়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার এবং তামু হল- মায়ানমারের একটি শহর।

প্রতিবেদনআর্কাইভ

সংবাদমাধ্যম ‘মায়ানমার নাউ’-এর ৬ ডিসেম্বর,২০২২, তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী মেয়েটির নাম অ্যাই মার তুন যার বয়স ২৫ বছর। তথ্যদাতা অভিযোগে তাকে মারধর এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। NUG এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সেক্রেটারি Naing Htoo Aung সোমবার মায়ানমার নাউকে বলেছেন যে ঘটনাটি জুন মাসে তামু শহরে হয়েছিল। মারধর করার এই ভিডিওটি ছিল ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড দীর্ঘ। ভিডিওটি সর্ব প্রথম ১৯ নভেম্বর তারিখে একটি অজানা ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছিল যা পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর ভিডিওটি সামরিক সমর্থক ব্যবহারকারীদের মধ্যে টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিল।

মায়ানমার নাউ প্রতিবেদনআর্কাইভ

এই ঘটনাকে ঘিরে ৫ ডিসেম্বর তারিখে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে স্টেটমেন্ট জারি করেছিল NUG পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন এখানে

তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় যে ভাইরাল এই ভিডিওটি মণিপুরে চলমান হিংসার সাথে সম্পর্কিত নয়। ২০২২ সালে মায়ানমারে একজন মেয়েকে নির্মমভাবে মারধরের ভিডিওকে মণিপুর হিংসার সাথে জুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে।

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি মারধরের শিকার মেয়েটির নাম অ্যাই মার তুন। মায়ানমারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) মেয়েটিকে গুপ্তচর সন্দেহে মারধর করেছিল এবং নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ২০২২ সালের জুন মাসে মায়ানমারের তামু শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।

Avatar

Title:না, মহিলাকে নির্মমভাবে মারধরের এই ভিডিওটি মণিপুর হিংসার সাথে সম্পর্কিত নয়

Written By: Nasim A

Result: False