১ জুলাই থেকে ভারত জুড়ে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর হচ্ছে। এই আবহে ট্রেন যাত্রাকে ঘিরে একটি দীর্ঘ পোস্ট বেশ ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, ততকাল টিকিট বাতিল করলে ফেরত পাওয়া যাবে ৫০% টাকা, বিভিন্ন ভাষায় রেলের টিকিটের সুবিধা শুরু হতে চলেছে, শতাব্দী ও রাজধানী ট্রেনের কাগজের টিকিট দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে, গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই ওয়েক-আপ কলের সুবিধা প্রদান করা হবে।

ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” ২ রা জুলাই রেলের অনেক নিয়মগুলি পাল্টাচ্ছে।যেগুলি পাল্টানো হলো সেইগুলো নিচে দেওয়া হলো(( IRCTC RULES )) *1*) অপেক্ষমাণ তালিকার(waiting list) ঝামেলা শেষ হবে। রেলওয়ের দ্বারা পরিচালিত সুবিধা ট্রেনে যাত্রীদের নিশ্চিত (confirm) টিকিটের সুবিধা দেওয়া হবে। *2*) 1 জুলাই থেকে, তত্কাল টিকিট বাতিল করলে 50 শতাংশ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। *3*) ১ জুলাই থেকে তত্কাল টিকিটের নিয়মে পরিবর্তন এসেছে। সকাল 10 টা থেকে 11 টা পর্যন্ত এসি কোচের জন্য টিকিট বুকিং করা হবে এবং স্লিপার কোচ 11 টা থেকে 12 টা পর্যন্ত বুক করা হবে। , *4*) ১ জুলাই থেকে রাজধানী এবং শতাব্দী ট্রেনে পেপারলেস টিকিটের সুবিধা শুরু হচ্ছে। এই সুবিধার পরে, শতাব্দী এবং রাজধানী ট্রেনে কাগজের টিকিট পাওয়া যাবে না, পরিবর্তে আপনার মোবাইলে টিকিট পাঠানো হবে। *5*) শীঘ্রই বিভিন্ন ভাষায় রেলের টিকিটের সুবিধা শুরু হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত রেলওয়েতে হিন্দি ও ইংরেজিতে টিকিট পাওয়া গেলেও নতুন ওয়েবসাইটের পর এখন বিভিন্ন ভাষায় টিকিট বুক করা যাবে। *৬*) রেলওয়েতে টিকিটের জন্য সব সময় ঝগড়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ১ জুলাই থেকে শতাব্দী ও রাজধানী ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়ানো হবে। , *7*) ভিড়ের সময় ট্রেনের আরও ভালো সুবিধা প্রদানের জন্য, বিকল্প ট্রেন সমন্বয় ব্যবস্থা, সুবিধা ট্রেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের ডুপ্লিকেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। , *8*) রেল মন্ত্রক 1 জুলাই থেকে রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এবং মেইল-এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনে সুবিধা ট্রেন চালাবে। *9*) রেলওয়ে 1লা জুলাই থেকে প্রিমিয়াম ট্রেনগুলি পুরোপুরি বন্ধ করতে চলেছে। *10*) সুবিধা ট্রেনে টিকিট ফেরত দিলে ভাড়ার 50% ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়াও, AC-2-এ 100/- টাকা, AC-3-এ 90/- টাকা, স্লিপার-এ যাত্রী প্রতি 60/- টাকা কাটা হবে। জনস্বার্থে জারি করা হয়েছে *ট্রেনে নিশ্চিন্ত ঘুমান*, গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছতেই রেলওয়ে জাগিয়ে দেবে ... 139 নম্বরে কল করে আপনাকে আপনার পিএনআর(PNR) -এ ওয়েকআপ কল-ডেস্টিনেশন অ্যালার্ট সুবিধা সক্রিয় করতে হবে। গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছানোর আগে রাতে ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের জন্য রেলওয়ে ওয়েকআপ কল-গন্তব্য সতর্কতা সুবিধা শুরু করেছে। *গন্তব্য সতর্কতা কি* > এই বৈশিষ্ট্যটির নাম *গন্তব্য সতর্কতা*। সুবিধা চালু হলে, গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই মোবাইলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। > বৈশিষ্ট্যটি সক্রিয় করতে *সতর্ক* টাইপ করার পর *PNR নম্বর* টাইপ করতে হবে এবং পাঠিয়ে দিন 139 নম্বরে। > 139 *কল করতে হবে*। কল করার পরে, ভাষা নির্বাচন করুন এবং তারপরে 7 ডায়াল করুন। *7 ডায়াল করার পর, পিএনআর নম্বর ডায়াল করতে হবে*। এর পরে এই পরিষেবা চালু করা হবে > এই বৈশিষ্ট্যটির নাম *ওয়েক-আপ কল*। রিসিভ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল বেল বাজবে এই পরিষেবা চালু হলে, স্টেশনে আসার আগে মোবাইল বেল বেজে উঠবে। আপনি ফোন রিসিভ না করা পর্যন্ত এই ঘণ্টা বাজতে থাকবে। ফোন পাওয়ার পর যাত্রীকে জানানো হবে যে স্টেশনে আসতে চলেছে। , 🙏 *অনুগ্রহ করে এই বার্তাটি সবাইকে পাঠানোর অনুরোধ রাখলাম কারণ এটা আপনার এবং সাধারণ মানুষের কাছে জানা খুব দরকারী।কারণ ট্রেন হলো আমাদের মনুষ্য সমাজের লাইফ লাইন।🙏 🙏জনস্বার্থে প্রচারিত 🙏।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি যে বেশির ভাগ দাবি গুলোই ভুয়ো। ততকাল টিকিট করার সময়, সুবিধা ট্রেনের ব্যাবস্থা, টিকিট বাতিলের দরুন জরিমানা স্বরূপ কিছু টাকা কেটে নেওয়া নিয়মগুলো আগে থেকেই তা রয়েছে যা ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, একই দাবি সম্বলিত কিছু ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায় যেগুলো ২০১৬ সালে পোস্ট করা হয়েছে। যা থেকে ধারনা হয় যে, ট্রেন যাত্রা সম্পর্কিত এই দাবি গুলো ২০১৬ সালেও ভাইরাল হয়েছিল।

ফেসবুক পোস্ট ফেসবুক পোস্ট

‘এনডি টিভির’ ২৪ জুন,২০১৬, তারিখের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে টিকিটের নিয়মে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছিল রেল।

প্রতিবেদন আর্কাইভ

তারপর, ৩০ জুন, ২০১৭ তারিখে জারি করা রেল মন্ত্রকের একটি প্রেস বার্তা পাওয়া যায় যেখানে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের প্রতিটি দাবিকে উল্লেখ করে স্পষ্ট করে যে সংবাদটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন।

এই প্রেস বার্তায় লেখা হয়েছে, লক্ষ্য করা গেছে যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, WhatsAPP গ্রুপ এবং কিছু ওয়েবসাইটগুলিতে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় রেল ১লা জুলাই, ২০১৭ থেকে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এবং নতুন সুবিধা চালু করছে। এই খবরটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। মিডিয়ার একাংশ ভারতীয় রেলওয়ে ব্যবস্থার অনুমোদিত সূত্র থেকে যাচাই না করেই এই খবর প্রকাশ করেছে। এতে রেল ব্যবহারকারীদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, রেলপথ মন্ত্রক নিম্নলিখিতগুলি স্পষ্ট করতে চাইঃ-

১. ১লা জুলাই, ২০১৭ থেকে এই ধরনের কোনো নতুন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। একমাত্র নতুন বিষয় হল রেলওয়ে, অন্যান্য বিভাগের মতো, ১লা জুলাই, ২০১৭ থেকে GST চালু করছে। (GST-তে পৃথক প্রেস রিলিজ পাওয়া যাচ্ছে)

২. রেলওয়ে অনলাইন (ই-টিকিট) এবং PRS কাউন্টার উভয়ের মাধ্যমে অপেক্ষা তালিকাভুক্ত টিকিট বিক্রি করছে। এই স্কিমে কোনও পরিবর্তন নেই এবং রেলওয়ে অনলাইন এবং PRS কাউন্টার উভয়ের মাধ্যমে অপেক্ষা তালিকাভুক্ত টিকিট বিক্রি চালিয়ে যাবে।

৩. রেলওয়ে জুলাই, ২০১৫, থেকে ট্রেনের সুবিধা ক্লাস চালাচ্ছে এবং এই ধরনের ট্রেন চলতে থাকবে। প্রয়োজনে এই ধরনের ট্রেনে অপেক্ষা তালিকাভুক্ত টিকিটও পাওয়া যায়। সুবিধা ট্রেন টিকিটের ক্ষেত্রে আংশিক ফেরতের বিধান স্কিমের শুরু থেকেই উপলব্ধ। তাই এ বিষয়ে নতুন কোনো পরিবর্তন নেই।

৪. রেলওয়ে নভেম্বর, ২০১৫-এ নতুন ফেরত বিধিগুলি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে৷ এখনও নিয়মগুলি অব্যাহত রয়েছে এবং সেগুলিতে কোনও পরিবর্তন নেই।

৫. শতাব্দী এবং রাজধানী ট্রেনের জন্য কাগজের টিকিট বন্ধ করার কোনো প্রস্তাব নেই এবং সেই জন্য ট্রেনের কোনো ক্লাসে। যাইহোক, অনলাইনে টিকিট বুকিংকারী যাত্রীদের জন্য (অর্থাৎ ই-টিকিট) এসএমএস দ্বারা প্রাপ্ত টিকিট পরিচয়ের অনুমতিযোগ্য প্রমাণ সহ ভ্রমণের জন্য একটি বৈধ কর্তৃপক্ষ।

৬. ২০১৫ সালে তত্কাল টিকিটের বুকিংয়ের সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং এসি ক্লাসের জন্য বুকিং সকাল 10:00 AM এবং নন-এসি ক্লাসের জন্য 11:00 AM এ খোলা হয়। যাত্রার তারিখ ব্যতীত যাত্রার প্রকৃত তারিখের একদিন আগে। এই সময়ের কোনো পরিবর্তন নেই এবং একই ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।

৭. আবার তত্কাল টিকিটের রিফান্ডের নিয়মে কোন পরিবর্তন নেই। বিদ্যমান নিয়মের অধীনে, নিশ্চিত তৎকাল টিকিট/ডুপ্লিকেট তৎকাল টিকিট বাতিলের ক্ষেত্রে কোনও ফেরত দেওয়া হয় না। এই নিয়ম চালু আছে ক্রমাগত।

৮. রেলওয়ে ইতিমধ্যেই তার হেল্পলাইন নম্বর ১৩৯-এ তার গন্তব্য সতর্কতা সুবিধা চালাচ্ছে। এছাড়াও, কিছু রাজধানী এবং শতাব্দী ট্রেনে একটি বিনামূল্যের গন্তব্য সতর্কতা পরিষেবাও চালু করা হয়েছে একটি পাইলট ভিত্তিতে ট্রেন পৌঁছানোর জন্য সকাল ১১:০০ AM থেকে ৬-এর মধ্যে: 00 AM ইতিমধ্যে উপলব্ধ. তাই এই সুবিধারও কোনো পরিবর্তন নেই।

৯. ট্রেনে ছাড় পাওয়ার জন্য আধার বাধ্যতামূলক করার এমন কোনও প্রস্তাব নেই৷

১০. আঞ্চলিক ভাষায় টিকিট (উভয়, ই টিকিট এবং পিআরএস টিকিট) ছাপানোর কোনও প্রস্তাব নেই।

১১. ডুপ্লিকেট ট্রেন চালানোর কোনো প্রস্তাব নেই। আমরা, যাইহোক, ট্র্যাফিকের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকরী সম্ভাব্যতা অনুসারে চিহ্নিত জনপ্রিয় রুটে পিক সিজনে ভিড় মুক্ত করতে বিশেষ ট্রেন চালাই।

১২. অপেক্ষমাণ তালিকাভুক্তদের নিশ্চিত আবাসন প্রদানের লক্ষ্যে রেলওয়ে ১ নভেম্বর, ২০১৫, তারিখে 'VIKALP', বিকল্প ট্রেন আবাসন স্কিম (ATAS) চালু করেছে যাত্রীদের এবং উপলব্ধ বাসস্থানের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এই সুবিধাটি প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল নতুন দিল্লি - জম্মু, নয়া দিল্লি - লখনউ, দিল্লি - হাওড়া, দিল্লি - চেন্নাই, দিল্লি - মুম্বাই এবং দিল্লি - সেকেন্দ্রাবাদ সার্কিট। এখন এই স্কিমটি 22 মার্চ, 2017-এ সমস্ত সেক্টরে প্রসারিত করা হয়েছিল।

২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে সুবিধা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিও চলছে। এই ট্রেনগুলিতে ওয়েটলিস্ট করা টিকিটের ব্যাবস্থা রয়েছে৷ বিষয়েও কোনো পরিবর্তন হয়নি।

২A, 3A বা CNF বা RAC টিকিট বাতিলকরণের নুন্যতম চার্জ যথাক্রমে ১০০, ৯০ এবং ৬০ টাকা।

সম্প্রতি এরকম কোন পরিবর্তন করা হলে তা নিশ্চয় মুখ্যধারার সংবাদ প্রতিবেদন গুলোতে প্রকাশ পেত। কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদনে এই খবরের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে যে রেলের তরফ থেকে এরকম কোন পরিবর্তন করা হয়নি।

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে করা দাবিগুলোর অধিকাংশই ভুয়ো।

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ট্রেন যাত্রা সম্পর্কিত ভাইরাল দাবিগুলোও অধিকাংশই ভুয়ো ও ভিত্তিহীন।

Avatar

Title:২ জুলাই থেকে ভারতীয় রেলের ১০টি নতুন নিয়ম? জানুন ভাইরাল পোস্টের সত্যতা

Written By: Nasim A

Result: False