২৩ আগস্ট তারিখে চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরন করেছে চন্দ্রযান-৩। অবতরণের সেই মুহূর্তকে লাইভ সম্প্রচারন করা হয়। এই সফলতার মুহূর্তের ছবি ও ভিডিওকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনও কিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয় যার সাথে চন্দ্রযান অভিযানের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনই একটি ভিডিও আমাদের নজরে পড়েছে যাকে ঘিরে আজকের এই প্রতিবেদন। ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওটি শেয়ার করে একজন ফেসবুক ইউজার দাবি করেছেন যে ভিডিওটি চন্দ্রযান-৩ কর্তৃক ক্যামেরাবন্দী করা চাঁদের প্রথম ভিডিও। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “চন্দ্রযান ৩ অবতরণের পর,,,,প্রথম ভিডিও,, আজ আমরা গর্বিত। জয় হিন্দ।”

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের ছবিটি ভুয়ো। নাসার রোবোটিক মহাকাশযান ‘কিউরিওসিটি রোভার’ দ্বারা ক্যামেরাবন্দী করা মঙ্গল গ্রহের দৃশ্যকে চন্দ্রযান-৩-এর আবহে শেয়ার করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাই

ফেসবুক পোস্টের ভিডিওটি ভালো করলে পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওর প্রথমের দিকেই ইংরেজিতে একটি লেখা ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে যেখানে লেখা হয়েছে- The scene was captured with curiosity rover’s যার অর্থ হয়, “দৃশ্যটি কিউরিওসিটি রোভারের মাধ্যমে ধারণ করা হয়েছে।” অপরপক্ষে আমরা জানি যে চন্দ্রযান-৩ -এর রোভারের নাম হল- প্রজ্ঞ্যান রোভার। এখান থেকেই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে মনে সংশয় জাগে।

এই সংশয় দূর করতে ইউটিউবে ‘curiosity rover’ সার্চ করলে হুবহু এই ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি Tavi Technical Space নামের এক চ্যানেলে পেয়ে যায় যা ৮ আগস্ট তারিখে আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয়েছে,” মার্স রোভারের প্যানোরামিক ক্যামরায় ধারন করা মঙ্গল গ্রহনের অপ্রত্যাশিত অদ্ভুত ৩৬০° ভিডিও ফুটেজ।“ ৮:১৪ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওর ০:১৯ মিনিট থেকে ৪:১৩ মিনিট অবধি অংশটুকু ভাইরাল ভিডিওর অংশ যার মধ্যে কিছু কিছু দৃশ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। উভয় ভিডিওতে একটি ডিম্বাকৃতির গর্ত এবং অনুরূপ শিলা কাঠামো লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওর মাঝে মাঝে একই ফ্রেম সহ উভয় ভিডিওতেও একই লেখা ভেসে উঠতে দেখা যায়।

অপরপক্ষে, চন্দ্রযান-৩ ২৩ আগস্ট তারিখে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরন করেছে কিন্তু ভিডিওটি তার আগে থেকে ইন্টারনেটে উপলব্ধ রয়েছে। এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলতে পারি ফেসবুক ভিডিওটি চন্দ্রযান-৩-এর সাথে সম্পর্কিত নয়।

ভাইরাল ভিডিও বা ইউটিউব ভিডিওটি আসলে নাসা দ্বারা প্রকাশিত মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের একটি ৩৬০-ডিগ্রি ছবি জুম করে বানানো হয়েছে। আমরা নাসার ছবিটির সাথে ভিডিওটি তুলনা করে দেখতে পাই দুই ক্ষেত্রেই একই বিষয়বস্তু রয়েছে। ভিডিও এবং নাসার ছবি, দুটিতেই একটি ডিম্বাকৃতি গর্ত, ছোট বর শিলা খণ্ড, একটি কালো রঙের বড় পাথর এবং তার পাশের একটি বাদামী রঙের একটি ছোট পাথর। ইউটিউব ভিডিওতে বলা হয়েছে এই যে পাথরটি অনেকটা হিন্দু ধর্মের দেবতা গনেশের মত। এই ছবি ২৫ জুলাই তালিখে তোলা হয় এবং ৩ অগস্ট তারিখে প্রকাশিত করা হয়ে। নিচে একটি তুলনামূলক ছবি দেওয়া হল।

প্রসঙ্গত, ‘কিউরিওসিটি রোভার’ হল একটি রোবোটিক মহাকাশযান যা ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসিডিনাতে ক্যালটেক দ্বারা পরিচালিত নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি দ্বারা নির্মিত। ৩,৮৯৯তম মঙ্গল দিবসের দিন অর্থাৎ ২৫ জুলাই,২০২৩, তারিখে এই রোভার মঙ্গল গ্রহের ‘জাউ’ নামের এক জায়গায় অবতরন করেছিল এবং ৩ আগস্ট তারিখে সেখানকার বিভিন্ন দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছিল।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি বিভ্রান্তিকর। নাসার মঙ্গলযান কিউরিওসিটি রোভার কর্তৃক ক্যামেরাবন্দী মঙ্গল গ্রহের দৃশ্যকে চন্দ্রপৃষ্ঠের দাবিতে শেয়ার করা হয়েছে।

Avatar

Title:নাসার রোভারের তোলা মঙ্গল গ্রহের দৃশ্যকে চন্দ্রযান-৩ -এর দাবিতে ভাইরাল

Written By: Nasim Akhtar

Result: False