পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওকে কুম্ভ মেলার আবহে শেয়ার 

False Social

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, কুম্ভমেলায় এক সন্ন্যাসী আগুনে সমর্পিত হওয়ার ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি নিউজ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত একজন সন্ন্যাসী আগুনের মধ্যে শায়িত অবস্থায় রয়েছেন। আগুনে শায়িত অবস্থায় সন্ন্যাসী এক ধরনের আধ্যাত্মিক অনুশীলন বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, যা কুম্ভমেলার ঐতিহ্যের একটি অংশ হতে পারে। কিছুক্ষণ পর, সন্ন্যাসীকে আগুন থেকে অক্ষত অবস্থায় উঠে আসতে দেখা যায়, যা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এই দৃশ্যটি ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নেটিজেনদের মধ্যে বিস্ময় ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে। 

একজন ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন,”মহাকুম্ভে “সিদ্ধ-সাধুকে” গঙ্গা স্নানের আগে “অগ্নি-স্নান” করতে দেখে ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদক হতবাক হয়ে বলেছিলেন এটা কি করে সম্ভব!!! যে বিবিসি চ্যানেল সব সময় হিন্দু ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় ছোট করে দেখাতে অভ্যস্ত, গতকাল সেই বিবিসি চ্যানেলে সারাদিন এই ঐশ্বরিক ঘটনার প্রচার করেছে…❤️ এটাই হলো আমাদের সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি যা রাক্ষসকেও মানুষ হতে শেখায়…🧡 জয় সনাতন ! হর হর মহাদেব…🕉️🔱🚩।“ 

তথ্য যাচাই করে জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো। ২০০৯ সালে কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তাত্রেয়া মন্দিরের এক ঘটনার ভিডিওকে ভুলভাবে কুম্ভমেলা সংক্রান্ত বলে শেয়ার করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট 

উল্লেখযোগ্য যে, কুম্ভমেলা হল হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান তীর্থযাত্রা এবং উৎসব যা প্রতি ১২ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা ধর্মীয় শিক্ষা, সাধুদের ধর্মীয় বক্তৃতা, সন্ন্যাসী বা দরিদ্রদের ভোজন এবং বিনোদনসহ নানা ধর্মীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে এই সময় গঙ্গায় স্নান করলে অতীতের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হয় এবং সমস্ত পাপ মুছে যায়।

অন্যদিকে, বিবিসি নিউজ চ্যানেল হল ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) একটি অপারেশনাল বিজনেস বিভাগ যা সংবাদ এবং তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম সম্প্রচারিত সংবাদ সংস্থা এবং প্রতিদিন প্রায় ১২০ ঘণ্টা রেডিও এবং টেলিভিশন আউটপুট তৈরি করে। এর পাশাপাশি একটি অনলাইন সংস্করণও রয়েছে।

তথ্য যাচাইঃ  

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটিকে ‘ইনভিড’ টুলে কয়েকটি কিফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। ফলস্বরূপ, কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এরপর গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে, মুখ্য ধারার হিন্দি সংবাদ মাধ্যম ‘আজ তাক’ এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০০৯ সালের ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল এবং ‘আজ তাক’ বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনগুলির মাধ্যমে জানা যায়, গেরুয়া বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি হলেন তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর জেলার বাসিন্দা সাধু মহারাজা রামভাভু। তিনি কর্নাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তত্রেয়া মন্দিরে অলৌকিক শক্তির দাবি করে এক অগ্নিযোগের মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করেন। আগুনের ওপর শুয়ে থাকার এই কর্মকাণ্ডটি তিনি গত ৩০ বছরে প্রায় ১০০০ বার করেছেন। 

সংবাদমাধ্যম আজ তাক প্রসঙ্গনীয় কয়েক ভিডিও নিচে দেওয়া হলঃ

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ৮০ বছর বয়সী এই সন্ন্যাসী শুধুমাত্র কলা ও জল খেয়ে জীবনযাপন করেন। তিনি যখন কর্ণাটকের গুলবার্গা জেলার ঘানাগাপুর গ্রামের দত্তত্রেয়া মন্দিরে ভ্রমন সূত্রে যান তখন তার ভক্তদের সুস্থতার কামনা করে আগুনে নিজেকে সমর্পণ করে ভগবান গনেশ-এর সাথে কথা বলেন।

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

সংবাদ মাধ্যম ‘দি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখের প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

নিষ্কর্ষঃ ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে জানিয়েছে যে, উপরোক্ত দাবি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০০৯ সালে কর্ণাটকের গুলবার্গা জেলার দত্তত্রেয়া মন্দিরের একটি পুরনো ঘটনাকে চলমান কুম্ভ মেলার আবহে শেয়ার করা হচ্ছে। 

Avatar

Title:পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওকে কুম্ভ মেলার আবহে শেয়ার

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *