
ওয়াকফ সংশোধন বিল নিয়ে দেশে যখন জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে সেই প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি দাবি বেশ ভাইরাল হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার নাকি রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডকে ভঙ্গ করে দিয়েছেন। আসলেই কি তাই? আসুন জেনে নি এই দাবি কতটা সত্য, কতো টা মিথ্যা।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,”WB–এ মমতার সরকার যেখানে “ওয়াকফ বোড” চাইছে– ‘চন্দ্রবাবু নাইডু” অন্ধ্রপ্রদেশ “ওয়াকফ বোর্ড ” তুলে দিয়েছে, গত শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় এই প্রস্তাব পাস হয়েছে ‼️।“
অন্য এক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন,”খেলা শুরু। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সরকার ওয়াকফ বোর্ড বাতিল করল।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে পেয়েছি। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ওয়াকফ বোর্ড বাতিল করেনি বরং, এটি একটি নতুন বোর্ড গঠনের জন্য বিদ্যমান বোর্ডকে বিলুপ্ত করেছে।
ফেসবুক পোস্ট | আর্কাইভ |
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। মুখ্যধারার সংবাদ প্রতিবেদনগুলো অনুযায়ী, ভালো শাসন নিশ্চিত করার জন্য,ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য এবং বোর্ডের কার্যকর পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বিদ্যমান ওয়াকফ বোর্ড বিলুপ্ত করেছে।
রাজ্য সরকার ২১ অক্টোবর।২০২৩। তারিখে জারি করা একটি সরকারী আদেশ বাতিল করেছে, যার মাধ্যমে ১১ সদস্যের ওয়াকফ বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।
সরকারি সচিব কে. হর্ষবর্ধন এক আদেশে বলেন, “ভাল শাসন বজায় রাখা, ওয়াকফ সম্পত্তি সুরক্ষিত করা এবং বোর্ডের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে GO MS No. 47 (যার মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়েছিল) অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।” আদেশ অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারকে জানিয়েছেন যে বোর্ড দীর্ঘ সময় ধরে অকার্যকর ছিল এবং বোর্ড গঠনের বৈধতা নিয়ে কয়েকটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল।
আরও প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে,
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের সচিব কে হর্ষবর্ধনের বিজ্ঞপ্তিটি নীচে পড়ুনঃ
তারপর আমরা এক্সে অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের একটি ফ্যাক্ট চেক পেয়েছি যেখানে ভাইরাল দাবিটিকে খণ্ডন করে জানানাও হয়েছে যে, অন্ধ্রপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ড মার্চ ২০২৩ থেকে অকার্যকর ছিল। বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৩টি রিট পিটিশন, সুন্নি-শিয়া প্রতিনিধিত্বের অভাব, সদস্যদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচন না হওয়ার কারণে GO MS No. 47 বাতিল করা হয়। সরকার দ্রুত নতুন বোর্ড গঠনের পদক্ষেপ নেবে।
আমরা উত্তর-পূর্ব হজ কমিটির চেয়ারম্যান এবং আসাম রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নেকিবুর জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন,”ওয়াকফ আইন একটি কেন্দ্রীয় আইন, যা কোনো রাজ্য সরকার বাতিল করতে পারে না। এর মেয়াদ পাঁচ বছর এবং মেয়াদ শেষে একটি নতুন বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ড গঠনের জন্য নির্ধারিত প্রতিনিধিরা থাকে। ওয়াকফ বোর্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। মেয়াদ শেষে বা বোর্ড অকার্যকর হলে রাজ্য সরকার এটি ভেঙে একটি নতুন ওয়াকফ বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারে তবে একে পুরোপুরি বাতিল করতে পারে না।“
উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ওয়াকফ বোর্ড বাতিল করেনি বরং বিদ্যমান বোর্ডটি ভেঙে একটি নতুন বোর্ড গঠনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার কর্তৃক ওয়াকফ বোর্ড ভঙ্গ করে দেওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ওয়াকফ বোর্ড বাতিল করেনি বরং এটি একটি নতুন বোর্ড গঠনের জন্য বিদ্যমান বোর্ডটিকে বিলুপ্ত করেছে।

Title:অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার কি সত্যিই ওয়াকফ বোর্ড বাতিল করেছে? জানুন দাবির সত্যতা
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: Misleading