আর জি ঘটনার আসল অপরাধী শুভদ্বীপ মহাপাত্র? জানুন ভাইরাল ছবির সত্যতা 

Misleading Social

আর জি কর মেডিকেল কলেজের মহিলা ডাক্তার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে দোষারোপের খেলা। দ্রুত বিচার চেয়ে রাজ্য, দেশ জুড়ে চলছে প্রতিবাদ মিছিল। এই মামলার তদন্তভার হস্তান্তরিত হয়েছে সিবিআই-এর হাতে। এই নিকৃষ্ট ঘটনায় সঞ্জয় নামের এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে কোলকাতা পুলিশ। তাছাড়া, সিবিআই ইতিমধ্যে কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে নিজেদের দখলে। মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে নেমেছে প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক পোস্টের বন্যা। এই বন্যার মাঝেই একটি পোস্ট আমাদের নজরে পড়েছে যার তথ্য যাচাই নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। ভাইরাল এই ফেসবুক পোস্টে এক যুবকের ছবি শেয়ার করে তাকে আর জি কর ঘটনার আসল দোষী বলে দাবি করা হচ্ছে। সাথে এও দাবি করা ছেলেটি রাজ্যের প্রাক্তন জলমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের ছেলে শুভদ্বীপ মহাপাত্র। কলেজে ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছে সে। রাজনৈতিক ক্ষমতার জেরেই তাকে আড়াল করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। 

ছবির সাথে লেখা হয়েছে,”বলেছিলাম না? মানুষ সজাগ হলে, প্রশ্ন তুললে পাতাল থেকেও সূত্র বেরিয়ে আসে। সাংবাদিক ও লেখক শ্রী অপূর্ব চ্যাটার্জির তথ্য অনুযায়ী আরজিকরের এই ইন্টার্ন ডঃ শুভদীপ সিনহা মহাপাত্র, ক্ষমতাধর বাপের গুণধর পুত্র ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ। আন্ডারগ্রাউন্ডও বলা যায়। এবার বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তর ও হাসপাতাল নিযুক্ত তদন্ত কমিটিতে কেন এতজন ইন্টার্ন? কেন গেট বন্ধ করে আন্দোলন আন্দোলন খেলা চলছে? কেন যৌথ আন্দোলন কমিটির জেনারেল বডি মিটিংয়ে প্রিন্সিপালের অপসারণের দাবী ওঠামাত্র আরজিকরের গুণধর বিপ্লবীরা মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেছিল কাল?” 

আরও লেখা হয়েছে যে,”আরজিকরের ঘটনার আসল দোষী। মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রর ছেলে এটা। ভাইরাল করা হোক এর ছবি। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক অতি দ্রুত। কিভাবে ডাক্তারি পড়তে সুযোগ পেল তাও প্রকাশ করা হোক।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি দাবিটি মিথ্যা। যুবকের নাম শুভদীপ সিং মহাপাত্র, যদিও সে আরজি কর মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন, সে টিএমসি নেতা সৌমেন মহাপাত্রের ছেলে নয়। ছেলেটির বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানায়। তার পিতার প্রবীর সিং মহাপাত্র পেশায় একজন শিক্ষক। ছেলেটি আর জি কর মেডিকেল কলেজ কাণ্ডের দোষী নয়। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

তথ্য যাচাইঃ 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ফেসবুকে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ভাইরাল এই পোস্টকে ঘিরে একটি পোস্ট পাই যেখানে ভাইরাল এই দাবিকে খণ্ডন করা হয়েছে এবং সাথে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে যেখানে ব্যাক্তি জানাচ্ছেন তার নাম প্রবীর সিং মহাপাত্র। বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সাঙ্গেরা থানায়। পোস্টের যুবকটি তার ছেলে শুভদ্বীপ সিং মহাপাত্র। শুভদ্বীপ আর জি কর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন। তার ছেলের ছবিকে নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআরও দায়ের করিয়েছেন। 

ক্যাপশনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছেন,”গুজব ছড়াবেন না প্লিজ আর জি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনার পরে সমাজমাধ্যমে হাজারো কাল্পনিক আর ভিত্তিহীন গুজবের মধ্যে একটি ছিল, শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র নামের একজন ইন্টার্ন নাকি ঘটনার পরদিন থেকেই নিখোঁজ, এবং তিনি নাকি রাজ্যের একজন মন্ত্রীর ছেলে। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বলেই নাকি তাকে আড়াল করা হচ্ছে। শুভদীপের ছবি আগুনের মতো ছড়িয়ে গেল ফেসবুকে, ‘আসল দোষী’ হিসেবে। বসে গেল বিচারসভা। আসল ঘটনা কী? শুভদীপের বাড়ি বাঁকুড়ায়। তার বাবার নাম প্রবীর সিংহ মহাপাত্র। প্রবীরবাবু প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। মধ্যবিত্ত এই পরিবারের সঙ্গে কোনও মন্ত্রীর কোনওরকম সম্পর্ক নেই। এবং, শুভদীপ নিখোঁজও নয়। ঘটনার দিন থেকে সে হাসপাতালেই ছিল। কোথাও যায়নি। কলকাতা পুলিশ তার সঙ্গে কথাও বলেছে তদন্ত চলাকালীন। একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করি, কোনও কিছু না জেনে স্রেফ কল্পনা বা অন্য কোনও গভীর উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ পরিবারের একজন তরুণ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই প্রচার তার মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, কতটা সামাজিক অসম্মানের মুখে ফেলতে পারে তাকে এবং তার পরিবারকে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মিথ্যে গুজব ছড়িয়েছেন যে সব তথাকথিত ‘সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার’, ছাড়া হবে না তাঁদের। কলকাতার টালা এবং বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানায় এফআইআর করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা হবে। গুজব ছড়াবেন না প্লিজ।“

অপরপক্ষে, টিএমসি নেতা ও রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র সস্ত্রীক সংবাদ বৈঠকে জানিয়েছেন- যেভাবে আর জি কর এর ঘটনার পর নিখোঁজ বলে একজনের ছবি ব্যবহার করে তাঁকে প্রাক্তন মন্ত্রীর ছেলে বলে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে তাঁরা শঙ্কিত। এভাবে চলতে থাকলে তাঁরা গণরোষের শিকার হতে পারে। তাঁর ছেলেও চিকিৎসক। সৌমেন পুত্র ড.বোধিসত্ত্ব মহাপাত্র। তিনি পাশ করেছেন ২০১৭ সালে। ডাক্তারি পড়া শেষ করে তিনি অধুনা পাঁশকুড়া-১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ হিসাবে কর্মরত। দলেরই একাংশ তাঁদের পরিবারকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। দলে থেকে দুর্নীতি করা কয়েকজন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ তাঁর। 

নিষ্কর্ষঃ 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, যুবকের নাম শুভদীপ সিং মহাপাত্র, যদিও সে আরজি কর মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন, সে টিএমসি নেতা সৌমেন মহাপাত্রের ছেলে নয়। ছেলেটির বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানায়। তার পিতার প্রবীর সিং মহাপাত্র পেশায় একজন শিক্ষক। 

Avatar

Title:আর জি ঘটনার আসল অপরাধী শুভদ্বীপ মহাপাত্র? জানুন ভাইরাল ছবির সত্যতা

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: Misleading


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *