
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে বিজেপি নেতা রবীন্দর সিং নেগির একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে দিল্লী বিধানসভায় বিজেপির একতরফা জয়ের পর তিনি ট্রিটমেন্ট শুরু করেছেন। ভিডিওতে তাকে এক দোকানদারকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে দোকানদার জানায় তার নাম মোহাম্মদ আয়ান কিন্তু দোকানের নাম লেখা রয়েছে রাবল দেড়ি। দোকানদার জানান এই নাম তার ভাইয়ের। মুসলিম দোকানদারকে নাম পরিবর্তন করে জনসম্মুখে নিজের পরিচয় দিয়ে দোকানদারি করার আদেশ দিচ্ছেন বিজেপি নেতা।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”দিল্লিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে ট্রিটমেন্ট শুরু হয়ে গেছে।।🚩🚩 হিন্দু এলাকায় জিহাদীরা হিন্দু নাম নিয়ে দোকান চালাচ্ছে , হিন্দুদের পয়সায় নিজেদের উন্নতি করছে আর কি করে হিন্দু শূন্য করা যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিল্লী তে জিহাদী শায়েস্তা করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন _ বিজেপি বিধায়ক রবীন্দর সিং নেগি 🚩🚩🚩 নাম হচ্ছে মহঃ আয়ান খান কিন্তু দোকানের সামনে লিখছে রাহুল 😡 এরকম আমাদের আশেপাশে প্রচুর দোকান আছে মু,সলিম মালিক অথচ দোকানের সামনে হিন্দু নাম লিখে রেখেছে বা অনেকে নাম লেখেছে পদবী লেখেনি। জাগো, হিন্দু জাগো। 🚩🚩 বাজার করতে হয় তো হিন্দু দোকান থেকে করুন!! জিহাদীদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কট এবং দুর্বল করলেই ওদের ভারত ভাঙ্গার/ জিহাদের স্বপ্ন ভেঙে যাবে!!”
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের আগের। বিজেপি নেতা ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে পোস্ট করেছেন। সেই সময় তিনি দিল্লী পুরনিগমের কাউন্সিলর ছিলেন।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, হুবহু এই ভিডিওটি বিজেপি নেতার ইন্সতা প্রোফাইলে পেয়ে যায়। ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে পোস্ট করেছেন তিনি এবং ক্যাপশনে লিখেছেন,”পটপড়গঞ্জ বিধানসভায় বিনোদ নগরে “রাওয়াল পনীর ভাণ্ডার” নামক দোকান খুলেছেন, তবে তার আসল নাম মোহাম্মদ আয়ান খান। আমরা তাদের বলেছিলাম, “আপনি কেন হিন্দু নাম রেখেছেন? যদি আপনাকে দোকান চালাতে হয় তবে আপনার মুসলিম নাম রাখুন, তাতে আপনার কী সমস্যা? তখন তিনি তৎক্ষণাৎ মানলেন এবং বললেন, “কাল আমি এই নাম পরিবর্তন করে দেবো। আমার কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই, তবে আমি এটুকু বলতে চাই যে আপনার আসল নাম রাখুন এবং বিনোদ নগরে শান্তিতে দোকান চালান, আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
প্রসঙ্গত, দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহন হয়েছে ৫ ফেব্রুয়ারিতে এবং ফলাফল ঘোষণা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারিতে। অপরপক্ষে, ভিডিওটি ৫ মাস আগে থেকেই ইন্টারনেটে উপলব্ধ রয়েছে। যা থেকে জলের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দোকানদারের পরিচয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট এই ভিডিওটি দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়।
প্রসঙ্গত, আরও জানিয়ে রাখি যে, দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে পটপড়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন ভিডিওর ব্যক্তি তথা রবীন্দর নেগি। এই কেন্দ্রে আম আদমি পার্টির চর্চিত প্রার্থী ছিলেন আবাধ ওঝা। আবাধ ওঝাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন রবীন্দর সিং নেগি।
বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেও কি এরকম কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রবীন্দর সিং নেগি?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেও এরকম কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে কোন সংবাদ প্রতিবেদন, বা তার নিজস্ব কোন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা থেকে ধারনা করা যায় যে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এরকম কোন কাজ করেননি।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, মুসলিম দোকানদারের পরিচয় এবং তার দোকানের নাম নিয়ে বিজেপি নেতার পুরনো বিতর্কিত ভিডিওকে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:বিজেপি নেতা কর্তৃক মুসলিম দোকানদারের নাম পরিবর্তন করানোর ভাইরাল ভিডিওটি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত নয়
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: Missing Context