
সম্প্রতি একটি ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে যে আদালত চত্বরে একজন ব্যক্তিকে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, যাকে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি আর কেউ নন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে পুলিশে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে । ##ক্ষমতা পেয়ে মানুষ নিজের অতীতকে ভুলে যায়##।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি ভুয়ো। বিহারের দারভাঙ্গা আদালতে সুশীল কুমার চৌধুরী নামের একজন আইনজীবীকে পুলিশ গ্রেফতার করার ভিডিওটি বিভ্রান্তিকরভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই প্রক্রিয়া গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে শুরু করি। ফলস্বরুপ, হেমন্ত বিশ্ব শর্মার গ্রেফতার হওয়াকে নিয়ে কোন সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। রাজের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলে তা নিশ্চয় সংবাদ মাধ্যম গুলোর চর্চার বিষয় হত। কিন্তু সংবাদ প্রতিবেদনে এই খবরের অনুপস্থিতি থেকে ধারনা হয় যে ভিডিওর সাথে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
ভিডিও সম্পর্কিত আসল তথ্য খুঁজতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, হুবহু এই একই ভিডিও ‘waish_sheikh’ নামক ইন্সতা প্রোফাইলে পাওয়া যায়। ২০ জুনে করা এই পোস্টের ক্যাপশনে মাধ্যমে জানানো হয় ভিডিওটি বিহারের দারভাঙ্গার সিভিল কোর্টের। ভিডিওতে যাঁকে পুলিশ হেফাজতে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন আইনজীবী সুশীল কুমার চৌধুরী। প্রবীণ আইনজীবী অম্বর ইমাম হাশমি ওরফে ছোটে সাহেব, তিনি প্রায় ৩২ বছর আগের এক খুনের মামলায় অভিযুক্ত এবং সেই মামলায় আজ তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। তিনি কিছু ব্যক্তিগত কারণে আজ আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিনেই কিছুক্ষণ পরে, একই আদালতে একটি ভিন্ন মামলার শুনানিতে তাঁকে উপস্থিত দেখা যায়। এই বিষয়ে বিচারক ADJ-3 আপত্তি জানিয়ে এই অসামঞ্জস্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে বিচারক তাঁকে আদালতের হেফাজতে নিয়ে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আইনজীবী সুশীল কুমার চৌধুরী সহ তরুণ আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই সময় আইনজীবী সুশীল কুমার চৌধুরীকে পুলিশ অমানবিকভাবে আটক করে, পরে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
উপরোক্ত তথ্যকে মাথায় রেখে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বিহারের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এই ভিডিওকে ঘিরে সংবাদ উপস্থাপন পাওয়া যায়। সেখানেও একই তথ্য জানানো হয় যে, ভিডিওটি বিহারের দারভাঙ্গা সিভিল কোর্টের। আইনজীবী অম্বর ইমাম হাশমি এবং তার দুই ভাই একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। প্রায় ৩২ বছর পুরনো সেই মামলার শুনানির দিনই ছিল ঘটনাটি। তবে আইনজীবী অম্বর ইমাম হাশমি ৩১৭ ধারার আওতায় একটি চিঠি দিয়ে জানান যে তিনি জেলার বাইরে থাকায় সেদিন আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু সেদিনই তাঁকে আদালত চত্বরে অন্য একটি মামলায় ওকালতি করতে দেখা যায়। এই ঘটনা দেখে বিচারক সুমন কুমার দিবাকর তাঁকে গ্রেফতার করে বিচারিক হেফাজতে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের প্রতিবাদ করায় আইনজীবী সুশীল কুমার চৌধুরীসহ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে, তবে পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
দৈনিক ভাস্কর, টিভি৯ হিন্দি, প্রভাত খবর-এর মত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, হেমন্ত বিশ্ব শর্মার গ্রেফতারের দাবিটি ভুয়ো। আসলে ভিডিওটি বিহারের দারভাঙ্গা সিভিল কোর্টে এক আইনজীবীর গ্রেফতারের ঘটনার।

Title:দারভাঙ্গা আদালতে এক আইনজীবীর গ্রেফতারের ভিডিওকে ভুলভাবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার গ্রেফতারের ভিডিও বলে শেয়ার
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False