
২২ এপ্রিলের দুপুরে ভারতের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের বাসরান উপত্যকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। নিহতদের মধ্যে দুইজন বিদেশি—একজন নেপালের ও একজন আমেরিকার নাগরিক এবং দুইজন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। এই মর্মান্তিক হামলার ঘটনায় পুরো ভারত তথা বিশ্ব জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি, যেখানে এক নারী তার নিহত স্বামীর পাশে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। এছাড়াও স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ধারণকৃত কিছু ভিডিওতেও হামলার নৃশংসতা ধরা পড়েছে। নিহত এক পর্যটকের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়াই তার স্বামীর হত্যার কারণ হয়েছে। ইতিমধ্যেই, প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হামলাকারীদের স্কেচ বানিয়ে তা প্রকশিতও হয়েছে সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে।
এই সার্বিক পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক ছবি, ভিডিও পোস্টের ঢল নেমেছে। বর্তমানে ভাইরাল হওয়া অনেক ভিডিওর মাঝে একটি ভিডিও আমাদের নজরে পড়েছে যেখানে এক বাচ্চা ছেলেকে মৃত লাশের পাশে বসে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে এবং পরক্ষনেই তাকে এক চলমান গাড়িতে এক মহিলা কর্তৃক তাকে শান্তনা মূলক কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মাটিতে শুয়ে থাকা দেহটি সেই বাচ্চার বাবা। হিন্দু ধর্মীয় হওয়াই তাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”এই বাচ্চাটার একমাত্র দোষ হলো যে সে একজন হিন্দু তাই সে কা ফে র! তাই সে তার বাবাকে হারিয়েছে…😔 সেকুলার রা কোথায় !! সেয়ার করুন !!”
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শরীরের পাশে বসে থাকা এই ভিডিওটি ২০২০ সালের। ২০২০ সালের ১ জুলাইয়ে জম্মু কাশ্মীরের সোপোরে সন্ত্রাসী হামলার ভিডিওকে সাম্প্রতিক পেহেলগাম হামলার সাথে জুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিও কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, এই ভিডিওটি সাংবাদিক বর্খা দত্তের ইউটিউব চ্যানেল ‘Mojo Story’-তে পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২০ সালের ১ জুলাইয়ে আপলোড করে জানানো হয়েছে এটি সেই সময় কাশ্মীরের বারামুল্লার সোপোরে সন্ত্রাসী হামলার।
এটিকে সূত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক ভিডিওকে ঘিরে অনেক সংবাদ প্রতিবেদন পেয়ে যায়। ২০২০ সালের ২ জুলাই তারিখের ‘ইন্ডিয়া টুডে’র ভিডিও উপস্থাপন অনুযায়ী, কাশ্মীরের বারামুল্লার সোপোরে সন্ত্রাসী হামলায় পাল্টা গুলি চালিয়েছিলেন ভারতীয় আর্মি। সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের সময় সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সেই ছেলেটি এবং তার দাদু। ৬০ বছর বয়স্ক দাদুর শরীরে দুইটি গুলি লাগে আর তিনি সেখানেই মারা যান। ৩ বছরের ছেলেটা কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে সে রক্তে ভেজা দাদুর দেহের ওপর বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
এনডি টিভি, ফার্স্ট পোস্ট সহ অন্যান্য প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টের এই ঘটনাটি ২০২০ সালের ১ জুলাইয়ে কাশ্মীরের বারামুল্লার সোপোরে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার। ‘এনডি টিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীনগর থেকে হান্ডওয়ারার পথে একটি মারুতি গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ ও তার তিন বছরের নাতি। পথে বারামুল্লা জেলার অন্তর্গত সোপোর শহরে তাদের গাড়িটি হঠাৎ গুলির মুখে পড়ে। একটি মসজিদে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর একটি প্যাট্রোল দলের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। CRPF-এর সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালেও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে যান ওই বৃদ্ধ ও তার ছোট নাতি। বৃদ্ধের শরীরে দুটি গুলি লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তার নিথর দেহের পাশে অসহায়ভাবে বসে থাকা শিশুটির ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। ছেলেটি কিছুই বুঝতে না পেরে দাদুর দেহ জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। পরে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়।
আল জাজিরা প্রতিবেদন | আর্কাইভ |
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত ভিডিওটি সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওটি আসলে ২০২০ সালে কাশ্মীরের সোপোরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার।

Title:পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার সাথে জুড়ে শেয়ার
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False