চলতি মাসের ২৬ তারিখের দুই দিনের বঙ্গ সফরে এসেছিলেন গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ। বঙ্গীয় বিজেপি নেতাদের সাথে বদ্ধ ঘরে বেশ কয়েকটি মিটিংও সেরেছেন। আগত লোকসভা ভোটের পরিকল্পনা এবং দলের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে দলীয় কর্মীদের সাথে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে সংবাদ মারফত। এই প্রসঙ্গে অমিত শাহের একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ছবিটি ২০ ডিসেম্বর তারিখের এবং যে চেয়ারে বসে আছেন সেটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ার। ছবিতে অমিত শাহকে মাস্ক পরা অবস্থায় একটি জায়গায় বসে সামনের দিকে হেলে টেবিলের ওপর রাখা মোটা বই / খাতায় কিছু লেখার ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির নীচে লেখা হয়েছ,” উত্তরায়ণের এই বিশেষ আসনটি একদা একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই ব্যবহার করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর বিগত আট দশকে আর কেউ কখনও এটিতে বসেন নি। ছবিটি গত বিশ ডিসেম্বরের, যেদিন অমিত শাহ শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। এই অশিক্ষা, ঔদ্ধত্য এবং দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো। ছবিটি ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখের। তিনি যে চেয়ারে বসে আছেন তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ার নয়।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাইঃ

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জানা যায় অমিত শাহ সম্প্রতির ২০ ডিসেম্বর তারিখে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন বিল নিয়ে লোকসভায় বক্তব্য রাখেন। সেই দিনেই তিনি বোলপুর-শান্তিনিকেতন আসলে নিশ্চয় তা মুখ্যধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেত। সংবাদমাধ্যমে তার এই সফরের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে তিনি সেদিন শান্তিনিকেতন আসেননি।

২৬ ডিসেম্বর তারিখে অমিত শাহ দুই দিনের বঙ্গ সফরে এসেছিলেন।

ভাইরাল এই ছবির আসল উৎস খুঁজতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, অমিত শাহ-এর ভেরিফাইড টুইটার প্রোফাইলেই এই ছবির উল্লেখ পেয়ে যায়। ২০ দিসেম্বর,২০২০, তারিখের এই টুইট পোস্টে তিনি লিখেছেন,” শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুদেবের অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাঁর চিন্তাধারা আমাদের আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।“

২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে গৃহ মন্ত্রীর শান্তিনিকেতন সফরের খবর মুখ্যধারার প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়।

যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ছবিটি সম্প্রতির ২০ ডিসেম্বর তারিখের নয় বরং ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখের।

অমিত শাহ কি রবি ঠাকুরের চেয়ারে বসেছিলেন ?

ভাইরাল এই ছবিটি তৎকালীন সময়েও একই দাবিতে বিশাল ভাইরাল হয়েছিল। বিজেপিকে আক্রমনের সুরে কংগ্রেস সাংসদ অধির রঞ্জন অমিত শাহের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসার দাবিটি সংসদভবনে করেছিলেন। ২১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের পরের থেকে শুনুন।

কংগ্রেস সাংসদের প্রতিউত্তরে অমিত শাহ জানিয়েছিলেন-সাম্প্রতিক শান্তিনিকেতন সফরের সময় তিনি ঠাকুরের চেয়ারে বসেননি। তিনি দর্শনার্থীদের জন্য মনোনীত একটি জানালায় বসেছিলেন। তিনি আরও বলেন যে প্রমাণ রয়েছে "জওহরলাল নেহেরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসেছিলেন"।

অমিত শাহকে যে জায়গায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে সেই জায়গায় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জি এবং প্রথম মহিলা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল বসেছিলেন। যেখানে লিখছেন তা হল শান্তিনিকেতনে দর্শনার্থীদের স্বাক্ষর বই। (আর্কাইভ)

প্রতিবেদন আর্কাইভ

তারপর আরও খুঁজাখুঁজির পর পাওয়া যায় একটি চিঠি যেখানে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুত চক্রবর্তী অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে তাঁর অভিযোগগুলি সত্য নয়।

কবিগুরুর ব্যবহৃত একটি চেয়ারের ছবি ‘দি টেলিগ্রাফে’র একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। যার সাথে ভাইরাল ছবিতে দেখতে পাওয়া বসার অংশের মিল পাওয়া যায়না।

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় যে, অমিত শাহ যে জায়গায় বসে আছেন তা রবি ঠাকুরের চেয়ার নয় বরং জানালার পাশে বসার একটি অংশ এবং যেখানে লিখছেন তা হল শান্তিনিকেতন দর্শনার্থীদের স্বাক্ষর বই।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসেননি।

Avatar

Title:কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসে আছেন অমিত শাহ ? জানুন ভাইরাল ছবির সত্যতা

Written By: Nasim Akhtar

Result: False