
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ইসকন মন্দিরের পুরোহিত নিতাই দাস মুসলিমদের ইফতার করাচ্ছেন। গত বছরে তিনদিন ধরে মুসলমানদের ধর্মীয় উপোষ রোজার সময় ইফতার করিয়েছিলেন তিনি এবং সম্প্রতি বাংলাদেশ দুর্গা মূর্তি ভাঙচুর ঘিরে চলাকালীন অশান্তির সময় নিতাই দাসকে হত্যা করা হয়। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাদা বস্ত্রধারী একজন পুরোহিত কয়েকজন ফেজটুপি পরা লোককে খাওয়ার পরিবেশন করছেন।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “নীচে ছবিতে সেবারত সন্যাসী হলেন বাংলাদেশ ইসকন মন্দিরের নিতাই দাস প্রভু ,এবারে মুসলিম হামলাকারীরা একে হত্যা করে জলে ভাসিয়ে দেয়।গত রমজানে তিনদিন ধরে ইফতার পার্টি করিয়েছিলেন ইনি বাংলাদেশ ইসকন মন্দিরে ।একটি শিক্ষা ,সন্মান করা যায় অন্যকে ততটুকুই যতটা সন্মান সে আমাকে দেবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে পরাক্রম প্রয়োজন।অহিংসতা নয়।নিতাই দাস প্রভু এবং আরও অনেকে হিন্দু সমাজকে চোখের জলে ভাসিয়ে চলে গেলেন।কিন্তু দিয়ে গেলেন শিক্ষা , আঘাতের সদুত্যর প্রত্যাঘাত।ভাইচরা তাদের সাথে হতে পারে যে আমার ধর্ম কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিকে আন্তরিক শ্রদ্ধা করবে। জয় রাম।। —- দেবাশীষ দাস।—।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি বিভ্রান্তিকর। পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুর ইসকন মন্দিরের ছবিকে বাংলাদেশের দৃশ্য দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। ছবির পুরোহিত চৈতন্য নিতাই দাস (পরিবর্তিত নাম) বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার মন্ডপে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান পাওয়া ঘিরে দেশজুড়ে একধরণের অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পুজোমন্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগুনের পর দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় এপর্যন্ত ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যেই গত রবিবার অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলার এক হিন্দু যুবকের ধর্ম বিদ্বেষী ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে নতুন করে এক বচসা বেঁধে ওঠে। এই বচসার জেরে ২০টি হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে সংবাদ মাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র একটি প্রতিবেদনে এর অনুসন্ধান পাই। ২০১৬ সালের ১৩ জুন-এর এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি এটি মায়াপুর ইসকনের ছবি। চন্দ্রোদয় মন্দিরে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়। ইসকন মন্দিরের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে ইসকন কর্তৃপক্ষ এই আয়োজন করে। এছাড়া প্রতিবেদনের ছবির পেছনে থাকা ব্যানারে মায়াপুর লেখা দেখা যায়।

মায়াপুর ইসকনের চন্দ্রোদয় মন্দির পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় অবস্থিত। গুগল ম্যাপসে এই মন্দিরের অবস্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হল।

এখান থেকে স্পষ্ট বলা যায়, পোস্ট করা ছবিটি বাংলাদেশের নয়। পশ্চিমবঙ্গের এবং গত বছর রোজা ইফতার আয়োজনের দাবিটিও ভুয়ো।
এরপর আমরা ইসকনের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর যুধিষ্টির গোবিন্দ দাসের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডোকে বলেন, “এটি ২০১৬ সালের মায়াপুরের ঘটনা। ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি হলে ইভ্যান অ্যান্টিক। তিনি একজন ক্রোয়েশিয়ান বাসিন্দা। ইসকনের ভক্ত হওয়ার পর সবাই নিজের নাম বদলে দেন। তিনিও তার নাম বদলে চৈতন্য নিতাই দাস রাখেন। তিনি সুস্থ আছে এবং বাংলাদেশের ঘটনার সাথে তার কোনও যোগ নেই।“
ইসকনের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একই বিবৃতি প্রকাশ করা হয় যেখানে বলা হয় বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলার অশান্ত পরিস্থিতিতে যতন চন্দ্র দাস এবং প্রান্ত চন্দ্র দাস নামে ইসকনের দুই সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই নিয়ে ইসকনের সংবাদ সংস্থা ‘ইসকন নিউজ’-এর একটি প্রতিবেদনে এই হত্যা বিষয়ক একটি খবর দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিবাদে নিতাই দাসের নাম কোথাও উঠে আসে নি।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ছবির পুরোহিত আসলে নিতাই দাস নন এবং পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুর ইসকন মন্দিরের ছবিকে বাংলাদেশের দৃশ্য দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। ।

Title:মায়াপুরের ইসকনের ছবিকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্তিকর পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে
Fact Check By: Rahul AResult: False