তীর্থস্থান হরিদ্বারের এক সাধুর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াই বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওতে সাধুর বেশে ব্যাক্তিকে নিজেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের এবং নাম জাভেদ হুসাইন জানিয়ে হিন্দু ধর্মের সম্বন্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, জাভেদ হুসাইন নামের মুসলিম ব্যাক্তি হিন্দু ধর্মের অপমান করছে।

ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”হিন্দুদের তীর্থ স্থান হরিদ্বারে বসে তীর্থ যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা করে পেট চালায় জাভেদ হোসাইন। আর সেই স্থানে বসেই ব্রাহ্মণদের কুত্তা বলে গালি দিচ্ছে। হিন্দু ধর্মকে বকবাজ, ভূয়া বলেও গাল দিচ্ছে। প্রশ্ন কর্তা শুধু এতো টুকু-ই বল্লেন যে, আজ আমি হিন্দু বলেই হিন্দুদের গালি দিয়ে এখনো এখানে বসে আছেন। আজ আমার জায়গায় আপনি হলে কি আমাকে এভাবে আপনি ছেড়ে দিতেন?? তখন জাভেদ বললো, কখনো-ই ,,, না,,,, হয়তো ধর থেকে মাথা টা মাটিতেই গড়াগড়ি খেতো।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ভিডিওর লোকটি মুসলমান নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের। তার নাম দিলিপ বাঘেল। অজ্ঞাত ইউটিউবার কর্তৃক তাকে মাদক দ্রব্য খাইয়ে পরিকল্পনা করে ভিডিওটি ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাই

ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। ফলে, ভাইরাল এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যম ‘ইটিভি ভারত’-এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২৫ অক্টোবর,২০২৩, তারিখের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরেই হরিদ্বার পুলিশ সেই ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ তদন্তে জানা যায়, সেই ব্যাক্তির নাম দিলীপ বাঘেল এবং সে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দিলীপ বাঘেল পুলিশকে জানায় অজ্ঞাত এক ব্যাক্তি তাকে নেশাগ্রস্ত করিয়েছিল এবং ভিডিওর কথাগুলো বলতে বাধ্য করা হয়েছিল।

ইটিভি ভারত প্রতিবেদন আর্কাইভ

এসএসপি প্রমেন্দ্র ডোবাল জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্তে জানা গেছে যে গালিগালাজকারী ব্যক্তি নিজেই একজন হিন্দু, নাম-দিলিপ বাঘেল, জেলা-আগ্রা, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। কেউ পরিকল্পিতভাবে তাকে মাদকাসক্ত করে এই কাজ করতে বাধ্য করে এবং ভিডিও করে। তারপর ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার পাওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়। আপাতত সেই ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ এবং কোতোয়ালি শহর হরিদ্বারে অজ্ঞাত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো কোতওয়ালি থানার এসএচও-এর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের স্পষ্ট করে জানান যে, ভিডিওর ব্যাক্তির নাম দিলিপ বাঘেল। তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের। কে বা কারা এই কুকর্ম করেছে তা খুঁজে দেখছি আমরা।

হরিদ্বার পুলিশের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও একটি টুইট পাওয়া যায়। টুইটে ব্যাক্তির একটি ভিডিও শেয়ার সামাজিক সম্প্রীতি ব্যাহত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টুইটের এই ভিডিওতে ফেসবুক পোস্টের ব্যাক্তিতে দেখা যাচ্ছে এবং তিনি বলছেন, আমার নাম- দিলিপ ভাগেল, পিতা- ভগত প্রসাদ ভাগেল, গ্রাম-ধামোতা, জেলা- আগ্রার বাসিন্দা। গঙ্গা ঘাটে রাত ১০টা নাগাদ এক ব্যাক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়। সে, আমাকে কিছু খাইয়েদিয়েছিল এবং নিজেকে জাবেদ হুসেন হিসেবে পরিচয় দিয়ে সহ এই রকম এই রকম কথা বলতে হবে আপনাকে।

উত্তরাখণ্ড পুলিশের টুইটার প্রোফাইল থেকেও সাধু সম্পর্কিত একটি ভিডিও টুইট করে জানানো হয় যে- ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি হরিদ্বার পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে যে একজন ব্যক্তি অভিযুক্ত সাধুকে নেশাজাতীয় দ্রব্য দিয়েছিলেন এবং তাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য করেছিলেন এবং ভিডিওটি প্রচার করেছিলেন। অভিযুক্ত সাধুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

https://twitter.com/uttarakhandcops/status/1717056598433222903

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওর ব্যাক্তি মুসলমান নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের। অজ্ঞাত ব্যাক্তি কর্তৃক তাকে নেশাগ্রস্ত করিয়ে আপত্তিমুলক কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল।

Avatar

Title:জাভেদ হুসাইন নামের মুসলিম ব্যাক্তি হিন্দু ধর্মের অপমান করছে ? জানুন ভিডিওর সত্যতা

Written By: Nasim A

Result: False