সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়ো ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, জীবিত ব্যক্তিকে করোনায় মৃত বলে দাবি করে পোস্টমর্টাম করে কিডনি বের করে নেওয়া হল। এই ভিডিওটি সম্প্রতি খুব ভাইরাল হয়েছে। একটি পোস্টেই প্রায় ২৫ হাজার শেয়ার। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যাক্তি একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এবং তার আশে পাশে অনেকগুলি লোক ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে দেখে উত্তেজিত মনে হচ্ছে। আর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “#নাগপুর #মেডিকেল_হাসপাতালে জীবিত #যুবককে #করোনা_ভাইরাসে মৃত্যু বলে #ময়না_তদন্ত করে #কিডনি সব কিছু বের করে দিয়েছে. #সাবধান সবাই!”

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর।

ফেসবুক

তথ্য যাচাই

প্রথমে আমরা ভিডিওটিকে কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই, সংবাদ সংস্থা এ এন আই এই ভিডিওটিকে তাঁদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করে জানিয়েছে এটি মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালের ভিডিও। ইংরেজি ভাষায় লেখা এই টুইটে লেখা রয়েছে,
“মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালে একজন রোগী মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা হাসপাতালে অশান্তি সৃষ্টি করে। তাকে এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। মৃতর পরিবারের অভিযোগ, একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর রোগীর মৃত্যু হয়। (দ্রষ্টব্য: আপত্তিজনক ভাষা) (19.07.2020)”

আর্কাইভ

আরও একটি টুইটে মুম্বাই নগরপালিকার মন্তব্য দিয়ে লেখা রয়েছে, “তার মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। নিউমোনিয়া এবং কোভিডের লক্ষণগুলি একই রকম, মৃত্যুর কারণটি নিউমোনিয়া এবং সন্দেহভাজন COVID হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল। আইসিএমআর প্রোটোকল অনুসারে তাঁর মরদেহ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ইতিমধ্যেই মৃতর পরিবার উত্তেজনা সৃষ্টি করে: বিএমসি”

“আইসিএমআর গাইডলাইন অনুযায়ী যা যা করা দরকার ছিল হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাই করেছে এবং রোগীকে ভর্তি করার পর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। হাসাপাতাল কতৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে এই দাবি একেবারেই ভুল। হাসপাতাল এবং নগরপালিকার ওপর আনা অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক।“

আর্কাইভ

বিএমসি-এর মতে ঘটনাটি ১৯ জুলাই ২০২০ তে ঘটেছে।

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বিএমসি-এর পিআরও তানাজি কামলের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেন যে এটি কুপার হাসপাতালের ভিডিও এবং রোগির মৃত্যুর পর তার বাড়ির লোক হাসপাতালে অশান্তির সৃষ্টি করে।

এই মর্মে জারি করা বিএমসি-এর প্রেস বিবৃতি তিনি আমাদের পাঠান।

image4.gif

“গ্রেটর মুম্বাই পৌর কর্পোরেশনের ভিলে পারলেতে অবস্থিত ডাঃ আরএন কুপার মিউনিসিপ্যাল ​​হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যুর পরে, একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। এই বিষয়ে হাসপাতাল প্রশাসন কর্তৃক নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি প্রকাশ করা হচ্ছে।

২০ জুলাই, ২০২০, রবিবার রাত ১০টা নাগাদ ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কুপার হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ভর্তি করার সময় তার পরিবারের লোকজন জানায় রোগীর মুখ থেকে রক্ত ​​বের হচ্ছে। হাসপাতালে উপস্থিত প্রবীণ চিকিৎসক তার এক্স-রে পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করে দেয়। কিন্তু, তার মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেই ১১.১৫ টা নাগাদ রোগী মারা যান।

এক্স-রে পরীক্ষা এবং মেডিকেল পরীক্ষায় জানা যায় যে রোগী মারাত্মক নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন। কোভিড ১৯ ভাইরাস সংক্রমণের কয়েকটি লক্ষণ নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলির মতো। এছাড়াও, কোভিড ১৯ সম্পর্কিত গাইডলাইন বিবেচনা করে, রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে তীব্র নিউমোনিয়া ও কোভিড ১৯ দেখানো হয়েছিল।

পরিবারের দাবি, রোগীর লাশ শেষকৃত্যের জন্য বাড়িতে নিয়ে যেতে দেওয়া হোক। নিহত রোগীর পরিবারের সদস্যরা মরদেহ বাড়িতে না নিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল প্রশাসনকে দোষ দিয়ে বলেছেন, হাসপাতাল মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মিথ্যা ব্যাখ্যা করেছে। হাসপাতাল প্রশাসন নিয়ম অনুযায়ী দেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। অন্যদিকে, হাসপাতালের তরফে স্পষ্ট করা হয়, কোভিড ১৯ সংক্রমণের বিষয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর), কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারসমূহ সহ বিভিন্ন যোগ্য কর্তৃপক্ষের সময়ে সময়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি (মেডিকেল প্রোটোকল) অনুসরন করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিবন্ধ করার সময়ও এই নিয়মগুলিকে কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে।"

এরপর আমরা জুহু থানার সিনিয়র পি আই পন্টরিনাথ বভ্যালের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি এই পুরো ঘটনার বিবৃতি দিয়ে বলেন,
“দেড় মাস আগে এই ঘটনাটি ঘটছে এবং এই বিষয়ে ভাইরাল দাবি সম্পূর্ণ ভুল। বিএমসিও এই ঘটনার বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তার দেহে করোনভাইরাস লক্ষণ ছিল। নিহত ব্যক্তির পরিবার তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই রোগী মারা যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং অভিযোগ করে চিকিৎসকদের অবহেলার জন্য রোগীর মৃত্যু হয়েছে।“ তিনি আরও জানান, “থানায় এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি।"

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো কুপার হাসপাতালের ডীন ডাঃ পিনাকিন গুজ্জরের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করে এটি কুপার হাসপাতালেরই ভিডিও। তিনি বলেন, “এটি কুপার হাসপাতালেরই ভিডিও কিন্তু জীবিত ব্যক্তির পোস্টমর্টাম এবং কিডনী বের করে নেওয়ার দাবি ভুয়ো।“

যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছিল এটি নাগপুরের ভিডিও তাই আমরা নাগপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের ডিন ডাঃ সজল মিত্রর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এই ভিডিওটি নাগপুর হাসপাতালের ভিডিও নয়। এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভুল।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালের একটি ভিডিওকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Avatar

Title:জীবিত ব্যক্তির পোস্টমর্টাম করে কিডনি বের করে নেওয়া হল, ভুয়ো দাবির সাথে ভিডিও ভাইরাল

Fact Check By: Rahul A

Result: False