
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কর্ণাটকের কলেজে ভারতীয় জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হল। পোস্টের ২৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে লম্বভাবে দণ্ডায়মান একটি বাঁশে উঠে একজন যুবক গেরুয়া পতাকা লাগাচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ কর্নাটকের একটা কলেজের ছাত্ররা জাতীয় পতাকা খুলে গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দিলো। বিজেপির পতাকা নয়…গেরুয়া তথা ধর্মীয় পতাকা। এবার ভাবুন কয়েকবছর পর যখন এরা সমাজে খোলামেলা ঘুরতে শুরু করবে তখন দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা কি হবে/করবে। বাংলাদেশ-পাকিস্থানের কোনো ঘটনাকে নিয়ে মরাকান্না করা উচ্চশিক্ষিত লোকগুলো আজ চুপি চুপি হাসছে আর সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়ে ফেলছে। যাষ্ট কয়েকটা বছর অপেক্ষা করুন তাহলে দেশটা সযত্নে গাধার গাঁ… ঢুকে যাবে।
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। কর্ণাটকের কলেজে জাতীয় পতাকা খুলে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের খবরটি একেবারেই ভুয়ো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর কর্ণাটকের উডুপি জেলার গভর্নমেন্ট প্রি ইউনিভার্সিটি অফ গার্লস কলেজে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ক্লাস কক্ষে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ আসে। এই ঘটনার বিরোধিতায় সরব হয় অনেকে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রদর্শন শুরু হয়। ধীরে ধীরে গেরুয়া বাহিনী এবং হিজাব অধিকারে প্রদর্শনকারীদের মধ্যে বিবাদ ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্ণাটক সরকার ৩ দিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে আমরা প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ দিয়ে শুরু করি। ফলাফলে একাধিক মুখ্যধারার সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল এই ভিডিও কেন্দ্রিক অনেকগুলি উপস্থাপনা দেখতে পাই। ‘এনডি টিভি’-এর ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, তারিখের একটি উপস্থাপনা থেকে জানতে পারি এটি কর্ণাটকের শিবামোঙ্গা কলেজের ঘটনা।
শিবামোঙ্গার এসপি বি এম লক্ষ্মীপ্রসাদ এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) কে জানিয়েছে, “একটি রিপোর্টে জাতীয় পতাকা নামিয়ে তার জায়গায় একটি গেরুয়া পতাকা লাগানোর অভিযোগ এসেছিল কিন্তু খুঁটিতে কোনও জাতীয় পতাকাই ছিল না। ওই খুঁটিতে শুধুমাত্র একটি গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল যা পরে তারা নিজেরাই সরিয়ে নেয়।”
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের একটি ভিডিও উপস্থাপনা খুঁজে পাই যেখানে পোস্টের ভাইরাল দাবিকে ভুয়ো বলা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, তারিখে আপলোড করা এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা রয়েছে, “শিবামোঙ্গায় তেরঙ্গা প্রতিস্থাপিত হয়নি, সূত্র বলে, পতাকা পোল খালি ছিল, দাবি কর্তৃপক্ষের।”
জানতে পারি, শুধুমাত্র প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবস পালনের দিনই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এই খুঁটিতে। বছরের অন্যান্য দিন গুলোতে ফাঁকায় থাকে এই খুঁটি। গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের সময়ও ওই খুঁটি খালি ছিল।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো ‘টাইমস নাউ’ সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক দীপক বোপান্না-এর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, “২৬ জানুয়ারির পরে জাতীয় পতাকা সরানো হয়েছিল এবং সেই থেকেই পোল খালিই ছিল। বিক্ষোভকারীরা ওই খুঁটিতে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে।”
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো শিবামোঙ্গার এসপি বি এম লক্ষ্মীপ্রসাদের সাথে যোগাযোগ কর। তিনি আমাদের নিশ্চিত করে বলেন, “জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরিয়া পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। বিক্ষোভকারীরা একটি খালি খুঁটির চারপাশে বিক্ষোভ করছিল এবং এরপরে তাদের একজন গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে খুঁটিতে তা লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরেই তারা গেরুয়া পতাকা সরিয়ে নেয়।”
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো কলেজের অধ্যক্ষ ধনঞ্জয় বিআর-এর সাথে যোগাযোগ করে যিনি আমাদের বলেন, “গেরুয়া শাল পরা ছাত্ররা যখন গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের জন্য খুঁটির ওপর উঠছিল তখন তাতে কোনও তেরঙ্গা ছিল না। জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার মতো আচরণকে আমরা উৎসাহিত করি না। পোলটি খালি হওয়ার পরে বিক্ষোভকারীদের একজন গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে।”
বাশে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের আগের মুহূর্তের একটি ছবিও তিনি আমাদের সাথে শেয়ার করেন। ছবিটিতে স্পষ্ট দেখা যায় যে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের আগে পোলটি খালি ছিল।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। কর্ণাটকের কলেজে জাতীয় পতাকা খুলে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের খবরটি একেবারেই ভুয়ো।

Title:না, কর্ণাটকের কলেজে জাতীয় পতাকা খুলে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হয়নি
Fact Check By: Nasim AResult: False