
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রাফিক্স শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পেট্রোলের ওপর ১৬.৫০ টাকা কর নেয় কেন্দ্র এবং ৩৮.৫০ টাকা কর পায় রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, পেট্রোলে কেন্দ্রের তুলনায় বেশি কর নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গ্রাফিক্সে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর ছবি রয়েছে এবং তার ওপরে লেখা রয়েছে,
“প্রত্যেকটি পেট্রলপাম্পে অবশ্যই এই রেটের চার্টটা টাঙানো উচিত।
বেসিক রেটঃ ৩০.৫০ টাকা
কেন্দ্রীয় সরকারের করঃ ১৬.৫০ টাকা
রাজ্য সরকারের ট্যাক্সঃ ৩৮.৫০ টাকা
ডিস্ট্রিবিউটারঃ ০৬.৫০ টাকা
মোটঃ ৯২.০৫ টাকা
এবার জনসাধারনের বোঝা উচিত দামা বাড়ার জন্য কে দায়ী এবং কতটা দায়ী?”
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “প্রত্যেকটি পেট্রলপাম্পে অবশ্যই এই রেটের চার্টটা টাঙানো উচিত। রাজ্য সরকার এতগুলো চিঠি লিখল কেন্দ্রকে, একটা চিঠিতেও কি বলেছে পেট্রোপণ্য কে GST এর মধ্যে নিয়ে আসার কথা? কেন বলেনি জানেন? রাজ্যের কর এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশনের আদেশ অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে ফেরত পাওয়া টাকার হিসাব ধরলে রাজ্যের করের পরিমাণ টা অনেকটা হয়ে যায়।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন। পেট্রোলের ওপর কেন্দ্রের ধার্য কর হল ৩২.৯০ টাকা এবং রাজ্য সরকার পায় প্রায় ১৯.৫০ টাকা। বিভিন্ন রাজ্যে এই করের পরিমান আলাদা আলাদা হয় কিন্তু সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই কেন্দ্র লিটার প্রতি ৩২.৯০ টাকা করে শুল্ক নেয়।

উল্লেখ্য, পেট্রোল এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহল। কলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে পেট্রোলের দাম ১০০-এর গন্ডি পার করে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এই জ্বালানির দাম ছিল ৭২-৭৫ টাকা প্রতি লিটার। গত দু’বছরে তা প্রায় ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরিতে ঠেকেছে। বিগত দু’মাসে প্রতি লিটারে প্রায় ৮.৫ টাকা বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে গুগলে বিভিন্ন রকম প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলাফলে, ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র চলতি বছরের ৭ জুলাই তারিখের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই যার শিরোনামে লেখা রয়েছে, “পেট্রোলের ওপর ধার্য করের ৬৩% যায় কেন্দ্রের কাছে, রাজ্য পায় ৩৭%”। এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, কলকাতায় পেট্রোলের দাম প্রায় ১০০ ছুঁয়েছে যার মধ্যে কেন্দ্রের কর হল ৩২.৯০ টাকা এবং রাজ্যের কর হল ১৯.২৭ টাকা। একইভাবে, ডিজেলে কেন্দ্রের কর হল ৩১.৮০ টাকা এবং রাজ্যের কর হল ১৩.০৮ টাকা। ৬ জুলাই তারিখ অবধি পেট্রোলের মূল দাম হল ৪৪.২০ টাকা এবং ডিজেলের ৪৫.১৬ টাকা।
আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পেট্রোলের দাম ছিল ৭২-৭৫ টাকা যেখানে কেন্দ্র কর ছিল ২০-২১ টাকা এবং রাজ্য কর ১৫-১৬ টাকা। ডিজেলে কেন্দ্র কর ছিল ১৫-১৬ টাকা এবং রাজ্য কর ১২-১৩ টাকা।

সংবাদ মাধ্যম ‘নিউজ ১৮ বাংলা’র ৩ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি। আরও জানা যায়, ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটার কমিশন হল ৩.৪৬ টাকা।

এরপর কেন্দ্রীয় ‘পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকে’র ‘পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং এবং অ্যানালাইসিস সেল’র ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি, পেট্রোল চারটি ভাগে মোট ৩২.৯০ টাকা কর নেয় কেন্দ্র। বেসিক আবগারি শুল্ক ১.৪০ টাকা/লিটার, বিশেষ অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক ১১ টাকা/ লিটার, কৃষি পরিকাঠামো ও উন্নয়ন শুল্ক ২.৫০ টাকা/লিটার এবং সড়ক পরিকাঠামো কর ১৮ টাকা/লিটার। এই চারটি যোগ করে পেট্রোলের ওপর কেন্দ্রের মোট কর দাড়ায় ১.৪০+১১+২.৫০+১৮= ৩২.৯০ টাকা।

অন্যদিকে, এই ওয়েবসাইটে আরও দেখতে পাই বিভিন্ন রাজ্যের পেট্রোলের অপরের করের পরিমান ভিন্ন। যেমন, কর্ণাটকে পেট্রোলের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ৩২% আবার আরুনাচল প্রদেশে সেটা ২০%। তেমনই পশ্চিমবঙ্গে এই করের পরিমান হল ২৫% বা ১৩.১২ টাকা প্রতি লিটার (যেটা বেশি সেটা নেওয়া হয়)। সঙ্গে ১০০০ লিটার প্রতি আরেকটি কর রয়েছে। সবমিলিয়ে যা প্রায় ২০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছয়।

‘পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং এবং অ্যানালাইসিস সেল
উপরোক্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ থেকে স্পষ্টভাবে বলা যায়, পেট্রোলের ওপর কেন্দ্রের কর হল ৩২.৯০ টাকা এবং রাজ্যের কর প্রায় ২০ টাকা। অর্থাৎ, পেট্রোলের ওপর কেন্দ্রের করের পরিমান রাজ্যের তুলনায় বেশি।
নিষ্কর্ষঃ তথ যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। পেট্রোলের ওপর কেন্দ্রের ধার্য কর হল ৩২.৯০ টাকা এবং রাজ্য সরকার পায় প্রায় ১৯.৫০ টাকা। বিভিন্ন রাজ্যে এই করের পরিমান আলাদা আলাদা হয় কিন্তু সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই কেন্দ্র লিটার প্রতি ৩২.৯০ টাকা করে শুল্ক নেয়।

Title:না, পেট্রোলে কেন্দ্রের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেশি কর নেয় না
Fact Check By: Rahul AResult: False