
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও হিন্দু বিরোধী বর্ণনার সাথে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যে গনেশ মূর্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তামিলনাড়ু সরকার। মূর্তি নির্মাণকারী শিল্পীর গুদাম সিল করেছে আধিকারিকরা। ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওত্তে দেখা যাচ্ছে, সরকারী আধিকারিকদের একটি দল একটি গুদাম বন্ধ করে সিল করছেন। তা দেখে কয়েকজন মহিলা ব্যাকুল্ভাবে কাঁদছেন এবং পুলিশ কর্মীর সামনে হাতজোড় করে মিনতি করছেন।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”🚨তামিলনাড়ুতে, দরিদ্র মারোয়ারিরা যারা ঈশ্বরের মূর্তি তৈরি করে তাদের বস্তির গুদামে সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং মূর্তি বিক্রি না করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ⚡এখন গণেশ চতুর্থীতে অর্ডার দেওয়া মূর্তিগুলি সরবরাহ করতে পারব না। ⚡তামিলনাড়ুর I.N.D.I.A মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে নতুন পথ ঘোষণা করলেন।“
তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি দাবিটি বিভ্রান্তিকর। তামিলনাড়ু সরকার গনেশ মূর্তি তৈরি ও গনেশ পূজা উদযাপন করার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। রাজ্যে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মূর্তি তৈরির অপরাধের জন্য ভিডিওতে প্রদর্শিত গুদাম বন্ধ করে সিল করা হয়েছিল।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যাচ্ছে ভিডিওর উত্তর-পূর্ব কোনায় ‘Polimer News’ লেখা যুক্ত একটি লোগো রয়েছে। এটিকে সূত্র ধরে জানতে পারি Polimer News’ আসলে তামিল ভাষার সংবাদ মাধ্যম। ‘Polimer News’ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ভাইরাল ভিডিওকে ঘিরে সংবাদ উপস্থাপনটি ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে পোস্ট করা হয়েছে এবং ক্যাপশনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে- রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে তৈরি ১০ লক্ষ মুল্যের গনেশ মূর্তি সিল করে পুলিশ আধিকারিকরা। মূর্তি গুলো সুদে কেনা-বেচা করা হয় এগুলো ছেড়ে দিন বলে মহিলা চোখের জল ফেলতে ফেলতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছিলেন।
‘Polimer News’-এর ইউটিউব চ্যানেলেও এই উপস্থাপনটি দেখা যাবে। ক্লিক করুন এখানে।
তারপর আরেকটু খুঁজাখুঁজির পর পাই যে, এই একই ভিডিও সাম্প্রদায়িক রং চড়িয়ে শেয়ার করা হয়েছিল এক এক্স প্রোফাইল থেকে যার প্রতি উত্তরে কারুর জেলার তামিলনাড়ুর কারুর জেলার অফিসিয়াল এক্স প্রোফাইল থেকে এই ধরনের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো এবং ঘটনাকে মোচড় দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল এবং জানানো হয়েছিল রাজ্যে নিষিদ্ধ রাসায়নিক জৈব দিয়ে ভিনায়ক চতুর্থীর (গণেশ চতুর্থী) প্রতিমা গুলো তৈরি করা হয়েছিল তাই মূর্তি গুলোকে জব্দ করে গুদামটিতে সিল মারা হয়েছিল।
এই ঘটনাটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামিলনাড়ুর কারুরে ঘটেছিলো। মূর্তি নির্মাতারা প্রকাশ্যে প্লাস্টার অফ প্যারিস (পিওপি) এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহার করে গণেশ মূর্তি তৈরি করে সরকারী নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার জন্য ভারতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পুলিশ এই ব্যবস্থা নিয়েছিল।
কয়েক বছর ধরে একাধিক রাজ্যের উচ্চ আদালত, প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ এমনকি সুপ্রিম কোর্টও গণেশ মূর্তি তৈরিতে রাসায়নিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাকে বহাল রেখেছে।
উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে ভাইরাল ভিডিওতে কর্মকর্তাদের পদক্ষেপগুলি সম্পূর্ণ আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ঘটনার সাথে কোনও সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত নেই।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, গণেশ চতুর্থী পালনে তামিলনাড়ু সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিটি মিথ্যা। রাজ্যে নিষিদ্ধ প্লাস্টার অফ প্যারিস (পিওপি) ব্যাবহার করে মূর্তি নির্মাণের জন্য আধিকারিকরা গুদামটিকে বন্ধ করেছিল।

Title:তামিলনাড়ু পুলিশ আধিকারিদের দ্বারা গণেশ মূর্তির গুদাম বাজেয়াপ্ত করার ঘটনায় কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False