
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করাব হচ্ছে, ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ৬৭% শতাংশ হিন্দু ভোটের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ২৭.৯% এবং তৃণমূল পেয়েছে ৭.৩%। ভাইরাল পোস্টে অন্য একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট রয়েছে যেখানে একটি জন সমাবেশের ছবি দেখা যাচ্ছে। তার ওপরে হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে, এটি উত্তরপ্রদেশে মিম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসির র্যালির দৃশ্য।
পোস্টের একটি লম্বা ক্যাপশনে লাখে রয়েছে,
“সোজা হিসেব………… এবছরের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ৬৭% শতাংশ হিন্দু ভোটের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ২৭.৯% , তৃণমূল পেয়েছে ৭.৩% , সংযুক্ত মোর্চা পেয়েছে ৯.৮% এবং ২২% হিন্দু নোটায় কিংবা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। পশ্চিমবঙ্গের ৩১% মুসলিম ভোটের তৃণমূল পেয়েছে ২৮.২% শতাংশ , বিজেপি পেয়েছে ০.৩% , সংযুক্ত মোর্চা পেয়েছে ০.৫% এবং ২% শতাংশ মুসলিম হয়তো নোটায় ভোট দিয়েছে কিংবা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। অর্থাৎ , বিজেপি হিন্দুদের (২৭.৯%) একছত্র সমর্থন পেলেও যেহেতু ২২ শতাংশ হিন্দু নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নষ্ট করেছেন , তাই বিজেপি আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। কিন্তু অপরদিকে তৃণমূল বিজেপির তুলনায় অনেক কম সংখ্যক অর্থাৎ ৭.৩% হিন্দুদের সমর্থন পেলেও ওরা ৩১% মুসলিমদের মধ্যে ২৮.২% মুসলিম ভোটারদের ভোট পেয়েছে বলেই আজ ওরা পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন। নির্বাচন কমিশন ধর্মভিত্তিক ভোট শতাংশ প্রকাশ করে না এবং ভাইরাল ছবিটি আসলে বাংলাদেশের, উত্তরপ্রদেশের নয়।

তথ্য যাচাই
ভাইরালে পোস্টে মোট দুটি ভুয়ো দাবি করা হয়েছে। ক্যাপশনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ধর্মভিত্তিক ভোট শতাংশের কথা বলা হয়েছে এবং আরও দাবি করা হয়েছে ছবিটি উত্তরপ্রদেশে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির জন সমাবেশের ছবি। আমরা আলাদা ভাবে দুটি দাবির সত্যতা যাচাই করব।
দাবি ১- পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ৬৭% শতাংশ হিন্দু ভোটের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ২৭.৯%
ক্যাপশনে লেখা এই দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য খুঁজে বের করি। সেখানে বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান দেওয়া রয়েছে। যেমন, কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছে, কত ভোটে জিতেছে বা হেরেছে, মহিলা প্রার্থীদের ফল কেমন বা বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট ফলাফলের চিত্র। কিন্তু কোথাও ধর্মভিত্তিক ভোটের ফলাফল দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তথ্য অনুযায়ী, তৃনমূল ২১৩টি আসনে জিতেছে এবং মোট ভোটের ৪৭.৯৪ শতাংশ পেয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি ৩৮.২৬ শতাংশ ভোট নিয়ে ৭৭টি আসনে জয়লাভ করেছে।
হিন্দু ভোট বা মুসলিম ভোট নিয়ে কোনও পরসংখ্যান বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।

দাবি ২- এটি উত্তরপ্রদেশে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির জন সমাবেশের ছবি
অনুসন্ধান শুরু করার আগে বলা রাখা ভালো, আগামি বছর ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন হবে। স্বাভাবিক ভাবেই সমস্ত রাজনৈতিক দলই মসনদ দখল করতে এখন থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। বিজেপি, এসপি, বিএসপি ছাড়াও এবারের নির্বাচনে লড়বে ওয়াইসির মিম।
তথ্য যাচাইয়ের শুরুতেই পোস্টের ছবিটিকে ক্রপ করে গুগল, বিং সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, ২০১৯ সালের একটি ইউটিউব ভিডিওতে এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ঈদে মিলাদুন্নবী, চিটাগাং, বাংলাদেশ। মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী, ঈদে মিলাদুন্নবী হল সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদের জন্মদিন। ইসলামে বিশ্বাসী অনেক মানুষই এই দিনটিকে উৎযাপন করেন। অর্থাৎ, এটি ২০১৯ সালের বাংলাদেশের ঈদে মিলাদুন্নবী উৎযাপনের ছবি।

নিচে ভাইরাল ছবি এবং ভিডিও স্ক্রিনশটের তুলনামূলক ছবি দেওয়া হল।

২০১৯ সালে এই ছবিকে ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ দাবি করে ভাইরাল করা হয়েছিল। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো হিন্দি তথ্য যাচাই করে প্রমাণ করে ওই দাবি ভুয়ো এবং এটি বাংলাদেশের ঘটনা।
২০১৯ সালের তথ্য যাচাই পড়ে দেখতে পাই, ২০১৯ সালে আহমেদ কাদরি নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই ছবি পোস্ট করা হয়েছিল।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো আহমেদ কাদরির সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, এটি বাংলাদেশের চিটাগাং-এ আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া-সুন্নিয়া-ট্রাস্ট দ্বারা আয়োজিত ঈদে মিলাদুন্নবী নবী উৎযাপনের ঘটনা।
তিনি আমাদের এই ধর্মীয় সন্মেলনের আরও বেশ কিছু ছবি পাঠান।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। নির্বাচন কমিশন ধর্মভিত্তিক ভোট শতাংশ প্রকাশ করে না এবং ভাইরাল ছবিটি আসলে বাংলাদেশের, উত্তরপ্রদেশের নয়।

Title:না, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ধর্মভিত্তিক ভোট শতাংশ প্রকাশ করা হয়নি
Fact Check By: Nasim AResult: False